কলকাতা: আজ থেকে শুরু দেবীপক্ষ। অন্যান্য বছর এই সময় মুম্বইয়ের বাড়িতে সাজো সাজো রব থাকে। মণ্ডপ বাঁধা থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রতিমার সাজ, অতিথি-অভ্যাগতদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা, ফুরসতই পাওয়া যায় না সারাদিন।


ছবিটা বদলে গিয়েছে এবার। আড়ম্বরহীন হয়ে পড়ে রয়েছে মুম্বইয়ের দুর্গাপুজোয় তারকাদের আড্ডার ঠিকানাগুলি। প্রতিবছর যেখানে পুজোর ঔজ্জ্বল্যকে বাড়িয়ে দেয় তারকা সমাগম, অতিমারী পরিস্থিতিতে আমূল ভোলবদল সেইসব নামিদামী বাড়ির পুজোর। বোধনে বাকি আর হাতে গোনা কয়েকটা দিন। এবার পুজোয় কেমন থাকবে মায়ানগরীর বাঙালি তারকাদের বাড়ির পুজো? খোঁজ নিল এবিপি আনন্দ।

'কলকাতায় দুর্গাপুজোর জন্যই সারা বছর অপেক্ষা করে সবাই। মুম্বইতে কিন্তু দুর্গাপুজোটাই সব না, অনেক অনুষ্ঠানের মধ্যে একটা,' মুম্বই থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে বলছিলেন বিখ্যাত গায়ক অভিজিৎ ভট্টাচার্য। তবু মন খারাপ পিছু ছাড়ছে না তাঁর। প্রতিবছর পুজোর চারটে দিন তাঁর বাড়িতে উপচে পড়ে টিনসেল টাউনের তারকারা। সঙ্গীত থেকে অভিনয় জগৎ, নামীদামী শিল্পীরা তাঁর বাড়িতেই খান অষ্টমীর ভোগ, মেতে ওঠেন দশমীর সিঁদুরখেলায়। কিন্তু করোনাকালে এবছর কড়া শাসন মুম্বইতে। ৫০ জনের বেশি জমায়েত নৈব নৈব চ। পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে তাই 'সিক্রেট ভেন্য়ু'-তে পুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অভিজিৎ। মুম্বই থেকে মোবাইল ফোনে বললেন, 'এবারের পুজোয় আমার ২ মাস ব্যাপি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ছিল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য ঠিক করা ছিল হলও। সমস্ত বাতিল করতে হল।' তবে কি এবার ছেদ পড়বে চিরাচরিত পুজোর রীতিতে? অভিজিৎ বলছেন, 'এবার আমরা ঠিক করেছি গোপনে একটা কমিউনিটি হলে পুজো করব। উপস্থিত থাকবেন কেবল পুজোর উদ্যোক্তা ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা। এবার তো কাউকে আমন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। মুম্বইয়ে খুব কড়াকড়ি। প্রত্যেকবার এত মানুষ আসেন। এবার সেসব কিছুই হবে না। আর অতিমারী পরিস্থিতির জন্য মন খারাপ তো রয়েছেই।'

আনন্দে কতটা ভাঁটা পড়তে পারে অতিথিহীন পুজোয়? অভিজিৎ বলছেন, 'এবার পুজোয় অন্যরকমভাবে মজা করব। প্রত্যেকবার আমি অতিথিদের সামলাতেই ব্যস্ত থাকি। কিন্তু এবার পুরোহিতের সঙ্গে আমি নিজেই পুজোয় বসব। বোধন থেকে বিসর্জন, এই প্রথম নিজের হাতে মায়ের পুজো করব। সেইটা নিয়ে এবার ভীষণ রোমাঞ্চিত। সেলফি তোলার আবদার থাকবে না। নিষ্ঠাভরে পুজোর সমস্ত নিয়মকানুন পালন করব।' এবার ২৫ বছরে পা দিচ্ছে তাঁর পুজো। প্রবাসী গায়কের বাড়িতে কিন্তু পূজিত হবেন খাস কলকাতার প্রতিমা। অভিজিৎ বলছেন, 'কলকাতা থেকে সুজিত বসু আমার জন্য প্রতিমা পাঠাচ্ছেন। আর পুজোয় আমার নতুন গানও শুনবেন কলকাতাবাসী।' দুটো লাইনেই অভিজিৎ বুঝিয়ে দিলেন, মুম্বইতে বসেও কলকাতার সঙ্গে নিবিড় যোগ তাঁর।

মুম্বইয়ের দুর্গাপুজোয় তারকাদের একটি প্রিয় গন্তব্য অভিজিতের বাড়ি হলে, অপরটি অবশ্যই এক প্রবীণ নায়কের বাড়ি। বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজো। অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত বর্ষীয়ান অভিনেতা ও তাঁর তারকা পুত্র প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, লালপেড়ে শাড়িতে পুজোর কাজ সামলাচ্ছেন পুত্রবধূ অভিনেত্রী অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় - চেনা এই ছবিতে এবার বিঘ্ন ঘটাবে কোভিড পরিস্থিতি। চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে এবার বন্ধ থাকবে প্রতিমা পুজো। তাহলে এবার দুর্গাপুজোর পরিকল্পনা কী? অর্পিতা বলছিলেন, 'দুর্গাপুজোয় ৫ দিনই মুম্বইয়ের বাড়িতে থেকে আনন্দ করা হয়ে ওঠে না সবসময়। আমায় বিভিন্ন কারণে এক শহর থেকে অন্য শহরে ঘুরে বেড়াতে হয়। তবে চেষ্টা করি অন্তত অষ্টমীর দিনটা মুম্বইতে কাটাতে। কখনও কখনও ২টো দিনও সময় বার করে নিতে পারি। এতদিন এরকমই চলে আসছে। তবে এবারের পুজোটা একেবারেই আলাদা। আমার জন্য শুধু নয়, সবার জন্যই। কারণটা আমরা সবাই জানি। আমাদের আনন্দ করতে হবে কিন্তু নিজের দায়িত্ব ভুলে নয়। এবার পুজোয় প্রথমবার আমায় মুম্বই যাওয়া বাতিল করতে হয়েছে।'

তাহলে পুজোর আয়োজন? অর্পিতা বললেন, 'প্রতিবার যেমন আড়ম্বর করে পুজো হতো, তা হচ্ছে না এবছর। খুব সীমিত সংখ্যক লোক নিয়ে কেবল ঘটপুজো হবে। পুজোটা যাতে বন্ধ না হয় তাই এই ব্যবস্থা। আমার মনে হয়, এ বছরের জন্য এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত।’ অতিথি সমাগম বন্ধ রাখার পিছনে মাথায় রাখা হয়েছে বিশ্বজিতের বয়সকেও। কারণ, চিকিৎসকেরা বারবার সতর্ক করছেন যে, করোনা আক্রান্ত হলে বয়স্কদের ঝুঁকি বেশি।

চারিদিকে সতর্কতা, আতঙ্ক। প্রত্যেকদিন করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার হিসেব রাখা চলছে। এবার দুর্গার আরাধনায় তাই ভক্ত সমাগম নয়, কেবল থাকুক ভক্তি, বলছেন মুম্বইয়ের বাঙালি তারকারা।