মুম্বই : ১৯৮৭ সালে মাত্র ৫৮ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার পর কেটে গেছে ৩৪টা বছর। কিন্তু, এখনও তিনি 'জীবিত', ভক্তদের মনে। গায়ক-অভিনেতা কিশোর কুমার তো সবার পরিচিত। এর পাশাপাশি সংগীতকার, নির্মাতা, পরিচালক, লেখক কি না ছিলেন তিনি ! এই কিংবদন্তির কালজয়ী একের পর এক গানের সঙ্গে রয়েছে জীবনভরের এমন অনেক কাহিনি যা সকলকে অভিভূত করবে।
শোনা যায়, সত্যজিৎ রায়ের 'চারুলতা' ছবিতে একটি গানের রেকর্ড করে কোনও পারিশ্রমিক নেননি কিশোর কুমার। সত্যজিৎ রায় যখন তাঁকে ফি-এর কথা জানতে চান, তখন তিনি শুধু তাঁকে(সত্যজিৎ রায়কে) প্রণাম করেছিলেন। শুধু তাই নয়, 'পথের পাঁচালি' ছবিটি তৈরির সময় খুব আর্থিক সঙ্কটে ছিলেন সত্যজিৎ রায়। এতটাই যে এই প্রোজেক্ট থামিয়ে দেওয়ার কথাও ভাবেন। সেই সময় এগিয়ে আসেন কিশোর কুমার। ৫ হাজার টাকা দিয়ে সাহায্য করেন।
নিজের কেরিয়ারের অধিকাংশই রাজেশ খান্না, জিতেন্দ্র, দেব আনন্দ ও অমিত বচ্চনের ছবির জন্য গান গেয়েছেন এই কিংবদন্তি গায়ক। 'খাইকে পান বাণারসওয়ালা', কালজয়ী এই গানের কথা তো সবার জানা। এই গানটির অনুভূতি আনতে বারাণসী পান চিবাতে চিবাতে সমানে মেঝেতে থুতু ফেলে গেছিলেন তিনি। রাজেশ খান্নার জন্য এত সংখ্যক গান গেয়েছেন যে অভিনেতা বলতেন, "আমরা এক গলায় দুই ব্যক্তি।"
কিশোরের দাদা অশোক কুমার একজন কিংবদন্তি অভিনেতা ছিলেন। কিশোরের শৈশব অবস্থাতেই বম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে বড় স্টারে পরিণত হয়ে ওঠেন অশোক। ১৯৪৬ সালে 'শিকারি' ছবিতে অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ কিশোরের। গানে অভিষেক হয় ১৯৪৮-এর 'জিদ্দি' ছবি দিয়ে। শোনা যায়, অশোক কুমার চাইতেন কিশোর তাঁর মতোই বড় অভিনেতার হয়ে উঠুক। কিন্তু, কিশোরের তো মন পড়ে থাকত গানে। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৫ সালের মধ্যে ২২টি ছবিতে অভিনয় করেন কিশোর। যার মধ্যে অবশ্য ১৬টি ছিল ফ্লপ। পরিচালক ও নির্মাতারাও হতাশ হয়ে পড়েন। সেই সময় আর ডি বর্মণ তাঁকে স্টাইল পাল্টে ফেলার পরামর্শ দেন। আমেরিকার গায়ক জিমি রজার্স ও টেক্স মর্টনের স্টাইল রপ্ত করেন কিশোর। কিন্তু, কিশোরের মন পড়ে থাকত গানে। গানকে কিশোর এতটাই ভালোবাসতেন যে কলেজের কড়া শিক্ষকরাও তাঁকে অনুৎসাহিত করতেন না। শোনা যায়, ক্লাসরুমে তিনি বেঞ্চে তবলা বাজাতেন। একবার এক শিক্ষক বিরক্ত হয়ে তাঁকে তা থামাতে বলেন। সেই সময় কিশোর তাঁকে জানিয়েছিলেন, গান গেয়েই তিনি জীবন নির্বাহ করতে চান।