মুম্বই: একটি বিয়েবাড়ির ভাইরাল ভিডিও। আর সেই নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ! ত্রিপুরার পশ্চিম জেলার জেলাশাসক শৈলেশ কুমার যাদবের বিয়ে বাড়িতে ঢুকে লাঠিচার্জের ভিডিও নিয়ে ইতিমধ্যে কম জলঘোলা হয়নি। বরখাস্ত হতে হয়েছে তাঁকে। এমনকি ক্ষমাও চেয়েছেন ওই জলাশাসক। এবার সেই প্রসঙ্গে সরব হলেন সঙ্গীতশিল্পী সোনু নিগম। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও পোস্ট করে নিজের মতামত জানালেন তিনি।


সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করে সোনু বলছেন, 'আমি সাধারণত বিভিন্ন ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ভিডিও করি। কিন্তু আজ আমি একটু অন্য কথা বলব। আমি আমি ত্রিপুরার ডিএম সাবের একটা ভিডিও দেখলাম। উনি একটি বিয়েবাড়িতে ঢুকে আইন মানার কথা বলছেন। আমি আইনি বিষয়গুলির দিকে যাচ্ছি না। সেই নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কিন্তু ডিএম সাব, এটা কথা বলার কেমন ধরণ! আমরা কোন দেশে আছি! কোনও মহিলা যখন কথা বলতে যাচ্ছে, তখন তাঁর কথা না শুনেই আপনি বলছেন অ্যারেস্ট হার, অ্যারেস্ট হিম! নিজের ক্ষমতার ওপর এত অহঙ্কার! প্রধানমন্ত্রী মোদিরও তো এত অহঙ্কার নেই। উনিও মানুষের সঙ্গে ভদ্রভাবে কথা বলেন। আপনি কোনও রাজা নয় যে এইভাবে কথা বলবেন। আর ধনী থেকে গরীর, এখন ভারতে সবাই কষ্টে আছেন। কেউ যদি ভুল করে থাকে তাঁকে বোঝান। এটা তো সবার পাশে থাকার সময়। আর আপনি বরের কলার ধরে তাঁকে ধাক্কা দিচ্ছেন! আপনি যে চেয়ারে বসে আছেন সেটা আপনার যোগ্য নয়। আপনি ভুল করেছেন আপনার শাস্তি হবে। আমি আপনার খারাপ চাইব না। কেবল বলব, বিয়ে ভারতে একটা শুভ অনুষ্ঠান। আপনি বিয়েতে এমন স্মৃতি তৈরি করলেন যে ওই পরিবারের সবাই বিয়েবাড়িটা ভুলে যাতে চাইবে। আপনি একজন শিক্ষিত গুণ্ডার মত ব্যবহার করেছেন। যেন বিয়েবাড়িতে ডাকাত পড়েছে। এই ঘটনা যদি আপনার নিজের ছেলের সঙ্গে হত? মানুষ খুব কষ্টে আছে। নিজের ক্ষমতা দিয়ে মানুষের সাহায্য করুন, তাদের মুখে হাসি ফোটান।'



 


যে ভিডিও নিয়ে সরব সঙ্গীতশিল্পী,  ঠিক কি আছে সেই ভিডিওতে? কী হয়েছিল ত্রিপুরার সেই বিয়েবাড়িতে?


ত্রিপুরার পশ্চিম জেলার জেলাশাসক শৈলেশ কুমার যাদব। সোমবার শহরের দুটি বিয়েবাড়িতে পুলিশ-সহ উপস্থিত হন তিনি। মাণিক্য কোট এবং গোলাপ বাগানে অভিযান চালায় পুলিশ। তার নেতৃত্বে ছিলেন ওই জেলাশাসক। ঘটনার ভিডিও দ্রুত ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যায় বিয়ে বাড়িতে ঢুকে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। কেন নৈশ কার্ফু না মেনে বিয়েবাড়ি আয়োজন করা হয়েছে? রীতিমতো ধমকান ওই জেলাশাসক। বিয়েবাড়িরই এক সদস্য বোঝানোর চেষ্টা করেন অনুমতিপত্র রয়েছে তাঁদের কাছে। এরপর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-সহ পুরোহিতকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন ওই জেলাশাসক। শুধু তাই নয়, পশ্চিম আগরতলা থানার ওসি-কে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন জেলাশাসক। 


ভিডিওতে দেখা যায়, বিয়েবাড়িতে উপস্থিত এক মহিলা জেলাশাসককে অনুমতিপত্র দেখাতে এলে তিনি ওই কাগজ ছিড়ে ফেলেন। ওই মহিলা বলেন, স্যর এই অনুমতি পত্রটা দেখুন। সঙ্গে সঙ্গে মহিলার হাত থেকে কাগজ নিয়ে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলেন তিনি। জেলাশাসক বলেন, অনুমতিটা বিয়ের জন্য, কিন্তু রাত ১০টার পর বিয়ের অনুষ্ঠান করার জন্য নয়। অন্য আরেকটি বিয়েবাড়িতে গিয়েও আমন্ত্রিত-সহ বাড়ির লোকজনকে বের করে দেন ওই জেলাশাসক। বিয়েবাড়ির আলো বন্ধ করে দিতেও দেখা যায়। হঠাৎ কেন বিয়েবাড়িতে পুলিশ, তা দেখে হকচকিয়ে যান অনেকেই। শুধু তাই নয়, বিয়েবাড়িতে বরকে ঘাড় ধাক্কাও দেন শৈলেশ কুমার যাদব।


 


আগরতলার জেলাশাসকের অভিযান ঘিরে শুরু হয় বিতর্ক। এত বাড়াবাড়ি কেন? প্রশ্ন তুলে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের। সমালোচনার মুখে শেষপর্যন্ত ক্ষমা চাইলেন জেলাশাসক শৈলেশ কুমার যাদব।