কলকাতা: সঙ্গীত জগতের অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব সলিল চৌধুরীর গানের ধারাকে এতদিন বয়ে নিয়ে গিয়েছেন তাঁরই স্ত্রী সবিতা চৌধুরী। গতকালই প্রয়াত হয়েছেন তিনি। ‘হলুদ গাঁদার ফুল’, ‘গুন গুন গুন গুন সারাদিন’-এর মতো গানে সলিল-সঙ্গীতের উজান বেয়ে অনায়াস পাড়ি অবশেষে থেমে গেল। কিন্তু বাঙালি শ্রোতা কতটা মনে রেখেছেন মর্জিনা আবদুল্লা সিনেমায় অনুপ জলোটার সঙ্গে ডুয়েটে মার ঝাড়ু মার গানের শিল্পীকে!


এ প্রজন্মের গায়ক-গায়িকাদের কাছে সবিতা চৌধুরী ছিলেন এক স্বতন্ত্র শিল্পী। মনোময় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘বউ কথা কও বলে পাখি আর ডাকিস না’-র মতো প্রতিবাদী গান গাইবার পাশাপাশি সলিল চৌধুরীর কঠিন কম্পোজিশন কত সহজেই না গাইতেন সবিতাদি।

লোপামুদ্রা বলছেন, যে ধারার গান কেউ গাইতেন না তা সাবলীলভাবে গাইতেন সবিতাদি।

রুবি হাসপাতালের অদূরে হ্যাপি লুক হাউজিং সোশ্যাইটিতে ৭২-র বছরের প্রয়াত শিল্পীর প্রতিবেশী সৈকত মিত্র। তাঁর মনে ভেসে উঠছে বাবা শ্যামল মিত্রর সঙ্গে সবিতা চৌধুরীর লাল পাথর সিনেমার ডেকোনা গো আর-এর মজাদার রেকর্ডিংয়ের ঘটনা। তাছাড়া দেখা তো হতোই মাঝেমধ্যেই। মনে ভিড় করছে অসংখ্য স্মৃতি। তাঁর এখনও অবাক লাগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সবিতা চৌধুরী কীভাবে ‘ঝিলমিল বনে, ঝাউয়ের ঝিকিমিকি’ একদমে গাইতেন! সুরে এত ওঠানামা থাকার পর একেবার স্বচ্ছন্দে গেয়ে যেতেন তিনি। ঝিলমিল থেকে মরি হায় গো হায়-এর মতো সলিলবাবুর ভিন্নধর্মী কম্পোজিশনকে নিজস্ব গায়কী দিয়ে জীবন্ত করে তোলার মুন্সিয়ানা ছিল সবিতা চৌধুরীর। এই গায়কী একেবারেই স্বতন্ত্র।একটা লাইন শুনলেই বোঝা যেত গানটা গাইছেন সবিতাদি।

শুভমিতার কথায় শক্তিশালী গায়িকা সবিতা চৌধুরী। আমার প্রিয় শিল্পী।

নচিকেতা বললেন, সলিল চৌধুরির চলন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া ছিলেন প্রয়াত শিল্পী। সলিলবাবুর সমস্ত গানই তাঁর জানা ছিল, সেগুলি গাইতেও পারতেন। গানের প্রতিটি ঘটনা নখদর্পণে ছিল তাঁর। সে সব জানানোর মতো আর কেউ থাকলেন না। ‘ঘুম আয়, আয় ঘুম’ গানটি এককথায় অনবদ্য। সবিতা চৌধুরীর মতো শিল্পীর সঠিক মূল্যায়ণ হয়নি বলেই আক্ষেপ নচিকেতার।

একই আফসোস সুরজিত্ চট্টোপাধ্যায়েরও। তিনিও বলেছেন, একেবারেই মূল্যায়ণ হয়নি সুরসলিলে নিমগ্ন শিল্পীর।