কলকাতা: কাজের সূত্রে আপাতত মুম্বইতে তিনি। মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে মাঝে মধ্যে হিন্দিতে গাড়িচালককে নির্দেশ দিচ্ছিলেন ঠিক কোন দিকে যেতে হবে। মায়ানগরীর ব্যস্ত রাস্তায় যেতে যেতে দক্ষিণ আফ্রিকা আর কিনিয়ায় শ্যুটিংয়ের গল্প শোনাচ্ছিলেন তিনি। ফ্লোরে সাপ, চিতা, সিংহ.. ক্যামেরার সামনে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee) আর হাতে ক্যামেরা ধরে সৃজিত মুখোপাধ্যায় (Srijit Mukherji)।


দীর্ঘ অপেক্ষার পর আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি এসভিএফের প্রযোজনায় বড়পর্দায় মুক্তি পাচ্ছে 'কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন' (Kakababur Protyaborton)। নতুন ছবি নিয়ে কী প্রত্যাশা পরিচালকের? সৃজিত বলছেন, 'আমি খুব উৎসাহী, কিন্তু সত্যি বলতে গেলে পুজোটা একটু মিস করছি। কাকাবাবুর সঙ্গে পুজোর একটা যোগ রয়েছে। ছবিটা পুজো বা ক্রিসমাসে মুক্তি পেলে বাচ্চারা অনেক বেশি আসতে পারত। কাকাবাবু বাচ্চাদের ছবি, আর তাদেরও এখনও পর্যন্ত ভ্যাকসিন নেওয়া হয়নি। তার ওপর এখন মাত্র ৫০ শতাংশ দর্শক নিয়ে সিনেমাহল খুলছে। বাচ্চাদের নিয়ে পরিবার কতটা আসবে সেই প্রশ্নচিহ্ন তো রয়েছেই। থিয়েটারে মুক্তির দিক থেকে আরও একটু ভালো সময়ে ছবিটা মুক্তি পেলে ভালো লাগত। কিন্তু বাজেটের প্রায় পুরোটাই চলে আসছে ওটিটি আর স্যাটেলাইটের সঙ্গে বানিজ্যিক চুক্তি থেকে। তারাই বা আর কতদিন অপেক্ষা করবে। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে এই সিদ্ধান্তটাই সঠিক বলে মনে হয়েছে আমাদের।'


কাকাবাবু মানেই লম্বা আউটডোর শ্যুটিং আর রোমাঞ্চকর শ্যুটিং। একটু বিপজ্জনকও বটে। কিনিয়া আর দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? সৃজিত বলছেন, 'প্রচন্ড মজা করে শ্যুটিং করছি আমরা। প্রথমবার বাংলা ছবিতে এত আসল জীবজন্তু ব্যবহার করা হয়েছে। এর আগে কোনও ছবিতে এত জীবজন্তুর ব্যবহার দেখা যায়নি। বেশিরভাগ জায়গাতেই ভিএফএক্সের মাধ্যমে কাজটা করা হয়। কিছু কিছু জন্তু যেমন হায়না বা গণ্ডারকে সামলানোর মত পেশাদার লোকও ছিল না। সেখানে কার্যত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্যুটিং করতে হয়েছে।'


শ্যুটিং করতে গিয়ে ঝুঁকি নিতে হয়েছে, বিপদ এসেছে একাধিকবার। আফ্রিকার জঙ্গলের স্মৃতিতে ডুব দিয়ে সৃজিত বলে চললেন, 'একটা দৃশ্য ছিল যেখানে হাতি আর গণ্ডারের মধ্যে আটকে পড়েন কাকাবাবু। বইতেও এই দৃশ্যের উল্লেখ আছে। সেই শ্যুটিংটা করার সময় মেজাজ খারাপ ছিল হাতির। চার্জ করে, বুম্বাদার খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল। সাপের দৃশ্য শ্যুটিং করতে গিয়েও একটা একটা ঘটনা ঘটে। বুম্বাদা সাপ খুব একটা পছন্দ করেন না। দৃশ্যটি ছিল সন্তুর পা থেকে সাপটা হাতে ধরে ছাড়াতে হবে কাকাবাবুকে। বুম্বাদা কী করে সাপটা ধরবেন, সাপটার কেমন মেজাজ থাকবে সব মিলিয়ে ভীষণ রোমাঞ্চকর একটা দিন গিয়েছিল। একটা দৃশ্যে আবার বুম্বাদার খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিল চিতা। ওই দৃশ্যটা আমি নিজে ক্যামেরা হাতে নিয়ে শ্যুটিং করেছিলাম। সব মিলিয়ে একটা ভীষণ রোমাঞ্চকর কিন্তু পরিপূর্ণ শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা ছিল আমার জন্য।'


পরিচালক হিসেবে এত বন্য জন্তু নিয়ে শ্যুটিং করা ঝুঁকির ছিল? সৃজিত একটু হেসে বললেন, 'ছোটবেলা থেকে দুটো জিনিস আমার ভীষণ কাছের। একটা বন্যপ্রাণ আরেকটা ক্রিকেট। আমি সবসময়েই চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসি, সেইদিক থেকে এই ছবিটা আমার জন্য দারুণ একটা অভিজ্ঞতা।'


কেবল কাকাবাবু নয়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের একাধিক ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। অন্য সব ছবি আর 'কাকাবাবু' ফ্রাঞ্চাইজির মধ্যে পার্থক্য কোথায়? সৃজিত বললেন, 'কাকাবাবুর চরিত্রের জন্য বুম্বাদাকে আলাদা করে কিছু বোঝাতে হয় না। এর আগে একাধিক কাজ হয়ে যাওয়ার জন্য উনি এতটাই সাবলীল হয়ে গিয়েছেন যে ৫ মিনিটে চরিত্রে ঢুকে যেতে পারেন।'


অনলাইন ক্লাস আর চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে এখন যে সব খুদেরা, কাকাবাবু তাদের ছবি। 'কাকাবাবু' ছোটদের ছবি। একরত্তিদের জন্য কী বার্তা দেবেন পরিচালক? সৃজিত বলছেন, 'আমরা সবাই বাড়িতে বন্দি। স্কুল-কলেজ বন্ধ, বেড়াতে যাওয়ার তো প্রশ্নই নেই। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এই ছবিটা কিন্তু আফ্রিকা বেড়াতে যাওয়ার একটা বিশাল বড় সুযোগ। একা নয়, সঙ্গে কাকাবাবু, সন্তু আছে, আর আছে ভয়ঙ্কর অ্যাডভেঞ্চার। সবকিছু উপভোগ করতে 'কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন' দেখতে হবে বড়পর্দায়।