কলকাতা: একজন ভীষণ সাদামাটা গৃহবধূ থেকে গ্যাংস্টার হয়ে ওঠার সফরকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন। বাস্তব জীবনে বন্দুক হাতে ধরার অভিজ্ঞতা বলতে ছোটবেলায় কালীপুজোয় ক্যাপ ফাটানো। এই ছবির জন্য প্রথমবার বন্দুক চালানো শিখতে হল অভিনেত্রীকে। শুধু কী তাই? শাড়ি পরে ধুন্ধুমার অ্যাকশন দৃশ্যের শ্যুটিং করতে হয়েছে তাঁকে। সব মিলিয়ে 'শিবপুর' সফর বেশ মনে রাখার মতোই অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় (Swastika Mukherjee)-র কাছে। এবিপি লাইভের (ABP Live) -এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শ্যুটিং-কথা বললেন পর্দার মন্দিরা বিশ্বাস। 


প্রশ্ন: শিবপুরের চিত্রনাট্যকে বেছেছিলেন কেন?


স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়: প্রথমে আমার সঙ্গে পরিচালক অরিন্দম ভট্টাচার্য্য যোগাযোগ করেছিলেন। চিত্রনাট্য পড়ে ভীষণ ভাল লেগেছিল আমার, উত্তেজিতও। বাংলায় গ্যাংস্টার নিয়ে তেমন ছবি হয়নি। সেখানে একটা গ্যাংস্টারদের নিয়ে গল্প, মুখ্যচরিত্রে আবার একজন নারী.. সব মিলিয়ে দারুণ আকর্ষণীয় লেগেছিল। জানিয়েছিলাম, আমিই করতে চাই চরিত্রটা। 


প্রশ্ন: মন্দিরা বিশ্বাসকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে কী কী প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল?


স্বস্তিকা: মন্দিরার চরিত্রটা তো প্রথম থেকেই একজন গ্যাংস্টারের চরিত্র নয়। সে ছিল একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সাদামাটা গৃহবধূ, দিন কাটত হেঁশেলেই। সেখান থেকে তাঁর স্বামী মারা যাওয়া ও তারপরে জীবনে একটা আমূল পরিবর্তন আসা, গোটা সফরটাই পর্দায় তুলে ধরা হয়েছে। এই ছবির জন্য আমায় বন্দুক চালানো শিখতে হয়েছে। বাস্তবে কখনও তো বন্দুক হাতে ধরিনি। আমার দৌড় ছিল ছোটবেলায় কালীপুজোয় ক্যাপ ফাটানো পর্যন্ত। বন্দুক যা দেখেছি, সবই শ্যুটিংয়ে। এই ছবির জন্য নিজের হাতে বন্দুক চালাতে হল।


প্রশ্ন: 'শিবপুর'-এ সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কী ছিল আপনার কাছে?


স্বস্তিকা: শাড়ি পরে অ্যাকশন দৃশ্য শ্যুটিং করা। এমন অনেক দৃশ্য রয়েছে যেখানে বাড়ির ভিতর অ্যাকশন দৃশ্য দেখানো হয়েছে। আমরা সাধারণত পর্দায় মেয়েদের অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখি শার্ট-প্যান্টে। শাড়ি পরে সেই বিষয়গুলো নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জিং, তেমনই মাথায় রাখতে হত যাতে অশ্লীল না দেখায়। দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে অ্যাকশন করছি, আর শাড়ির আঁচল খসে পড়ল, তাহলে তো চলবে না।


প্রশ্ন: বড়পর্দায় থেকে ওটিটি, নারীকেন্দ্রিক ছবির প্রবণতা বাড়ছে। অভিনেত্রী স্বস্তিকার এই ধারা কেমন লাগে?


স্বস্তিকা: প্রায় ১০ বছর হল আমি নারীকেন্দ্রিক ছবিতে অভিনয় করছি। এখন ওটিটি আসার ফলে আরও সুযোগ বেড়েছে। দিন দিন এই পরিবর্তনটা বাড়ছে, অভিনেত্রীরাও সুযোগ পাচ্ছেন। অভিনেত্রী হিসেবে এই পরিবর্তনটা অবশ্যই ভাল লাগে। আমি বেশ অনেকগুলো নারীকেন্দ্রিক ছবিতেই অভিনয় করলাম, দর্শক ভালবাসলেন। টলিউডে এই ধারা অবশ্য অনেকদিন শুরু হয়েছে, বলিউডে একটু পরেই নারীকেন্দ্রিক ছবি শুরু হল। আমার মনে হয়, দর্শকের দেখার চোখ এখন বদলেছে, তাঁরা নারীকেন্দ্রিক ছবি দেখা জন্য প্রস্তুত।


প্রশ্ন: নারীকেন্দ্রিক ছবি বাড়ার পাশাপাশি অভিনেতা আর অভিনেত্রীর মধ্যে পারিশ্রমিকের পার্থক্যটা কি কমেছে?


স্বস্তিকা: একটা সময় পারিশ্রমিকের কথা উঠলে অস্বস্তিতে পড়তে হয়। একটা সময় গিয়েছে যখন ছবিতে কাজ করে নায়কের পারিশ্রমিকের অর্ধেকের থেকেই কম পেয়েছি। তবে নিজের ক্ষেত্রে বলতে পারি, এখন সেই তফাতটা অনেকটাই কমে এসেছে। এখন বলতে পারি, আমার ছবিতে আমিই হিরো।


প্রশ্ন: 'আমার ছবিতে আমিই হিরো' কথাটার পিছনে কতটা লড়াই রয়েছে? 


স্বস্তিকা: (একটু হেসে), একেবারে চোখ কান বুজে লড়াই। বার বার খেয়াল রাখতে হয়েছে, যেন চরিত্রের পুনরাবৃত্তি না হয়ে যায়। বছরে ৫টা ছবি করলে চরিত্রের পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। তাই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে যে কম কাজ করব কিন্তু এমন চরিত্র বাছব যা মানুষের মনে দাগ কাটতে পারে। খুব বেশি ছবি করলে হয়তো প্রতিপত্তি থাকে কিন্তু নিজেকে নতুন করে তুলে ধরার জায়গা থাকে না। এই কথাটা বলার জন্য অনেকটা সময় ব্যয় করতে হয়েছে। নিজের জায়গা করে নিতে সময় লেগেছে অনেকটা। আসলে সব কাজের জায়গাটাই তো পুরুষকেন্দ্রিক, সেখানে লড়াই করাটা সহজ ছিল না। তারপরে জিতে যাওয়াটাই ভাললাগা। 


প্রশ্ন: প্রযোজকের অভিযোগ ছিল, আপনি নাকি এই ছবির প্রচারের চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন। আপনি অভিযোগ তুলেছিলেন হেনস্থা ও হুমকির..


স্বস্তিকা: যেটা হয়েছে সেটা অন্যায়। আমার মনে হয়েছে প্রতিবাদ করা উচিত। বিষয়টা সামনে আনা উচিত, তাই জানিয়েছি। একমাস ধরে টানা আমায় হুমকি পাঠানো হচ্ছিল। ভেবেছিলাম হয়তো থেমে যাবে, ভুল বুঝতে পারবে। একটা Sorry -র প্রত্যাশাও আমি করিনি, কেবল ভেবেছিলাম পরিস্থিতি বদলাবে। আমার বিরুদ্ধে যে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠল, সেই চুক্তি আমার কাছে আজও এসে পৌঁছয়নি। কোনও মার্কেটিং প্ল্যান পাইনি, প্রোমোশনাল অ্যাক্টিভিটির কথা পর্যন্ত হয়নি আমার সঙ্গে। এখন প্রচার করছি ছবির প্রতি আমার দায়বদ্ধতা থেকে, প্রযোজকের তরফ থেকে কোনও আবেদন আসেনি। আমার সঙ্গে যেটা হয়েছে, সেটাকে খারাপ বললেও কম বলা হয়। নিকৃষ্ট বলা চলে। কোনও কারণ ছাড়া শুধুমাত্র আমায় অসম্মান করার জন্য এই ঘটনাটা ঘটানো হল। আমার সঙ্গে যদি কেউ এমন ঘটনা ঘটানোর সাহস পায়, তাহলে নতুনরা কী ব্যবহার পায় এই ইন্ডাস্ট্রিতে! তারা তো ভয় পেয়ে যাবেই। আমার মনে হয়েছিল পরিস্থিতিটা সবার সামনে, প্রকাশ্যে আনা উচিত, তাই এনেছি। অন্যায় সয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী নই আমি।


 


আরও পড়ুন: Father's Day Exclusive: স্পিড ডায়ালে এখনও বাবার নম্বর রাখা, মাঝরাতে ভুল করে ফোন করে ফেলতাম: স্বস্তিকা