কলকাতা: বাবা-মা নেই... কথাটা যেন এখনও মন থেকে মেনে নিতে পারেন না তিনি! কিছুদিন আগে পর্যন্তও ফিরতে খুব রাত হলে ফোন করে ফেলতেন মা-বাবাকে। 'চাবি নিয়ে যেতে ভুলে গেছি, ওপর থেকে চাবিটা ফেলো তো...' ফোন করে ফেলেও কেটে দিতে হত... সম্বিত ফিরে পেয়ে ভুল বুঝতে পারতেন। মানুষগুলোই তো নেই.. কাকে ফোন করছেন তিনি! আজ ফাদার্স ডে (Father's Day)। বাবাদের দিন। একরাশ মনখারাপ ঘেঁটে, এবিপি লাইভকে (ABP Live)-কে বাবা-মায়ের সঙ্গে কাটানো সময়ের স্মৃতি শোনালেন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় (Swastika Mukherjee)। 


'ফাদার্স ডে'-র দিনটা আলাদা করে মনেই থাকে না অভিনেত্রীর। এমনকি বাবাকে (সন্তু মুখোপাধ্যায়) বললে, তিনিও নাকি রাগই করতেন... বলতেন, 'consumerism-এর যুগে এগুলো বেচছে আর তোরাও ফাঁদে পা দিচ্ছিস।' স্বস্তিকা বলছেন, 'সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় কখনও কথা বলতে বলতে মনে পড়ে আজ ফাদার্স ডে। একটা সময় বাবা-মায়ের জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকীটা মনে থাকত। এখন সেই তালিকায় মৃত্যুদিনটাও যোগ হয়েছে। কোনওদিন আলাদা করে নয়, রোজ মনে পড়ে বাবা-মাকে। 'রান্নার লোক এসেছে?', 'বাড়ি ফিরেছিস', 'প্লেনটা ঠিকঠাক ল্যান্ড করল তো', 'শরীর ঠিক আছে তো'... এই ফোনগুলো আর আসে না। আবেগের এই প্রশ্নগুলো, এই ফোনগুলো আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রোজ সকালে উঠেই কিছু না কিছু মনে পড়ে। কখনও মেনে নিই, কখনও আবার নাভিশ্বাস... মনে হয়, যাওয়ার এত তাড়া ছিল বাবা-মায়ের!'


টলিউডে দীর্ঘ কেরিয়ার, ছাপ ফেলার মত অভিনয়... এখন বলিউডেও নিজের সাক্ষর রেখেছেন স্বস্তিকা। 'পাতাললোক' থেকে শুরু করে 'কালা', 'দিল বেচারা'-র মতো সিরিজ ও ছবিতে প্রশংসিত হয়েছে তাঁর অভিনয়। আফশোসের সুরে স্বস্তিকা বলছেন, 'আমার আর বাবার যেহেতু পেশাটা এক... কাজ নিয়ে প্রচুর কথা হত, আলোচনা হত। আমার বার বার মুম্বই যাতায়াত নিয়ে খুব চিন্তা করতেন উনি। একটা সময় আমি মুম্বইতে টানা অডিশন দিচ্ছি, মনের মতো চরিত্র পাচ্ছি না... বাবা ভীষণ চিন্তা করতেন সেই সময়টা। এখন যখন কাজ পাচ্ছি, অন্যরকম চরিত্রের অফার আসছে, প্রশংসা পাচ্ছি... সেই সময়টাই আলোচনা করার জন্য বাবা নেই। শুধু একজন মেয়ে হিসেবে নয়, শিল্পী হিসেবেও এই আফশোসটা থেকে যাবে যে বাবার সঙ্গে এই কাজগুলো নিয়ে আলোচনা করা হল না। কঠিন সময়টা পাশে রইলেন, ভাল সময়টা পেলাম না।'


বাবা-মা নেই... এখনও মেনে নিতে সমান মনখারাপ লাগে স্বস্তিকার। সেই ছোঁয়া গলায় নিয়ে নায়িকা বললেন, 'মনে হয়, যত ভাল বা খারাপ কাজ করে নিই না কেন... বাবা-মা আর ফিরবেন না। ওদের নম্বরগুলো এখনও আমার ফোনে স্পিড ডায়ালে রাখা আছে। কাউকে ফোন করতে গেলেই ওঁদের নম্বরগুলো সামনে ভেসে আসে। শোক নিয়ে বাঁচাটাও তো একটা কাজ। এখনও পুরোপুরি সেটা কাটিয়ে উঠতে পারিনি, চেষ্টা করছি।'