কলকাতা: অনেকদিন আগে একটি ছবিতে কাজ করতে গিয়ে খোঁজ পেয়েছিলেন একটি ছেলের। সেই সূত্রই সন্ধান দিয়েছিল অদ্ভূত একটা সুরের জগতের। কলকাতার বুকে ট্যাংরার বস্তিতে ফেলে দেওয়া জিনিস নিয়ে বানানো হয় বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র। তারপর সেগুলোই হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার রসদ। নতুন ছবি 'ট্যাংরা ব্লু'জ'-এর ভাবনার বুনিয়াদ ছিল এই মানুষগুলোই। সুপ্রিয় সেনের নতুন ছবির নেপথ্য গল্প এবিপি লাইভকে শোনালেন প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার ও কেন্দ্রীয় চরিত্র পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।


অভিনয়ের পাশাপাশি গান করতে ভালোবাসেন পরমব্রত। বাজাতে পারেন বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রও। সেইজন্যই কি এমন একটা ছন্দের ছবি বাছলেন? পরমব্রত বলছেন, 'যে কোনও জিনিসের সঙ্গে মিউজিক যুক্ত থাকলে আমার একটু বেশিই আগ্রহ থাকে সেটা নিয়ে। কিন্তু সঞ্জয় মন্ডল অ্যান্ড গ্রুপের কথা আমি যখন জানতে পারি, আমায় আকর্ষণ করেছিল ওদের বিশেষত্ব। কিছু মানুষ কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস দিয়ে বাদ্যযন্ত্র বানিয়ে পারিপার্শ্বিক সমস্ত প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়ার চেষ্টা করছে। এটা আমায় ভীষণ উৎসাহ দিয়েছিল।' শুধু অভিনয় নয়, এই ছবির চিত্রনাট্য ও প্রযোজনার সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন পরমব্রত।


এই ছবি শুরু করার একটা নেপথ্যে একটা গল্প রয়েছে...'এই গল্পটার শুরু ২০১৫ সাল থেকে।' বললেন পরমব্রত। তারপর যোগ করলেন, 'বহু বছর আগে আমি 'বাবার নাম গান্ধিজি' বলে একটা ছবিতে অভিনয় করেছিলাম। সেখানে আমার সঙ্গে একটা বাচ্চা অভিনয় করত। কৌশিক। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ও সঞ্জয় মন্ডল অ্যান্ড গ্রুপে বাজায়। খোঁজ পেয়ে আমি ওদের সঙ্গে দেখা করতে যাই। সেখানে গিয়ে, ওদের গল্প শুনে আমার ভীষণ ভালো লাগে। ট্যাংরার মত একটা জায়গায় কী করে ওরা শুধু মিউজিককে কেন্দ্র করে পারিপার্শ্বিক সব খারাপ জিনিসের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছে, এটা আমায় ভীষণ আকর্ষণ করে। সঞ্জয় মণ্ডলের চেষ্টা, সফলতাটাও আমায় টানে। মনে হয়, এটা নিয়ে একটা কাজ হওয়া উচিত। জানতে পারি ইতিমধ্যেই সুপ্রিয় সেন এই বিষয়ের ওপর একটা তথ্যচিত্র বানাচ্ছেন। সুপ্রিয়দাকে আমি অনেকদিন থেকে চিনি। ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলি। উনি বলেন, এই বিষয়টা নিয়ে আমরা একসঙ্গে কী কাজ করতে পারি? রাজি হয়ে যাই। এইভাবেই রোড শো তৈরি হয়েছিল। এরপর একসঙ্গে বহু কাজ করলেও, ট্যাংরা ব্লু'জ এর গল্পটা নিয়ে কাজ করা হচ্ছিল না। শেষে ২০২০ সালে এসে এসভিএফের সঙ্গে কাজটা করার পরিকল্পনা হয়।'


র‌্যাপ, বস্তি, গান, সুর... 'ট্যাংরা ব্লু'জ'-এ কি 'গালি বয়' এর ছায়া? পরমব্রত বলছেন, 'এই ছবির প্রথম খসড়াটা লেখা হয়েছিল ২০১৫ সালে। আমি জানি না জোয়া আখতার গালি বয় বানানর কথা কবে ভেবেছিলেন। তবে আমার মনে হয় না এতদিন আগে গালি বয় ভাবা হয়েছিল। আর এই ছবিতে শুধু র‌্যাপ নেই। একদল মানুষের জীবনযুদ্ধের গল্প আছে। আর সেই গল্পটা মিউজিককে ঘিরে। আর আছে পুরনো, ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে বাদ্যযন্ত্র বাজানোর পদ্ধতি। ঘটনাচক্রে গালি বয়ের পর এই ছবিটা মুক্তি পাচ্ছে। তাই কেউ যদি মনে করেন ট্যাংরা ব্লুজ গালি বয় থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বানানো, সেটা আমি আটকাতে পারব না।' 


পর্দায় নতুন জুটি। মধুমিতা আর পরমব্রত। নতুন নায়িকার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন? ছবির নায়ক হেসে বললেন, 'জুটি ঠিক বলতে পারব না, কিন্তু একসঙ্গে অনেক সিন আছে তো বটেই। কাজ করে খুব ভালো লেগেছে। মধুমিতা খুব অল্পবয়সী। ওর ভাবনার একটা নিজস্বতা আছে। প্রচুর এনার্জি ওর। কাজ করতে চায়, শিখতে চায়। আর ও ভীষণ প্রতিভাবান একজন অভিনেত্রী। যদি ও সঠিকভাবে কাজ করে যায়, ইন্ডাস্ট্রি ওকে মনে রাখবে।'



'ট্যাংরা ব্লুজ'-এর কোন মুহূর্ত সবচেয়ে বেশি মনে থাকবে? 'চারিদিকে এত মজা দেখি, ছবির সেটের মজাগুলো আর মনে থাকে না। তবে এই ছবিটা করার সময়ই ঠিক করেছিলাম, ব্যান্ডের সঙ্গে বাজাব। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েছি কাজ করতে গিয়ে। সেই অভিজ্ঞতাটা মনে থাকবে চিরকাল।' উত্তর পরমব্রতর।