কলকাতা: 'সিনামেটিক সেন্স' এবং 'সায়েন্স' (Cinematic Sence and Science) এই দুটি বোধহয় ছবি তৈরির ক্ষেত্রে একের অপরের পরিপূরক। দেশের মাটিতে অনেকেই বিজ্ঞান চর্চার পর ছবির পরিচালনায় এসেছেন। ৮০-র দশকের মধ্যে যেমন অন্যতম বাঙালি পরিচালক রয়েছেন ঋষিকেষ মুখোপাধ্যায় , তিনি ছিলেন রসায়নে স্নাতক। তবে ২০০০ সালের মধ্য়ে যেসকল বাঙালি পরিচালক বিজ্ঞানের শিখর ছুঁয়ে ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেছেন, তারমধ্যে অন্যতম 'চট্টগ্রাম' ছবির পরিচালক বেদব্রত পাইন। যিনি নাসার প্রাক্তন সিনিয়র সায়েন্টিস্ট। বাংলা ছবির ক্ষেত্রে, ৮০ এর দশকের আরও পিছনে ফেরা যায়, বাঙালি পরিচালকেরদের মধ্যে দুইজন রয়েছেন, যারা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। তারপর বাংলা ছবির পরিচালনায় আসা। এদের মধ্যে একজন মৃণাল সেন। অপরজন তপন সিংহ। তবে আজ বাংলার কিংবদন্তি পরিচালক তপন সিংহের জন্মদিন (Tapan Sinha Birthday)। চলুন ফেরা যাক, তাঁর ফ্রেমে-ফ্রিকুয়েন্সিতে।
ফ্রেমে-বিজ্ঞানে
এমনটা কোথাও লেখা নেই যে বিজ্ঞান নিয়ে পড়লে, ভাল ছবি তৈরি করা যায়। তবে এটা হক কথা, বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার পর যারা ছবি পরিচালনায় নেমেছেন, তাঁদের জন্য এটা উপরি পাওনা। আলো আর শব্দ যেখানে সবচেয়ে বড় কথা বলে, সেখানে প্রতিটা ভাজেই রয়েছে বিজ্ঞান।একথাও ঠিক, কিছু না পড়ে এসেও, সিনেমার প্রেমে পড়ে অনেকদূর গিয়েছেন, এমন উদাহরণ দেশের বুকেই রয়েছে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম অবশ্যই পরিচালক ফারহান আখতার। যিনি গ্র্যাজুয়েশনটাও শেষ করতে পারেননি। তবে তার থেকেই গোটা দেশ উপহার পেয়েছে ২০০০ হাজার সালের গোড়ায়, 'দিল চাহাতা হ্যায়'-র মতো ছবি। কথা হচ্ছে, বিষয় যা কিছুই হোক, বিজ্ঞান চেতনা এবং বোধ এই দুই দৃঢ়তা আনে ছবি তৈরিতে। তবে কোনও পড়াশোনাই যে বৃথা যায় না, তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ তপন সিনহার কর্মজীবন এবং তাঁর সৃষ্টি।
অটোগ্রাফ
সাল ১৯৪৬। স্বাধীন ভারত দেখার অপেক্ষায় প্রহর গুণছে সবাই। সেই বছরই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর করার পর নিউ থিয়েটার্স স্টুডিওতে সহকারী শব্দগ্রহণকারী হিসেবে যোগ দেন তপন সিংহ। সেই শুরু। তারপর লম্বা সফর। জীবনকালে একের পর এক মনে দাগ কেটে যাওয়া ছবি তিনি তৈরি করে গিয়েছেন। হুইলচেয়ার থেকে শুরু করে বাঞ্ছারামের বাগান, সবুজ দ্বীপের রাজা, গল্প হলেও সত্যি, ঝিন্দের বন্দী, কাবুলিওয়ালা। তবে তাঁর সৃষ্টিগুলির মধ্যে বিজ্ঞান চেতনা ছুঁয়ে যায় অবশ্যই 'এক ডক্টর কি মউত।' ১৯৯১ সালে ডক্টর সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের (যিনি ভারতের প্রথম টেস্টটিউব বেবির জন্মদাতা) জীবন ও কর্মের উপর ভিত্তি করে লেখা, রমাপদ চৌধুরীর উপন্যাস অভিমন্যু নিয়ে ছবি তৈরি করেন তপন সিনহা।
আরও পড়ুন,তাঁর 'মানস পুত্র' আছে মহানগরের অলিগলিতে, সত্যজিৎ-র ফ্রেমে আজও 'অপরাজিত' বিভূতিভূষণ
ঋণ: তপন সিনহা বায়োগ্রাফি-ডকু, সরকারি ওয়েবসাইট