কলকাতা: আজ ছিল করিশ্মা কপূরের (Karishma Kapoor) প্রাক্তন স্বামী সঞ্জয় কপূরের (Sunjay Kapur)-এর স্মরণসভা। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে পোলো খেলার সময় মৃত্যু হয়েছে ব্যবসায়ী সঞ্জয় কপূরের। আর তাঁর স্মরণসভায় হাজির ছিলেন করিশ্মা কপূর, করিনা কপূর (Kareena Kapoor) ও সেফ আলি খান (Saif Ali Khan)। এর আগেও করিশ্মাকে দেখা গিয়েছিল সঞ্জয়ের শেষকৃত্যে। সাদা পোশাকে এসেছিলেন নায়িকা। তবে এবার, করিশ্মার প্রাক্তন স্বামীর শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকা নিয়ে মুখ খুললেন তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin)।

তসলিমার কথায়, 'করিশ্মা কাপূর কেঁদে বুক ভাসালেন সঞ্জয় কাপুর মারা যাওয়ার পর। সঞ্জয় কাপুরের অন্তেষ্টিক্রিয়ায় সাদা পোশাক পরে গেলেন, সেখানেও কেঁদে বুক ভাসালেন। আগ বাড়িয়ে সৎকারের সবই করলেন তিনি, আর কেঁদে বুক ভাসালেন। কার জন্য কাঁদলেন, যে লোকটা তাঁকে পেটাতো, অপমান করতো, অ্যাবিউজ করতো! লোকটা বিবাহিত ছিল, তারপরও করিশ্মাকে বিয়ে করেছিল। প্রথম স্ত্রী নন্দিতাকে ডিভোর্স দিয়েছিল অবশ্য। কিন্তু নন্দিতার সঙ্গে সুযোগ পেলেই শুতে যেত। বিয়ের পর থেকেই করিশ্মাকে নির্যাতন করতো সঞ্জয়। তাঁকে পেটাতো, অপমান করত, অ্যাবিউজ করত! করিশ্মা জানিয়েছেন হানিমুনের দিন সঞ্জয় নিলামে উঠিয়েছিল করিশ্মাকে। তার এক বন্ধু কিনে নিয়েছিল করিশ্মাকে। এমন জঘন্য নারীবিদ্বেষী একটা লোক, যে নিজের স্ত্রীকেও ভোগের বস্ত্র ছাড়া আর কিছু মনে করে না, তার জন্য করিশ্মাকে কাঁদতে হয় কেন? করিশ্মার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরই সঞ্জয় আরেকটি বিয়ে করেছে। আরেক মহিলার স্বামীর জন্য করিশ্মাকে এত আকুল হয়ে কাঁদতে হয় কেন?'

তসলিমা আরও লিখেছেন, 'লোকে বলছে, আহা কারিশ্মা কত ভালো, কত ভালবাসতেন তাঁর স্বামীকে! স্বামী তাঁকে পেটাতো, অপমান করতো, অ্যাবিউজ করতো, নিলামে ওঠাতো, বেচে দিত, তারপরও করিশ্মা কত ভালবাসতেন তাকে! করিশ্মার বুক ভেসে যাওয়া কান্না দেখে সবাই মুগ্ধ। তাঁর ত্যাগ দেখে সবাই তৃপ্ত। কত লক্ষ্মী মেয়ে করিশ্মা! কত নরম মেয়ে করিশ্মা! কত দুর্বল মেয়ে করিশ্মা! কত পতিব্রতা মেয়ে করিশ্মা! কত প্রাক্তনপতিব্রতা মেয়ে করিশ্মা! কেউ কি করিশ্মাকে বলেছে, তোকে যে এত নির্যাতন করেছে, তার জন্য কান্না কেন, চোখের জল মুছে ফেল? না, কেউ বলেনি।'

তসলিমা লিখেছেন, '

মেয়েরা তাদের অ্যাবিউজার স্বামীকে ভালবাসবে, স্বামী সে যত নিকৃষ্টই হোক, যত অমানুষই হোক, যত অত্যাচারীই হোক; স্বামী তাকে তালাক দিলেও স্বামীকে ভালবাসবে; স্বামী অন্য কারও সঙ্গে বাস করলেও, অন্য কাউকে বিয়ে করলেও, নিজে কোনও সম্পর্কে জড়াবে না, নিজে আনন্দ করবে না, কেবল কাঁদবে, কেবল ত্যাগী হবে, ভোগী নয়, একা একা প্রাক্তন স্বামীকে ভালবেসে যাবে। সমাজ এটাই চায়। কিন্তু এই নারীবিদ্বেষী সমাজকে মেয়েদের খুশি করতে হবে কেন? এই সমাজকে জোরে চড় কষায় না কেন মেয়েরা? কেন ভালো মেয়ে হওয়ার জন্য আত্মমর্যাদাবোধ বিসর্জন দেয়, কেন শিরদাঁড়া বিকিয়ে দেয় সমাজের কাছে?
 
কারিশ্মাকে একটা লোক পেটাতো, অপমান করতো, অ্যাবিউজ করতো! কারিশ্মা যদি তাঁর সেই অ্যাবিউসিভ সম্পর্কের অ্যাবিউসিভ স্বামীর জন্য কেঁদে বুক না ভাসাতেন, তাহলে তাঁকে ভালো মেয়ে বলার একটা অর্থ থাকত। সত্যি বলতে, আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন মেয়েরাই ভালো মেয়ে। আর আত্মমর্যাদাহীন মেয়েদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ প্রশংসা করতে পারে, কিন্তু সচেতন সমাজ কেন প্রশংসা করবে! আত্মমর্যাদাহীন মেয়েরা মেয়েদের আত্মমর্যাদাহীন হতে শেখায়।
আমি বলছি না, মেয়েদের নিষ্ঠুর হতে হবে, অনুদার হতে হবে। না তা নয়, মেয়েরা উদার হোক, মানবিক হোক, সৎ হোক, সহমর্মী হোক, সহানুভূতিশীল হোক, কিন্তু যেন অযোগ্য লোকদের , যেন নারী-নির্যাতকদের ,নারীবিদ্বেষীদের , ধর্ষকদের মায়া মমতা, প্রেম ভালবাসা, সহানুভূতি সহমর্মিতা ইত্যাদি জীবন উজাড় করে না দেয়।'