কলকাতা: বদলে যাচ্ছে পরিচালক। কিন্তু বদলাচ্ছে না গল্পের চরিত্ররা। ওয়েব সিরিজে ফেলুদার হাত ছেড়েছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায় (Srijit Mukherjee)। তবে ফের ওয়েব সিরিজের পর্দায় ফিরছে ফেলুদা। 'রয়াল বেঙ্গল রহস্য' নিয়ে। কিন্তু যে পরিচালকের হাত ধরেই প্রথম ফেলুদা হওয়া, সেই পরিচালকের হাত ছেড়ে যাওয়া যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। একসঙ্গে এই পরিচালকের ওপরেই চোখ বুঁজে ভরসা করেছিলেন তিনি। প্রচুর নেতিবাচক মন্তব্য শোনার পরেও, নিজেকে ফেলুদা হিসেবে তৈরি করেছিলেন এই পরিচালকের ভরসাতেই। সেই 'ক্যাপ্টেন'-এর জন্য, সোশ্যাল মিডিয়ায় খোলা চিঠি লিখলেন, ফেলুদা। টোটা রায়চৌধুরী (Tota Roychowdhury) চিঠি লিখলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে (Srijit Mukherji)।


সোশ্যাল মিডিয়ায় দুটি ছবি দিয়ে টোটা লিখেছেন, 'ওপরের ছবিটি ২৪শে ডিসেম্বর, ২০১৯-এ তোলা। আপাতদৃষ্টিতে চেহারায় আলগা নিশ্চিন্ততা পরিস্ফুট হলেও পেটে প্রজাপতির অবিরাম ওড়াওড়ি। স্বপ্নের চরিত্রে নির্বাচিত হওয়ার পরপরই কয়েক রাউন্ড তুমুল গালমন্দের সম্মুখীন হয়ে ফেলুদার সেটে আমার প্রথম দিন। তার ওপর দুই সুউচ্চ পর্বতপ্রমাণ প্রবাদপ্রতিমদের সঙ্গে তুলনা হওয়ার ভয় পরিচালকের বরাভয়েও কাটছে না। ফেলুদা হওয়ার প্রচেষ্টার প্রথম পদক্ষেপ (এখনও অবশ্য হয়ে উঠতে পারিনি তবে work in progress) এবং ত্রয়ীর পথচলার হাঁটি হাঁটি পা পা।


নীচের ছবিটি ২৫শে মার্চ, ২০২৪-এ তোলা। ততদিনে দুটো আলাদা প্ল্যাটফর্মে দুটো সিজন স্ট্রিম হয়ে গেছে। বহুল সংখ্যক দর্শক এই ত্রয়ীকে গ্রহণ করেছেন এবং বেশ কিছু মানুষ নিজগুণে আপন করেও নিয়েছেন (তাঁদের কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা। এক শ্রেনীর গালাগাল অবশ্য এখনও পিছু ছাড়েনি তবে চামড়া এখন কাজিরাঙ্গার রাইনো)! স্বর্গীয় পরিবেশে ফেলুদা বেশে ভূস্বর্গে সে মুহূর্তে আবহ "আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে"! তখনও জানি না যে এটাই ক্যাপ্টেন এর নেতৃত্বে আমাদের শেষ ইনিংস।



গত পাঁচ বছরে, ফোর মাস্কেটিয়ার্স, চারটে সিজন করলাম দুটো আলাদা প্ল্যাটফর্মে। একটা সিজনের স্ট্রিমিং অবশ্য এখনও হয়নি। তবে দুটো প্ল্যাটফর্মেই দর্শকসংখ্যায় রেকর্ড সৃষ্টি করেছে সৃজিত মুখুজ্জের ফেলুদা। সেটা অবশ্যই রায়সাহেবের স্বর্ণলেখনী এবং কিংবদন্তি চরিত্রের অমরত্ব হেতু। তবে তৎসহ সৃজিত মুখার্জির ফেলুদাপ্রীতি, সত্যজিৎ-ভক্তি ও পরিচালনার মেধা,মুনশিয়ানাকে কৃতিত্ব দেওয়া না হলে সেটা নিছক নিন্দুকের একচোখামি হবে, সমালোচকের নিরপেক্ষতা নয়।

 



এবার ত্রয়ী পথ চলবে আরেক শক্তিশালী পরিচালকের হাত ধরে। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের গভীরতা, নিষ্ঠা ও দক্ষতা; সর্বজনবিদিত। আশা করি এবারও আপনাদের আশীর্বাদ ও ভালবাসা প্রাপ্তি হবে।

তবে বলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই যে সৃজিত মুখোপাধ্যায় যদি স্রোতের বিপরীতে সন্তরণ করে,আমার ওপর বিশ্বাস না রাখতো এবং পরবর্তীতে মাতৃসম স্নেহে আমায় ফেলুদার চরিত্রে গড়ে না তুলতো; তাহলে আজ আমার একমাত্র স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যেত। আর হ্যাঁ, ফেলুদা রূপে সমস্ত ত্রুটি বিচ্যুতি, দোষ, খামতি একান্তই আমার অক্ষমতা প্রসূত। পরিচালকের ধৈর্য, নিষ্ঠা ও সক্ষমতা সত্ত্বেও।

ক্ষমা করে দিও, ক্যাপ্টেন। আর আশা করি জীবনপথের কোনো বাঁকে আবার দেখা হয়ে যাবে। তোমার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা আজীবনের। ভালো থেকো। ভালবাসা নিও।'