কলকাতা: ধারাবাহিকের নায়িকা, সেও নাকি 'প্লাস সাইজ' (Plus Size)! এমনও হয়? এমন প্রচলিত ধারণাকে ভেঙেচুরে প্রায় বছর খানেক আগে এক ধারাবাহিকের সূচনা করে কালার্স বাংলা (Colors Bangla)। ধারাবাহিকের নাম 'সোহাগ চাঁদ' (Sohag Chand)। মুখ্য চরিত্রে অন্বেষা রায় মুখোপাধ্যায় (Anwesa Ray Mukhopadhyay)। একেবারে অন্য পেশা থেকে এসে এই প্রথম তাঁর অভিনয় জগতে পা রাখা। প্রথম ধারাবাহিকের প্রথম বর্ষপূর্তির আগে সময় দিলেন এবিপি লাইভকে (ABP Live)। কেমন ছিল এক বছরের অভিজ্ঞতা? জানালেন নিজেই। আর ফ্লোরের বাইরে ব্যক্তিগত জীবনে কেমন অন্বেষা? আড্ডায় জানা গেল এমন একাধিক প্রশ্নের উত্তর।
প্রশ্ন: ধারাবাহিকের শ্যুটিং মানে তো প্রচন্ড ব্যস্ত শিডিউল? প্যাক আপের পর বাড়ি ফিরে প্রথম কাজ কী হয়?
অন্বেষা রায় মুখোপাধ্যায়: ব্যস্ততা তো থাকেই, ১৪ ঘণ্টার কাজ। খাওয়া-দাওয়ারও সময় পাই না অনেক সময়। সারাদিনের কাজ সেরে বাড়ি ফিরলেই আমার চার ছানা আগে জড়িয়ে ধরে আদর করে। আমার তিন মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়ের নাম বেগম, সে সারমেয়। মেজ আর সেজ মেয়ে হচ্ছে উদ্ধার করে আনা বিড়াল। ওদের নাম লালি আর চিনি। সবচেয়ে ছোট ছেলে পায়েস। তাই বাড়ি ফিরে আমার প্রথম কাজ ওদের আদর করা, আর ওদের আদর খাওয়া।
প্রশ্ন: অবসর সময় কী করতে ভালবাসেন?
অন্বেষা: এই সময়ে তো অবসর সেভাবে পাই না। তবে পেলে ঘুমোতে ভালবাসি (হাসি)। খেতে ভালবাসি, গান শুনতে, সিনেমা দেখতে, বই পড়তে ভালবাসি। বাচ্চাগুলোর সঙ্গে খেলতে সময় কাটাতে ভালবাসি।
প্রশ্ন: আপনার প্রিয় খাবার কী ?
অন্বেষা: প্রিয় খাবার মাছের ঝোল, ভাত। মাছ খেতে ভীষণ ভালবাসি। ফিশ ফ্রাই, ফিশ ব্যাটার ফ্রাই ভালবাসি। বিরিয়ানি, চাইনিজও ভালবাসি। কিন্তু কমফোর্ট ফুড বললে মাছের ঝোল আর ভাত।
প্রশ্ন: ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সিনেমা দেখা নাকি সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা, কোনটা বেশি পছন্দ ?
অন্বেষা: হয়তো কোভিডের পর থেকেই এটা হয়েছে যে ওটিটিতে সিনেমা সিরিজ দেখতেই বেশি পছন্দ করি আমরা। তাছাড়া আরও একটা বিষয় যে ওটিটিতে অনেক বেশি কনটেন্ট পাওয়া যায়। মানে যেগুলো অর্থপূর্ণও, সেই সঙ্গে সংখ্যাতেও বেশি। সিনেমা অবশ্যই সিনেমা হলে গিয়ে বড়পর্দায় দেখতে ভাল লাগে বেশি। কিন্তু এখন টাকা খরচ করে টিকিট কেটে, খাওয়া দাওয়া করে বড়পর্দায় দেখার মতো সিনেমা খুবই কম আসে। তাছাড়া আমার মনে হয় ওয়েব সিরিজ আসার পর মানুষের সিনেমা দেখার চলটাও কমেছে কারণ সিনেমায় যেটা ২ ঘণ্টায় দেখি ওয়েব সিরিজে সেটা অনেক বিস্তারিতভাবে দেখানোর সুযোগ থাকে।
প্রশ্ন: আপনার প্রিয় অভিনেতা ও অভিনেত্রী কে?
অন্বেষা: আমার প্রিয় অভিনেতা 'সোহাগ চাঁদ' ধারাবাহিক দেখলেই বোঝা যাবে। জানি না, বাস্তবের অন্বেষার থেকেই সোহাগ অনুপ্রাণিত। সোহাগের মতোই বাস্তব জীবনে আমিও শাহরুখ খানের ভক্ত। প্রিয় অভিনেত্রী আমি নিজে (হাসি)। কেন জানি না, শাহরুখ খানের পাশে নিজেকে ছাড়া কাউকে কখনও ভাবতেই পারিনি। মজা সরিয়ে বলি প্রিয় জুটি বললে শাহরুখ-রানি বা শাহরুখ-কাজল।
প্রশ্ন: সম্প্রতি দেখা পছন্দের কোনও সিনেমা বা সিরিজ?
অন্বেষা: সম্প্রতি দেখা পছন্দের ছবি অবশ্যই শাহরুখের 'জওয়ান'। ভাল সামাজিক বার্তা রয়েছে। সিরিজ বললে, 'ছোটলোক' দেখেছি সম্প্রতি। দামিনী দির অভিনয় অত্যন্ত ভাল লেগেছে। খুব শক্তিশালী চরিত্র। খুব মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো সিরিজ।
প্রশ্ন: অভিনেতা না হলে অন্য কোন পেশায় যেতেন?
অন্বেষা: আমি তো অভিনেত্রী ছিলামই না (হাসি)। আমি এর আগে একাধিক বড় সংস্থার প্যান ইন্ডিয়া মার্কেটিং হেড হিসেবে কাজ করেছি। তারপর একটি চ্যানেলে সাংবাদিক হিসেবে জয়েন করি। অজস্র মহিলার সাক্ষাৎকার নিয়েছি, তাঁদের নিয়ে স্টোরি করেছি। একাধিক অভিজ্ঞতা হয়েছে সেই সুবাদে। কোনও মহিলা হয়তো যৌনকর্মী, কেউ হয়তো অ্যাসিড হামলার শিকার, বা কেউ গার্হস্থ্য হিংসার শিকার, এরকম একাধিক মহিলার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। বোধ হয় সেই সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যাবে। নিজের নেওয়া সাক্ষাৎকার নিজেই লিখতাম। তো লেখালেখির শখ আমার আছে। ভবিষ্যতে যদি কখনও সুযোগ পাই তাহলে নিজের জীবন কাহিনি নিজে লিখে সেটার ওপর একটা প্রোডাকশন করতে চাইব।
প্রশ্ন: যাঁরা অভিনয় জগতে পা রাখতে চাইছেন, নতুন, তাঁদের জন্য কী টিপস দেবেন?
অন্বেষা: আমি তো নিজেই নতুন, আমি বিশেষ কী বলতে পারি আর! শুধু এটুকু বলব যে অভিনয় খুব শক্ত একটা কাজ। সাজলাম, গুজলাম, চুল সেট করলাম, পোশাক-মেকআপ করে ক্যামেরার সামনে চারটে সংলাপ বললাম হয়ে গেল, এটা অভিনয় নয়। অভিনয়ের থেকেও বেশি শক্ত ধৈর্য রাখা। কখন তোমার শট আসবে তখন ডাকবে, সেই অপেক্ষায় থাকা। আমার এমন দিনও গেছে যে সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কোনও শটই দিইনি। ওই রাতে এসে একটা শট হল। প্রথমে রাগ হত, কান্নাকাটিও করেছি। কিন্তু ধৈর্য না রাখতে পারলে হবে না, ওটাই এই ইন্ডাস্ট্রিতে সাফল্যের চাবিকাঠি।
প্রশ্ন: খুব শীঘ্রই তো ১ বছর পূর্ণ হতে চলেছে 'সোহাগ চাঁদ' ধারাবাহিকের পথ চলার। কেমন ছিল এই এক বছরের অভিজ্ঞতা?
অন্বেষা: আর কিছুদিনের মধ্যেই 'সোহাগ চাঁদ' ১ বছরে পা দেবে। ভীষণ ভাল লাগে। নিজেই বিশ্বাস করতে পারছি না যে এক বছর ধরে অভিনয় করছি। আমি খুব খুশি যে এত সুন্দর একটা পরিবার দিয়েছে কালার্স বাংলা আর সুরিন্দর ফিল্মস। এখানে আমি মা পেয়েছি, দিদি পেয়েছি। সহ-অভিনেতার মতো ভাল একজন বন্ধু পেয়েছি। অনেক কিছু শিখেছি। প্রথম প্রথম খুব ভয় পেতাম যে কী হবে, কিন্তু সবাই খুব সাহায্য করেছে। আমরা যেন দীর্ঘায়ু হই। অনেকগুলো পর্ব করতে পারি। সব মিলিয়ে আমার অভিনয়ের প্রথম বছর দারুণ, আমি খুব খুশি। আমার মা আমাকে এই স্থানে এনেছে বলে আমি কৃতজ্ঞ তাঁর কাছে।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।