কলকাতা: একসময় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন রুপোলি পর্দা থেকে শুরু করে নাটকের মঞ্চ। তবে সহজ ছিল না, ঢাকার সেই মেয়েটির কলকাতায় রাজত্ব করার সফরটা। সংসারে অভাব দেখেছেন... তবে সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেখেছেন স্বপ্ন। ইচ্ছে ছিলেন কাননবালা হবেন, উত্তমকুমারকে দেখবেন... আরও কত কি। সেই সব স্বপ্ন যখন সত্যি হল, কেমন লেগেছিল তাঁর? সেলিব্রিটি টক শো 'অপুর সংসার'-এ এসে সেই অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছিলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় (Sabitri Chatterjee)।
ছোটবেলায় ভালবাসতেন রাংতা দেওয়া পান খেতে। ট্রামের টাকা বাঁচাতে হেঁটে স্কুলে যেতেন, আর তারপরে, সেই টাকা দিয়ে মিষ্টি পান কিনে খেতে খেতে স্কুল থেকে ফিরতেন সাবিত্রী। তখনই একদিন দেখা হয়ে যায় ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সাবিত্রী বলছেন, 'আমি রাসবিহারীতে যেখান দিয়ে হেঁটে স্কুল থেকে ফিরতাম, সেখানে রোজ আড্ডা মারতেন কিছু শিল্পী। সেখানেই একদিন ভানুদা আমায় ডেকে বলেন, 'আমরা একটা নাটক করছি, সেখানে এমন একটি মেয়ে দরকার যে বাঙাল ভাষা জানে। শুনলাম তুমি ঢাকার মেয়ে।' আমি তখন বলেছিলাম, বাবার সঙ্গে কথা বলতে। পরেরদিন ভানুদা এসে হাজির হয়েছিলেন আমার বাবার কাছে। সব শুনে বাবা বলেছিলেন, ও কলকাতার রাস্তাঘাট কিছুই চেনে না। যেতে দিতে পারি যদি আপনি ওকে সঙ্গে করে নিয়ে যান আবার দিয়ে যান। তাতেই রাজি হয়ে যান ভানুদা।'
এখানেই শেষ নয় গল্প.. সাবিত্রী বলে চললেন, 'প্রথম যেদিন সেই নাটকের রিহার্সালে গেলাম, সেদিন আমার ছিল খালি পা। ভানুদা অবাক হয়ে প্রশ্ন করতে আমি বলেছিলাম, আমার একটাই জুতো। স্কুলের কেডস। সেটা নোংরা হলে স্কুলে বকাবকি করে... ফলে খালি পা। রিহার্সালে যাওয়ার আগে ভানুদা প্রথমে আমায় জুতোর দোকানে নিয়ে গিয়ে একটা জুতো কিনে দিয়েছিলেন। তারপরে বলেছিলেন, 'কলকাতার রাস্তায় খালি পায়ে হাঁটা যায় না।' সেই জুতো আমি বহুদিন পর্যন্ত ব্যবহার করেছিলাম আর সামলে রেখেছিলাম। ভানুদার বলা সেই কথা এখনও আনার কানে লেগে রয়েছে। তবে এখন আর কলকাতার রাস্তায় যেতে হয় না... ইন্ডাস্ট্রিতেই কাঁকড় ছড়ানো থাকে।'
সাবিত্রীর মুখে এই কথা শুনে মুহূর্তের জন্য থমকে যান শো-এর সঞ্চালক শাশ্বতও। হাততালিতে ফেটে পড়ে দর্শকাসন। শাশ্বত বলেন, 'এই একটা কথার মধ্যেই কত কী লুকিয়ে রয়েছে।'