কলকাতা: রাত পেরোলেই ছবি মুক্তি, তার আগে স্বভাবতই উত্তেজনায় ফুটছেন তিনি। মানুষের জীবনের মনখারাপ, মনকেমনের গল্প বলবে এই ছবি, কিন্তু বিনোদনের মোড়কে। শিলাদিত্য মৌলিক পরিচালিত, বিক্রম চট্টোপাধ্যায়, মধুমিতা সরকার, দর্শনা বণিক অভিনীত ছবি 'সূর্য' মুক্তি পাবে আগামীকাল। সেই ছবি মুক্তির আগে, 'সূর্য' নিয়ে এবিপি লাইভের (ABP Live) মুখোমুখি অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায় (Vikram Chatterjee)। 


প্রশ্ন: ছবির মুক্তির আগের দিন, এখনও প্রথম ছবি মুক্তির মতোই টেনশন কাজ করে?


বিক্রম চট্টোপাধ্যায়: ছবি মুক্তির আগে সবসময়েই একটা চাপ করে। তবে ট্রেলার, টিজ়ারে দর্শকদের ভাল প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। আমাদের পোস্টার-হোর্ডিং.. সবকিছুরই ভাল ফিডব্যাক পাচ্ছি। ফিঙ্গারস্ ক্রসজ। ছবি মুক্তির আগেরদিন একটা উদ্বেগ তো কাজ করেই।


প্রশ্ন: 'সূর্য' ছবির চিত্রনাট্য বাছার পিছনে কোন ভাবনা কাজ করেছিল?


বিক্রম: চরিত্রটা আমার ভীষণ ভাল লেগেছিল। গত ২ বছর থেকে যে যে চরিত্র পেয়েছি, প্রত্যেকটাই একে অপরের থেকে আলাদা। সে 'শেষ পাতা' হোক, বা 'পারিয়া', 'শহরের উষ্ণতম দিনে' বা আমার যে ছবিগুলো মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে... প্রত্যেকটা ছবির ক্ষেত্রেই আমার আনন্দের জায়গা হল, পরিচালক-প্রযোজকেরা আমায় আলাদা আলাদা চরিত্র দিয়েছেন ভরসা করে। এই ছবিটার আরও একটা ভাল দিক হল, ছবিটা একটা বিশ্বাসের কথা বলে, ভাল থাকার কথা বলে। ভরসার কথা বলে। জীবনে কঠিন পরিস্থিতি আসলেও বিশ্বাস রাখা যে একদিন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। একটা নতুন সূর্য উঠবে। এই কথাটা আমিও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। ছবিটার ইউএসপি হল, মানুষের ডিপ্রেশন, বিভিন্ন মানসিক পরিস্থিতির কথা বলে, কিন্তু খুব হালকা মেজাজে। বাংলা ছবির ক্ষেত্রে খুব স্পর্শকাতর বিষয়কে তুলে ধরতে গেলেই আমরা গম্ভীর একটা ছবি বানিয়ে ফেলি। আমার মনে হয়েছিল, যে কোনও ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসার পথ হল বিশ্বাস। 'সূর্য'সেই বিশ্বাসের কথাই বলে। 


প্রশ্ন: 'সূর্য' -র জীবনে সূর্য কে? 


বিক্রম: (হেসে) একটা নয়, আমার জীবনে তো অনেক সূর্য। আমার পরিবার রয়েছে, বাবা-মা, বোন রয়েছে, বন্ধুরা রয়েছে, আমার বাড়ির চারপেয়ে সদস্যরা রয়েছে.. সবাই মিলেই আমার মন ভাল করে দেয়। যখন যে পরিস্থিতিতে যাকেই পাশে চেয়েছি, আমি পেয়েছি। সেই মুহূর্তে তাঁরাই আমার জীবনের সূর্য। আর মনখারাপ হলে আমি পাহাড়ে যেতে ভালবাসি। যখন মনে হয়, কিছু ভাল লাগছে না.. তখন নিজেকে ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনার আমার একমাত্র ওষুধ হল পাহাড়ে একটা ট্রিপ। 


প্রশ্ন: 'সূর্য'-তে অভিনয় করার আগে এই ছবির অন্যান্য ভার্সন দেখেছিলেন?


বিক্রম: আমি অনেকদিন আগে 'চার্লি' ছবিটা দেখেছিলাম। তখন আমি নিতান্তই দর্শক। কখনও ভাবিনি যে সেই ছবির কপিরাইট কিনে, বাংলায় সেই ছবির অফারই আমার কাছে আসবে। বাকি দুটি ছবি, 'মারা' ও 'দেবা' আমি এখনও দেখিনি। ছবির কাজ শুরু করার আগে আমাদের সবাইকে পরিচালক বলেছিলেন, আমরা ছবিটা এমনভাবেই তৈরি করব যেন এই চিত্রনাট্যের ওপর কখনও কোনও কাজ হয়নি। সিনেমাটায় যথেষ্ট নিজস্বতা রাখার চেষ্টা করেছি। আর আমি সবসময়েই পরিচালকের কথা শুনে অভিনয়ে বিশ্বাসী। তিনি যা ভেবেছেন, পর্দায় সেভাবেই চরিত্রটাকে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করি। আমরা এই ছবিটা যদি শুধু বার্তাবহ হিসেবে বানাতাম, তাহলে হয়তো একটা স্লো-পেসের ছবি হত। বিনোদনমূলক হত না।


প্রশ্ন: সিনেমায় বিশেষ কোনও বার্তা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিনোদন জরুরি বলে মনে করেন?


বিক্রম: অবশ্যই। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির নামটাই তো বিনোদন। আমি বিশ্বাস করি, মানুষের রোজকার জীবনে বড্ড সমস্যা, বড্ড একঘেয়েমি। রোজ অফিস যেতে হচ্ছে বা কাজ করতে হচ্ছে। মানুষ যখন সিনেমাহলে যাবে, জীবনের সব মনখারাপ যেন ভুলে যায় এটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। আর সেই গল্পের মধ্যে দিয়ে যদি কোনও বার্তা দেওয়া যায় তাহলে তো আরোই ভাল। আমরা বাঙালিরা খুব বেশি ভাবতে ভালবাসি। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে আমি যখনই কথা বলেছি, একটা অদ্ভূত ভাবনা লক্ষ্য করেছি। তরুণ প্রজন্ম মনে করেন, বাংলা ছবি তাঁদের জন্য তৈরি হয় না। আমরা যেমন ষাটোর্ধ্বদের জন্য বাংলা ছবি বানাব, তেমনই কিছু ছবি বছর ২০-র দর্শকদের জন্যও থাক.. এটা আমার মনে হয়। ইন্ডাস্ট্রিতে সবরকম ছবিরই একটা ভারসাম্য থাকা উচিত। শেষমেষ যেটা বলতে হয়, একটা মানুষ যে নিজের জীবনের চাহিদাগুলোকে বাদ দিয়ে,  অন্যকে ভাল রাখার চেষ্টা করে.. এমন মানুষ বর্তমানে প্রায় অমিল। পর্দায় তাই এই পজিটিভিটি তুলে ধরাটা খুব জরুরি বলে মনে হয়েছিল আমার। 


প্রশ্ন: শ্যুটিংয়ের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং অংশ কোনটা ছিল বিক্রমের জন্য?


বিক্রম: উত্তর ভারতের মানুষদের দেখতে মনে হয়, আমাদের থেকে ওদের প্রাণশক্তি যেন অনেক বেশি। বাঙালি ভাবতে ভালবাসে, তর্ক করতে ভালবাসে.. কিন্তু ওরা আরও বেশি করে জীবনকে উপভোগ করতে চায়। সূর্যর চরিত্রে সেই এনার্জি নিয়ে আসা সেই সঙ্গে চরিত্রটাকে ভীষণভাবে বাঙালি করে রাখাটাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সবশেষে সূর্যর মধ্যে বাঙালিয়ানা ভরপুর তো থাকতেই হবে।


প্রশ্ন: বড়পর্দার পাশাপাশি, ছোটপর্দায় কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে বিক্রমের?


বিক্রম: বিষয়টা পরিকল্পনার নয়, সময়ের। ছোটপর্দা থেকেই আমার উত্থান, তাই এই মাধ্যমের ওপর আমার ভীষণ ভালবাসা রয়েছে। কিন্তু গত ৫ বছর আমি ছোটপর্দায় কাজ করিনি। ভগবানের আশীর্বাদে হাতে কিছু বড়পর্দার কাজ রয়েছে। কিছু শ্যুটিং শেষ হয়েছে, কিছুর শুরু হবে। ছোটপর্দা আর বড়পর্দা, দুই জায়গাতেই মুখ্যভূমিকায় কাজ করা যাবে না। আমায় কোনও একটা বেছে নিতেই হবে। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে অপেক্ষা করেছি পরিচালক-প্রযোজকেরা আমায় মুখ্যভূমিকায় কাস্ট করবেন। ভগবানের আশীর্বাদে তা যখন হচ্ছে, আমার মনে হয় সেটাকেই আমার এখন গুরুত্ব দেওয়া উচিত।


 






আরও পড়ুন: Bengali Serial: নতুন নয়, অন্য ভাষার শো বাংলায় ডাবিং করেই টিআরপি টানতে চাইছেন চ্যানেল নির্মাতারা


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।