কলকাতা: চোখে জল, কথা বলতে গিয়ে ভেঙে পড়ছেন বারে বারে। সন্তান হারানোর শোক সামলে, বেশ কিছুটা সময় নিয়ে ফের ক্যামেরার সামনে এলেন ইউটিউবার সোহিনী গঙ্গোপাধ্যায়। সোহিনী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, তাঁর গর্ভে ছিল পুত্রসন্তান। কিন্তু পৃথিবীর আলো দেখতে পেল না সেই একরত্তি। গত ২২ অগাস্ট জন্মানোর আগেই গর্ভেই মারা যায় সোহিনীর সন্তান। সেই কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে আসতেই ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
সোহিনীর গর্ভস্থ সন্তান মারা গিয়েছে, তা প্রথম প্রকাশ্যে এনেছিলেন সোহিনীরই এক আত্মীয়, সেখানে তিনি চিকিৎসককে দোষারোপ করেছিলেন। এরপরে সেই চিকিৎসক ও পাল্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, সোহিনীর গর্ভাবস্থা খুব গুরুতর ছিল, সেই কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। তবে আজ, প্রায় ১ ঘণ্টার একটি লম্বা ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিলেন সোহিনী। জানালেন, ২২ তারিখ সারাদিন তাঁদের সঙ্গে কী কী ঘটেছে?
সোহিনী জানান, ২২ তারিখ সকালে তিনি ও তাঁর স্বামী অনুভব করেন, গর্ভস্থ শিশু আর স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করছে না। তখনই তাঁরা চিকিৎসককে ফোন করেন, চিকিৎসক তাঁদের চেক আপের জন্য আসতে বলেন। সোহিনী ও তাঁর স্বামী সেখানে পৌঁছলে তাঁদের একটি USG করতে বলা হয়। সেই পরীক্ষা করে দেখা যায়, শিশুর গলায় কর্ড বা নাড়ি জড়িয়ে রয়েছে। সোহিনী ও তাঁর পরিবারের অভিযোগ, শিশুর অবস্থা বিপজ্জনক বুঝেও, কেবলমাত্র অন্য জায়গায় ক্লাস করাতে যাবেন বলে তখনই অস্ত্রোপচার করেননি চিকিৎসক। চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, এখনই অস্ত্রোপচার করে শিশুকে বের করে নিলে বিপদ হতে পারে। সেই কারণে সোহিনীকে একদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরামর্শ দিয়ে ক্লাস করাতে বেরিয়ে যান ওই চিকিৎসক।
এখানেই শেষ নয়, সোহিনী ও তাঁর পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, দেওয়া হয়নি অক্সিজেন ও। শেষবার সোহিনী তাঁর গর্ভস্থ সন্তানের নড়াচড়া অনুভব করেছিলেন বেলা ১২টা নাগাদ। এরপরে সোহিনী বারে বারে অনুরোধ করলেও, কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, চিকিৎসক ও আসেননি। দুপুর ২টো নাগাদ চিকিৎসক ক্লাস করিয়ে ফেরেন এবং তখন তিনি ও শিশুর নড়াচড়া অনুভব করতে পারেন না। সোহিনী আর তাঁর পরিবাবের অভিযোগ, এরপরে চূড়ান্ত অসহযোগীতা করেছেন চিকিৎসক। বলেছেন, শিশু যখন গর্ভেই মারা গিয়েছে, আর কিছু করার নেই। এমনকি সোহিনীকে দেখতে হাসপাতালে পর্যন্ত আসতে চাননি চিকিৎসক।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন যে সোহিনী কেন গর্ভাবস্থায় কাজ করেছিলেন? চিকিৎসক অভিযোগ করেছিলেন, সোহিনীর নাকি হাই ব্লাড প্রেশার ছিল। এদিন যাবতীয় প্রেসক্রিপশন নিয়ে ক্যামেরার সামনে এসেছিলেন সোহিনীর স্বামী। তিনি জানান, সোহিনীর কোনোদিনই উচ্চ রক্তচাপ ছিল না। এমনকি তাঁর প্রেগনেন্সিতে কোনও রিস্ক আছে বলেও লেখেননি চিকিৎসক। তাহলে কেন সোহিনীর গর্ভস্থ সন্তান দেখতে পেল না পৃথিবীর আলো? দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে সোহিনীর পরিবার দায়ী করছেন চিকিৎসককেই।