গুয়াহাটি: বয়ঃসন্ধিকালে তাঁর গান ছাড়া চলত না। সেই জুবিন গর্গ নেই বলে বিশ্বাসই করতে পারছেন না অনেকে। সিঙ্গাপুরে গায়কের মৃত্যুতে তাই শোকস্তব্ধ অনুরাগীরা। তাঁর কণ্ঠ, তাঁর গাওয়া গানের কথা যেমন ফিরে ফিরে আসছে, তেমনই মানুষ জুবিনের কথাও স্মরণ করছেন অনুরাগীরা। কারণ সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা জুবিন কখনও নিজের মূল্যবোধের সঙ্গে আপস করেননি। শোকের মুহূর্তে সবার বার সেকথাই উঠে আসছে সোশ্য়াল মিডিয়ায়। (Zubeen Garg)
মাত্র ৫২ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন জুবিন। তবে রেখে গেলেন বিরাট উত্তরাধিকার। গত ৩৩ বছরে ৪০টি ভাষায় ৩৮ হাজারের বেশি গান গেয়েছেন জুবিন। গলা ছিল যেমন নিখাদ, তেমনই ১২টি বাদ্যযন্ত্র বাজাতে জানতেন। একসময় চুটিয়ে গান গেয়েছেন। আবার সময় বুঝে নিজেকে গুটিয়েও নিয়েছেন জুবিন। সামাজিক বা রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বেশিরভাগ শিল্পীই বিরত থাকলেও, জুবিন সেই পথে হাঁটেননি। (Zubeen Garg Death)
জুবিন বন্যার সময় রাস্তায় নেমে ত্রাণ সংগ্রহ করতেন যেমন, তেমনই তিব্বতের স্বাধীনতার জন্য় সওয়াল করে এসেছেন বরাবর। গত বছরই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে মুখ খুলেছিলেন জুবিন। জানিয়েছিলেন, অসমের মানুষ কখনও CAA মেনে নেবেন না। কোনও রকম ধর্মীয় বিভাজন অসমবাসী বরদাস্ত করবেন না বলে জানান জুবিন। তিনি জানান, CAA-র বিরুদ্ধে আন্দোলন জারি থাকবে। CAA-র বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে জয়ী হতে সকলকে একজোট হতেও আহ্বান জানান।
শুধু মুখের বুলিই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও মানবধর্মই পালন করে এসেছেন জুবিন। নিজেকে তিনি ‘ধর্মহীন’ বলে উল্লেখ করতেন। ধর্ম, জাতপাতের বেড়াজাল মানতেন না। ২০১৯ সালে জুবিন জানান, জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণ হলেও, পৈতে পরেন না। ব্রাহ্মণ্যবাদের ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি।
ব্রাহ্মণদের নিয়ে মন্তব্যের জেরে কম বিতর্ক হয়নি জুবিনকে নিয়ে। ক্ষমা পর্যন্ত চাইতে হয় তাঁক। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে বিহু কনসার্টে ভগবান কৃষ্ণকে নিয়ে যে মন্তব্য় করেন জুবিন, তা নিয়েও বিতর্ক হয় বিস্তর। ভগবান কৃষ্ণ দেবতা ছিলেন না, মানুষ ছিলেন বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। পরিস্থিতি এমন হয় যে মাজুলি জেলায় তাঁকে নিষিদ্ধ করে সত্র মহাসভা। কিন্তু কোনও বিতর্কই শিল্পী জুবিনের সৃজশীলতা খর্ব করতে পারেনি। তাই শিল্পীর প্রয়াণে শোকের ছায়া অনুরাগীদের মধ্যে। অতীতে বার বার ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা।