নয়াদিল্লি: বিয়ে করতে গিয়ে উদ্দাম নাচ। এর ফলে বিয়েই ভেস্তে গেল যুবকের? হবু শ্বশুরই না কি বিয়ে ভেস্তে দিলেন! বলে বুঝিয়েও না কি নিরস্ত করা গেল না শ্বশুরকে। চোখের জলে মণ্ডপ ছাড়তে হল কনেকে। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অটল রইলেন ওই ব্যক্তি। ভবিষ্যতেও যাতে মেয়ের সঙ্গে ওই যুবক এবং তাঁর পরিবারের কেউ যোগাযোগ করতে না পারেন, তার জন্য কড়া নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এর সত্যতা কী? (Viral News)


দিল্লিতে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে যায়। জানা যায়, বরযাত্রী নিয়ে মণ্ডপে পৌঁছন ওই যুবক। সেই সময় নাচতে হবে বলে জোরাজুরি শুরু করে দেন বন্ধুবান্ধবরা। মাইকে তখন ‘চোলি কে পিছে ক্যায় হ্যায়’ বাজছে। সেই গানেই কোমর দোলাতে শুরু করেন ওই যুবক। আত্মীয়স্বজনরাও তাঁকে উৎসাহ জোগাতে থাকেন। (Choli Ke Peeche)


সোশ্য়াল মিডিয়ায় দাবি করা হয়, ওই গানে হবু জামাইকে নাচতে দেখে বেজায় চটে যান কনের বাবা। বিয়ে হবে না বলে সটান ঘোষণা করে দেন তিনি। যুবক যে আচরণ করেছেন, তাতে পরিবারের মর্যাদা ধুলোয় মিশে গিয়েছেন বলে জানান। এমন পরিস্থিতিতে হকচকিয়ে যান সকলে। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন কনের বাবা। অঝোরে মেয়েকে কাঁদতে দেখেও নিজের অবস্থান থেকে সরেননি। ছেলের পরিবারের তরফেও বোঝানোর চেষ্টা হয়। কিন্তু কারও কথাই কানে তোলেননি কনের বাবা। পরিবারকে নিয়ে মণ্ডপ ত্যাগ করেন তিনি।


এমনকি পরিবারের ঘনিষ্ঠরা বলে বুঝিয়েও কনের বাবাকে নিরস্ত করতে পারেননি, ওই যুবক এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে কোনও রকম সমঝোতায় আসতে কনের বাবা রাজি হননি বলে জানা যায়। বলা হয়, মেয়ের সঙ্গে ওই যুবক বা তাঁর পরিবারের কেউ যাতে যোগাযোগ করতে না পারেন, সেই মতো কড়া নির্দেশ দেন কনের বাবা। কোনও মতেই ওই পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। স্বভাবতই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। 


এব্যাপারে নিজেদের মতামত জানাতে দেরি করেননি নেটিজেনরা। কেউ কেউ জানান, কনের বাবা একেবারে ঠিক কাজ করেছেন। এখন কড়া সিদ্ধান্ত না নিলে, ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে হতো। আবার উল্টো অবস্থান নিতেও দেখা যায়া অনেককে। তাঁদের মতে ‘চোলি কে পিছে’ বাজলে না নাচাই অস্বাভাবিক। নিজের বিয়েতে নাচবেন না-ই বা কেন, প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। 


মণ্ডপে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। গতবছর উত্তরপ্রদেশের চন্দৌলিতে এক যুবক নিজের বিয়ে নিজেই ভেঙে দেন। খাবার পরিবেশনে দেরি হওয়ায় তিতিবিরক্ত হয়ে তিনি বিয়ে ভেঙে দেন বলে জানা যায়। পরদিন আবার নিজের তুতো বোনকে বিয়ে করেন তিনি সেবার কনের পরিবারের লোকজনের তরফে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা কর হয়। বিয়ের আয়োজন করতে ৭ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। সেই টাকা ওই যুবককে দিতে হবে বলে দাবি জানান তাঁরা।


কিন্তু দিল্লির ঘটনা বলে যেটি সামনে এসেছে, সেটি সত্য ঘটনা নয় বলে জানা গিয়েছে। খবরের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, সেটি একটি বিজ্ঞানপনের অংশ। সংবাদপত্রে প্রকাশিত OTT প্ল্যাটফর্মের বিজ্ঞাপনের ঠিক পাশে এই ঘটনার বিবরণ হিসেবে বিষয়টি প্রথমে ছড়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রতিবেদনের আকারেই ঘটনার বিবরণ লেখা ছিল। অনেকেই তাই বিষয়টিকে সত্য বলে ধরে নেন। সাধারণ ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের অংশ হয় যদি কোনও লেখা, তাতে ডিসক্লেমার থাকে, যা দেখে সেটিকে বিজ্ঞাপন বলে বোঝা যায়। এক্ষেত্রে সংবাদপত্রের যে লেখা ঘিরে শোরগোল পড়ে যায়, সেটিতে ক্লাস্টার ফর্ম্যাট ব্যবহার করা হয়েছে, যেভাবে মার্জিন সহ কিছু খবর প্রকাশিত হয়। OTT-র বিজ্ঞাপন এবং বিয়েতে হাঙ্গামার ওই বিবরণ একটিই মার্জিনের ভিতর রাখা হয়েছিল। ফলে সেটিকে খবর ভেবে ভুল করেন অনেকে। 


পাশাপাশি, সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে শিরোনামে সাধারণত দাঁড়ি বা ফুলস্টপ থাকে না। এক্ষেত্রে কিন্তু উল্টোটি দেখা যায়। পাশাপাশি, প্রতিবেদকের না এবং কোন জায়গা থেকে সেটি পেশ করা হয়েছে, তারও উল্লেখ ছিল না। The Pioneer সংবাদপত্রের খবর বলে যে ছবি ভাইরাল হয়, সেটিতে ২০২৫ সালের ৩০ জানুয়ারির দিন উল্লেখ রয়েছে। অথচ ঘটনাটি ১৮ জানুয়ারি ঘটে বলে জানানো হয়। দু'সপ্তাহ এমন ঘটনা কেন ছাপা হবে, তাও সন্দেহের উদ্রেক করে। তাই শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা করে জানা যায় ওই ঘটনা বাস্তবে ঘটেনি। আরও বিশদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেটি বিজ্ঞাপনেরই অংশ।