নির্বাচনের সময় প্রায়ই নানা খবর শোনা যায় চারিদিকেই। শাড়ি থেকে নগদ টাকা বিতরণের নানা ধরনের খবর আসে প্রকাশ্যে। কিন্তু ভোটারদের আকৃষ্ট করতে এবার বিনামূল্যে মোবাইল রিচার্জ দিচ্ছেন নেতারা? এই অফার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাহুল গান্ধীর মত নেতারা? এই খবরে হইচই পড়ে গিয়েছে সর্বত্র। সোশাল মিডিয়া এবং হোয়াটসঅ্যাপে এমনই কিছু খবর প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এর কি আদৌ কোনও সত্যতা রয়েছে? 


কী খবর ছড়াচ্ছে সোশাল মিডিয়ায়? 


যে খবরটি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে সেখানে দেখা যাচ্ছে পিএম নরেন্দ্র মোদি এবং রাহুল গান্ধী দেশের জনগণকে ৮৪ দিনের বৈধতার সঙ্গে ৭১৯ টাকার একটি ফ্রি রিচার্জ অফার করছেন। যাতে আরও বেশি সংখ্যক ভোট তাঁরা পান। এই পোস্টগুলিতে দুটি ভিন্ন ওয়েবসাইএর লিঙ্কও রয়েছে। বলা হচ্ছে, এই লিঙ্কগুলিতে ক্লিক করলে ফ্রি রিচার্জ করা যাবে। 


ঠিক কী লেখা হচ্ছে ওই বার্তায়? 


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামে একটি ভাইরাল বার্তায় লেখা হচ্ছে, 'প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সমস্ত ভারতীয় ইউজারকে ৮৪ দিনের জন্য ৭১৯ টাকার বিনামূল্যে রিচার্জ দিচ্ছেন যাতে আরও বেশি সংখ্যক লোক ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজেপিকে ভোট দেয়। এর ফলে ফের সরকার গঠন করতে পারবে বিজেপি। এই ফ্রি রিচার্জ করতে নিচে দেওয়া লিঙ্কে ক্লিক করুন।' 




রাহুল গান্ধীর নামেও এই একই ধরনের বার্তা শেয়ার করা হচ্ছে সোশাল মিডিয়ায়। 


কী আসল সত্যি? 


এই খবরটিকে ভুয়ো বলেই দাবি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিংবা রাহুল গান্ধী কেউ এই ধরনের ফ্রি রিচার্জ দিচ্ছেন না। দুই নেতার নামে ফ্রি রিচার্জের ওয়েবসাইটগুলো একদমই ভুয়ো। এই ধরনের ভুয়ো ওয়েবসাইট ব্যবহার করে জালিয়াতি করার কাজ করা হয়ে থাকে। ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে অন্যত্র ব্যবহারও করা হয় অনেক সময়। 


মোদির পোস্টে বলা হয়েছে 'audreparily.com ওয়েবসাইটের URLটি স্পষ্ট করে দেয় যে এটি কোনও সরকারি ওয়েবসাইট নয়, কারণ সরকারি ওয়েবসাইটে সাধারণত 'gov.in' এবং 'nic.in' লেখা থাকে। 


পিএম মোদির নামে শেয়ার করা  ফ্রি রিচার্জ লিঙ্কে ক্লিক করলে মোদির ছবির সঙ্গে আরেকটি পেজ খোলে, যেখানে লেখা আছে, “প্রধানমন্ত্রী ফ্রি রিচার্জ স্কিম”। 




অর্থাৎ এর মাধ্যমে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে এটি একটি সরকারি স্কিম। তবে বাস্তবতা হল সরকার এ ধরনের কোনও পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি। প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো, ভারত সরকারের একটি সংস্থা, প্রধানমন্ত্রী বা ভারত সরকারের নামে বিনামূল্যে রিচার্জ অফার করে এমন ওয়েবসাইটগুলিতে বিশ্বাস না করার জন্য বেশ কয়েকবার সতর্কতা জারি করেছে ।






কী কী লেখা হচ্ছে ওই ভুয়ো ওয়েবসাইটগুলিতে? 


পিএম মোদির নামে ভাইরাল হওয়া লিঙ্কটিতে ক্লিক করে, যে পেজটি খুলবে তাতে "ফ্রি রিচার্জ পান" লেখা রয়েছে। এটিতে ক্লিক করার পরে, আপনাকে "অ্যাক্টিভেট ফ্রি রিচার্জ"-এ আপনার ফোন নম্বর এবং টেলিকম অপারেটরের নাম দিতে বলা হবে। এছাড়াও, এটিও বলা হয়েছে যে ফ্রি রিচার্জ পেতে, এই বার্তাটি ১০ ​​জন হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীকে বা যে কোনও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠাতে হবে।


প্রতারকরা প্রায়ই এই ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে, তাই এই ধরনের ওয়েবসাইটে ব্যক্তিগত তথ্য প্রবেশ করা উচিত নয়। 


লক্ষণীয় বিষয় হল যে আপনি যদি আপনার ফোন নম্বরের জায়গায় যেকোন নম্বর লিখলেও যেমন “123456789”, সিস্টেম এটিকে ভুল বলে মনে করে না এবং আপনাকে পরবর্তী পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে বলে।


রাহুল গান্ধীর নামেও চলছে এই জালিয়াতির কাজ


রাহুল গান্ধীর নামে শেয়ার করা ওয়েবসাইট লিঙ্কে ক্লিক করে "ফ্রি রিচার্জ" পেতে হোয়াটসঅ্যাপে ১০ জনকে বার্তা পাঠাতে বলা হয়েছে।


মজার বিষয় হল এখানে "রিচার্জ" পেজে রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদরার ছবি সহ একটি পোস্টারে "সবকা সাথ, সবকা বিকাশ" লেখা আছে, যা বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্লোগান।




এই বার্তায় দেওয়া লিঙ্কে ক্লিক করলে দেখা গিয়েছে যে “Downloadfilmyzilla” নামে একটি ওয়েবসাইটে চলচ্চিত্র সম্পর্কিত রিপোর্ট রয়েছে।




দুটি ফেক-বার্তার মধ্যে রয়েছে যোগসূত্র? 


মোদি এবং রাহুল গান্ধীর নাম করে পাঠানো বার্তায় বেশ কিছু কমন বিষয় লক্ষ্য করা গিয়েছে। এর থেকে মনে করা হয়েছে, কিছু যোগাযোগ থাকলেও থাকতে পারে। 


এই রিচার্জ স্কিম থেকে উপকৃত হয়েছেন এমন বেশ কিছু কমেন্ট ফেসবুকেও করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে ওই দুই পেজের ইউজাররা একই। ফলে সেখান থেকে মনে করা হচ্ছে কিছু যোগাযোগ থাকতে পারে। 






রাজস্থানের কোনও এলাকার সঙ্গে যোগ? 



গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল দুটি ওয়েবসাইটই রাজস্থানের সঙ্গে কোনওভাবে যুক্ত, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মোদির নামে শেয়ার করা “https://audreyparily.com/BJPi2024-Recharge/id=byIS60F3” লিঙ্কে ক্লিক করলে আরেকটি ওয়েবসাইট খুলবে – “https://mahirfacts.com/Drt/”। "মাহিরফ্যাক্টস" নামে একটি ওয়েবসাইট পাওয়া গিয়েছে, যেখানে অনলাইনে কীভাবে টাকা উপার্জন করা যায়, চলচ্চিত্র পর্যালোচনা, নিয়োগ ইত্যাদি সম্পর্কিত কিছু রিপোর্ট রয়েছে। এর 'অবউট সেকশন'- এ লেখা আছে যে এটি রাজস্থানের বাসিন্দা মাহির খান নামে এক ব্যক্তি পরিচালনা করেন। 


যখন 'Godaddy Whois' নামে একটি টুলের সাহায্যে রাহুল গান্ধীর নামে শেয়ার করা 'probiv.in' ওয়েবসাইটটি তদন্ত করা হয় , তখন জানা যায় এটি রাজস্থান জেলা থেকে রেজিস্টার করা হয়েছে।




মনে করা হচ্ছে রাজস্থানে থাকা মাহির খান এই ভুয়ো ওয়েবসাইটগুলি পরিচালনা করছেন। তবে এটা স্পষ্ট যে এই ভাইরাল বার্তার কোনও সত্যতা নেই। আজ তকের তরফে এই ধরনের ফ্রি রিচার্জের সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। 


 


ডিসক্লেমার : এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়া টুডে এবং শক্তি কালেক্টিভের অংশ হিসেবে প্রতিবেদনটির অনুবাদ করেছে এবিপি লাইভ বাংলা। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে