দাবিটা কী?
৮ মে তেলাঙ্গানার করিমনগরে নির্বাচনী জনসভা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi) দাবি করেছিলেন, লোকসভা নির্বাচনের (Loksabha Elections 2024) দিন ঘোষণা হওয়ার পর থেকে শিল্পপতি গৌতম আদানি (Gautam Adani) ও মুকেশ আম্বানিকে (Mukesh Ambani) নিয়ে কথা বলা আচমকা বন্ধ করে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী (Congress leader Rahul Gandhi)। তিনি এই দাবিও করেন যে ওই শিল্পপতিদের থেকে টাকা নিয়েই মুখ বন্ধ করেছে কংগ্রেস।
ওই সভার একটি ভিডিওতে মোদিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, বন্ধুরা, গত পাঁচ বছর ধরে আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন যে কংগ্রেসের রাজা (পড়ুন রাহুল গান্ধী) ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই একটি মন্ত্র জপ করছিলেন। কিন্তু, রাফালে ইস্যু চাপা পড়ে যাওয়ার থেকে তিনি ফের নতুন একটা মন্ত্র জপ করতে শুরু করেছেন। কয়েক বছর ধরেই তিনি শিল্পপতি, শিল্পপতি, শিল্পপতি এই বিষয়টিই একনাগাড়ে জপ করে যাচ্ছিলেন। তারপর আস্তে আস্তে তিনি বলতে শুরু করেন, আম্বানি-আদানি, আম্বানি-আদানি, আম্বানি-আদানি। কিন্তু, যেই নির্বাচনের দিন ঘোষণা হল, তিনি আম্বানি-আদানিকে অপমান করা বন্ধ করে দিলেন।
(প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য শুনুন এই ইউটিউব ভিডিওর ৩৯.০০-৪১.২৪ অংশে)
বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এই বক্তব্যের ভিডিও একই দাবির সঙ্গে শেয়ার করা হচ্ছে। আপনারা সেগুলি দেখতে পাবেন এখানে, এখানে এবং এখানে।
যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এই দাবি ভিত্তিহীন। লজিক্যাল ফ্য়াক্টসের তরফে ১৭ মার্চ থেকে ৮ মে পর্যন্ত রাহুল গান্ধীর নির্বাচনী জনসভায় রাখা বক্তব্যগুলি খতিয়ে দেখা হয়। তাতে লক্ষ্য করা গেছে, রাহুল গান্ধী অন্তত ২৫টি জনসভায় আম্বানি ও আদানির নাম নিয়েছেন।
আমরা কী দেখতে পেলাম?
লজিক্যাল ফ্যাক্টসের তরফে ১৭ মার্চ থেকে ৮ মে পর্যন্ত রাহুল গান্ধীর নির্বাচনী জনসভায় দেওয়া বক্তব্যগুলির টানস্ক্রিপ্ট ও ভিডিওগুলি পরীক্ষা করে দেখা হয়। নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়েছিল ১৬ মার্চ। এই ভিডিও ও টানস্ক্রিপ্টগুলি সবাই দেখতে পাবেন কংগ্রেসের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে। তাতে দেখা যাবে, শুধুমাত্র মে মাসেই নির্বাচনী জনসভার ৬টি বক্তব্যে ওই দুই শিল্পপতির নাম নিয়েছেন রাহুল গান্ধী।
৬ মে ঝাড়খণ্ডের সিংভূমে একটি জনসভাতেই রাহুল গান্ধী আদানি ও আম্বানিকে নিয়ে বলেন, "আদানি একটা নাম। আপনারা জানেন, তাঁর আপনাদের জল, জঙ্গল এবং জমির দিকে নজর রয়েছে। আর নরেন্দ্র মোদি তাঁর জন্য কাজ করেন। আদানিজি এবং নরেন্দ্র মোদিজি এই বইটাকে (পড়ুন সংবিধান) শেষ করতে চায়। আমরা এই বইটি ছাড়া কোনওদিন তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারব না।" এই অংশটি দেখা যাবে ভিডিওটির ৩.০৯ থেকে ৩.৪০ মিনিট পর্যন্ত। এখানে আর্কাইভটা দেখুন।
সাত মে মধ্যপ্রদেশের খরগোনেতে নির্বাচনী জনসভা করতে গিয়ে রাহুল গান্ধী বলেন, "যদি ভারতের সংবিধান না থাকে তাহলে দেশের সমস্ত অধিকার ও জঙ্গলগুলি আদানির মতো "কোটিপতিদের" সমপর্ণ করে দেওয়া হবে।" আদানিকে নিয়ে তাঁর বক্তব্যটি এই ভিডিওতে শুনতে পাওয়া যাবে ১৪.৩৫ মিনিট থেকে ১৫.৫৫ মিনিটের মধ্যে। এখানে আর্কাইভে দেখতে পাবেন।
একইদিনে মধ্যপ্রদেশের রতলাম এলাকায় জনসভা করতে গিয়েও মুকেশ আম্বানির ছেলের বিয়েতে মিডিয়া কভারেজ নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। তাঁর মন্তব্যটি শুনতে পাওয়া যাবে কংগ্রেসের ইউটিউব চ্যানেলে শেয়ার হওয়ার ভিডিওর ৩.০০ মিনিট থেকে ৩.২০ মিনিটের মধ্যে। এখানে আর্কাইভে দেখতে পাবেন।
এছাড়া মার্চ ও এপ্রিল মাসের একাধিক নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে আদানি ও আম্বানিকে সাহায্য করার জন্য বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগেন রাহুল গান্ধী।
এপ্রিল মাসের ২৯ তারিখ ছত্তিশগড়ের বিলাসপুরে জনসভা করতে গিয়ে রাহুল গান্ধী মন্তব্য করেন, আমি যেকোনও বিজেপি নেতাকে চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই তাঁরা বলুন কোনও পাবলিক সেক্টর ইউনিটের প্রাইভেটাইজেশন করবেন না, বলুন আমরা কন্ট্রাকটিং সিস্টেম বন্ধ করে দেব, বলুন আমরা কৃষকদের ঋণ মকুব করে দেব। ওনারা এগুলো বলতে পারবেন না। কারণ ওদের আদর্শ আম্বেদকরজি, নেহেরুজি বা গান্ধীজির মতো নয়। ওনাদের আদর্শ হল নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে সাহায্য করা। ওনাদের আদর্শ হল ভারতের সমস্ত সম্পদ, জমি, জঙ্গল ও জল আদানি ও আম্বানির মতো লোকেদের হাতে তুলে দেওয়া। মন্তব্যটি শুনতে পাওয়া যাবে এই ভিডিওর ৬.৩৩ থেকে ৭.২২ মিনিটের মধ্যে। আর্কাইভ দেখুন এখানে।
এছাড়া আদানি ও আম্বানির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ জানিয়ে একাধিক বক্তব্য তিনি রেখেছেন গুজরাটে (এই ভিডিওর ২.১৮ থেকে ৩.৪৪ মিনিটের মধ্যে) কর্নাটকে (৪.০০ থেকে ৪.৪০) মহারাষ্ট্র (২২.৪০-২৪.৩৭), উত্তরপ্রদেশ (১.১৬-৪.০২), বিহার (২.০৩-৩.০৫), ওড়িশা (৫.১৭-৬.২০) এবং কেন্দ্রশাসিত দমন ও দিউ (৮.৫৭-৯.৫৬)-এ জনসভা করতে গিয়ে। রাহুল গান্ধী বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, সমাজের পিছিয়ে পড়া জাতি, গরিব ও আদিবাসীদের লুঠ করে রাস্তা, উইন্ড পাওয়ার, বিদ্যুৎ, অস্ত্র উৎপাদন এবং সমস্ত কিছুর কন্ট্রাক্ট আদানি ও আম্বানির মতো ২০ থেকে ২৫ জন মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।
এই সমস্ত প্রমাণগুলি এটাই প্রতিষ্ঠিত করে যে মোদি যা দাবি করছেন সেই অনুযায়ী রাহুল গান্ধী দুই ব্যবসায়ীর নামে কথা বলা বন্ধ করেনি।
রায়
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তাঁর লোকসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর নির্বাচনী জনসভাগুলিতে ক্রমাগত আম্বানি ও আদানি সম্পর্কে মন্তব্য করে গেছেন। তাই আমরা এই দাবিটিকে মিথ্যা বলে চিহ্নিত করছি।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: Fact Check: ভোট পেতে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করছে বিজেপি? ভাইরাল ভিডিওর আসল সত্যি কী?
ডিসক্লেমার : এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে Logically Facts এবং শক্তি কালেক্টিভের (PM Modi’s claim about Rahul Gandhi’s ‘sudden silence on Adani and Ambani’ is false) অংশ হিসেবে প্রতিবেদনটির অনুবাদ করেছে এবিপি লাইভ বাংলা।