নয়াদিল্লি: শেষ পর্যন্ত ভারত আঞ্চলিক সার্বিক অর্থনৈতিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) চুক্তিতে স্বাক্ষর করা থেকে পিছিয়ে আসায় এতে নিজেদের জয় দেখছে কংগ্রেস। কেন্দ্রের বিজেপি-এনডিএ সরকার দেশের কৃষক, দুগ্ধপণ্য উত্পাদনকারী, মত্স্যজীবী, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ বিকিয়ে দেওয়া থেকে বিরত রইল বলে অভিমত জানিয়ে তাদের প্রবল বিরোধিতার চাপেই এটা সুনিশ্চিত হয়েছে, দাবি কংগ্রেসের। দলের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেছেন, জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে লড়ছেন, এমন সবার জয় এটা। বিজেপি, শ্রী অমিত শাহ যখন আজ মিথ্যা কৃতিত্ব দাবি করছেন, তখন মনে করিয়ে দিই, কংগ্রেসের সক্রিয় বিরোধিতার জন্যই পিছু হটতে তাঁরা বাধ্য হলেন। বিজেপি সরকার আরসিইপি-তে সই করতে ‘অতিরিক্ত উত্সাহী’ হয়ে উঠেছিল বলেও কটাক্ষ করেন তিনি।
সরকারি সূত্রের দাবি, আলাপ-আলোচনার রাস্তায় নয়াদিল্লির উদ্বেগ-উত্কন্ঠার নিরসন হয়নি বলেই সোমবার আরসিইপি-তে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। এতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, বিশ্বব্যাপী ভারতের ক্রমবর্ধমান মর্যাদারই প্রতিফলন ঘটেছে। ভারতের সিদ্ধান্তে দেশের চাষি, ডেয়ারি ক্ষেত্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের বিরাট উপকার হবে। বিদেশমন্ত্রক বলেছে, কিছু অমীমাংসিত সমস্যার জন্যই ভারত আরসিইপি-তে ঢোকেনি এবং বিশ্বাস করে যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে আরসিইপি-তে সামিল হওয়া ঠিক হবে না। জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত।


সুরজেওয়ালা ট্যুইটও করেন যে, ব্যাপক বেকারি, ডুবন্ত অর্থনীতি ও বিজেপি সরকারের ভুল পথে অর্থনীতি পরিচালনার জেরে উদ্ভূত গভীর কৃষি সঙ্কটের মধ্যে আরসিইপি-তে সই করা বিরাট বিপর্যয় ডেকে আনত। কংগ্রেস ও রাহুল গাঁধীর প্রবল বিরোধিতায় এটা সুনিশ্চিত হয়েছে যে, বিজেপি সরকার চাষি, দুগ্ধজাত সামগ্রী উত্পাদনকারী, মত্স্যজীবী, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার বেদিতে বলিদান করা থেকে বিরত থাকবে। কংগ্রেস ও কৃষক স্বার্থ রক্ষাকারী গোষ্ঠীগুলির চাপে পিছু হটে আমাদের সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করা গিয়েছে।
মোদি সরকার সত্যিকারের উদ্বেগ, জাতীয় স্বার্থ নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে আরসিইপি চুক্তিতে সই করতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল বলে অভিযোগ করে সুরজেওয়ালা বলেন, কৃষক স্বার্থরক্ষায়, ক্ষু্দ্র ও মাঝারি শিল্পমহলের উদ্বেগ বা জাতীয় সুরক্ষার ব্যাপারে কোনও গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। চিনা পণ্যের ছড়াছড়ি নিয়ে নিয়ম সংক্রান্ত প্রতারণা, দেশীয় শিল্পের ক্ষতি করে আমদানি বৃদ্ধি রুখতে রক্ষাকবচের অভাব, পরিষেবা ও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বাজারে পা রাখার গ্যারান্টি না থাকা-এসব নিয়ে ভারতীয় কৃষক ও ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্পমহলের প্রকৃত উদ্বেগ রয়েছে, যার সমাধান হয়নি।


পাশাপাশি কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গাঁধীও ট্যুইট করেছেন, বিজেপি সরকার সাড়ম্বরে আরসিইপি চুক্তিতে সই করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, কিন্তু কৃষকদের সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিবাদে সিদ্ধান্ত রদ করেছে। কৃষকরা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে যে, তাদের কঠোর শ্রম ও জাতীয় স্বার্থকে বিদেশি কোম্পানি, অন্য দেশের কাছে বিকিয়ে দেওয়া যাবে না। বিজেপি সরকার বাধ্য হয়েছে আরসিইপি চুক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত রদ রাখতে। সব কৃষক ভাই-বোনকে অভিনন্দন। কংগ্রেস কর্মীদেরও ধন্যবাদ যাঁরা এ ব্যাপারে কৃষকদের বিপুল সমর্থন জানিয়েছেন।