সাধারণত চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় শরীরে যে কোনও সংক্রমণের প্রতি অনিয়ন্ত্রিত প্রতিক্রিয়ার কারণে সৃষ্ট একটি প্রাণঘাতী অঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়ার নামই সেপসিস। পরিসংখ্যান অনুসারে বিশ্বের মধ্যে প্রতি ৫ জনে একজনের মৃত্যু হচ্ছে এই সেপসিসের কারণে। সমস্ত বয়সের মানুষকেই প্রভাবিত করতে পারে এই সেপসিস। ভারতে প্রতি বছর ১.১৫ লক্ষ রোগী সেপসিসে আক্রান্ত হন যার মধ্যে ৪০ শতাংশ আবার শিশু যাদের বয়স ৫ বছরের কম।
গতকাল শনিবার আন্তর্জাতিক সেপসিস দিবসে আয়োজিত এক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতায় এই তথ্য জানান লক্ষ্ণৌয়ের কিং জর্জ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পালমোনারি ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের প্রধান অধ্যাপক বেদ প্রকাশ। তিনি আরও বলেন যে এই রোগ প্রতি বছর ভারতের লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। আর এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। এই রোগ থেকে মুক্তির প্রধান উপায় প্রাথমিক রোগ শনাক্তকরণ আর সময়মত চিকিৎসা শুরু করা। অ্যান্টিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার সেপসিসের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। তাই তিনি সঠিক অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেন।
তাঁর কথায়, মানুষ প্রায়ই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক এবং পেইনকিলার জাতীয় ওষুধ খেয়ে থাকেন যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়। অ্যান্টিবায়োটিক শুধুমাত্র একজন প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের নির্দেশেই সেবন করা দরকার, আর ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ করা দরকার। তাঁর মতে, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের ফলে শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে।
যখন শরীরে সেপসিস আক্রমণ করে তখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার চেষ্টা করার সময় তাঁর নিজস্ব কলা-কোশ আর অঙ্গগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সেপসিসের জন্য তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন কারণ এটির কারণে অঙ্গহানিও হতে পারে, এমনকী মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
এই বছর ফেব্রুয়ারি মাসেই ল্যান্সেটের জার্নালে একটি সমীক্ষা প্রকাশ হয়েছিল যেখানে দেশের ৫টি জেলা হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে সেপসিসের ঝুঁকি বাড়ছে। এটি এমন এক মারণ রোগ যার কারণে শিশুর (Sepsis) প্রাণনাশও হতে পারে। মূলত সংক্রমণ থেকেই এই রোগ বাড়ে। গবেষণায় উঠে এসেছে ৬৬০০টিরও বেশি সদ্যোজাত শিশুর মধ্যে হাসপাতাল থেকে সেপসিস সংক্রমণের শিকার ০.৬ থেকে ১০ শতাংশ শিশু। ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ জার্নালে এই পর্যবেক্ষণগুলি প্রকাশ পেয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২১-এর মধ্যে পাঁচটি জেলা হাসপাতালে এই পরীক্ষা চালানো হয়। সদ্যোজাতদের থেকে রক্তের নমুনা নেওয়া হয়, যার মধ্যে ৩.২ শতাংশ কালচার পজিটিভ সেপসিস নির্ণীত হয়।