অপরিচ্ছন্নতা মহিলাদের সংক্রমণের অন্যতম প্রধান কারণ। যা ভবিষ্যতে জটিল রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায়। এর নিরিখে মহিলাদের মধ্যে যে দুটি সমস্যা সর্বাধিক লক্ষ্য করা যায়, তার মধ্যে রয়েছে পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ এবং ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন। তবে শুধু গ্রামাঞ্চলেই নয়, শহরেও যে মহিলারা খুব বেশি সতর্ক তেমন নয়। 


পরিসংখ্যান বলছে, মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ মহিলা সঠিক পদ্ধতিতে নিজেদের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখেন। তবে বর্ষাকালে ব্যাকটেরিয়াজনিত সমস্যাগুলো আরও খারাপ আকার নেয়। যার মধ্যে 'মোস্ট কমন ইনফেকশন'-এর তালিকায় রয়েছে পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ (পিআইডি) এবং ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই)


পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ এবং ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ পারভিন বানু (Associate professor, Calcutta National Medical College)





কী এই পেলভিক ইনফ্লামেট


প্রস্রাবদ্বার, জননদ্বার, পায়ুদ্বার নিয়ে নারীদেহ এমনভাবে তৈরি তাতে জননাঙ্গ সবথেকে বেশি সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। কাজেই জননদ্বার দিয়েই পেলভিক ইনফ্লেমটরি ডিজিজ শরীরে প্রবেশ করে। যোনি থেকে ব্যাকটেরিয়া ক্রমশ ওপরের প্রজনন অঙ্গগুলিতে ছড়িয়ে গিয়ে সংক্রমণ ঘটায়।


দীর্ঘক্ষণ কোমর জলে ডুবে থাকা, ভিজেকাপড় পরে থাকা, অপরিচ্ছন্ন থাকা ইত্যাদি কারণে এই ধরনের সমস্য়া তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বয়ঃসন্ধি পর থেকে মেনোপজ হওয়ার আগের অবস্থায় সব মহিলারাদের মধ্যেই এই সংক্রমণ দেখা যেতে পারে।


পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ-এর উপসর্গ কী?



  • সংক্রমিতের তলপেটে ব্যথা

  • জ্বর আসা

  • জননদ্বার থেকে দুর্গন্ধযুক্ত সাদা স্রাব বের হওয়া

  • যৌনসঙ্গমের সময় সমস্যা

  • তবে অবহেলায় পেলভিক ইনফ্লেমটরি ডিজিজের দীর্ঘমেয়াদী ফল ভয়াবহ হতে পারে। বন্ধ্যাত্ব এমনকি ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। পাশাপাশি তৈরি করে

  • একাধিক আনুষঙ্গিক সমস্যাও।





পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজের পরেই যে সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন তা হল ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন। বিশেষজ্ঞদের কথায় কোনও মরসুম বিশেষ করে প্রভাব না ফেললেও জল কম খাওয়ার কারণে ইউটিআই-এর সমস্যা বাড়ে। তবে ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন যত তাড়াতাড়ি ছড়ায়, সঠিক চিকিৎসায় তা দ্রুত কমেও যায়।


কী কারণে সংক্রমণ



  • সারাদিন জল কম খাওয়া

  • কমন টয়লেট ব্যবহার করা

  • দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখা

  • যৌনমিলনে পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখা ইত্যাদি কারণে এই সংক্রমণ ছড়ায়



উপসর্গ কী



  • প্রস্রাবে সময় জ্বালা ও ব্যথা।

  • হঠাৎ প্রস্রাবের বেশি চাপ বা প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা।

  • বারবার প্রস্রাব পাওয়া এবং প্রদাহের কারণে অস্বস্তি।

  • মূত্রনালী থেকে তল পেট পর্যন্ত ব্য়থা।

  • ব্যাকটেরিয়া লোড বেশি হলে জ্বর এবং কাঁপুনি।


সমাধান কী?



  • এক জন ৫০ থেকে ৭০ কেজি ওজনের মহিলার দিনে অন্তত ৩ থেকে ৪ লিটার জল খাওয়া উচিৎ।

  • সমস্যা বাড়লে ইচ্ছে মতো বাজার চলতি ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

  • এ ক্ষেত্রে সদ্য বিবাহিতাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। সে কারণে প্রতিবার সহবাসের পর প্রাইভেট পার্ট পরিষ্কার করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।


সবমিলিয়ে অপরিচ্ছন্নতার ওপরই নির্ভর করছে সংক্রমণের উপদ্রব। তাই সামান্য কিছু সাবধানতা অবলম্বন করেই পরিচ্ছন্নতা বজার রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে বিশেষ কিছু সমস্যার ক্ষেত্রে ডাঃ পারভিন বানুর পরামর্শ, 'কোমরের অংশ খানিকটা ডুবে থাকে এমন একটা গামলা নিয়ে তা একটি বসার টুলের ওপর রাখুন। এর পর তাতে ইষদুষ্ণ গরম জল এবং বিটাডিন দিয়ে খানিক্ষণ বসে থাকলে সংক্রমণ কিছুটা কমাতে সাহায্য করে। তবে এই গামলা অন্য কোনও কাজে ব্যবহার করা যাবে না। তাতে সংক্রমণ ছড়ানোর আশাঙ্কা থাকে।'


ডাঃ পারভিন বানুর কথায়, 'আমরা ফেসওয়াসে মুখ পরিষ্কার করার সময়ে নাকের ভিতরে আঙুল ঢুকিয়ে যেমন পরিষ্কার করি না, প্রাইভেট পার্ট পরিষ্কারের সময়েও সেই দিকটি নজরে রাখতে হবে। মৃদু সাবান বা জল দিয়ে ওপরিভাগ পরিষ্কার করলেই সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যায়।


আরও পরামর্শ
* বারবার ন্যাপকিন বদলাতে হবে। ঋতুকালে যাঁরা কাপড় ব্যবহার করেন, তাঁরা অবশ্যই  কাপড় ভাল করে কেচে সেটা উজ্জ্বল সূর্যালোকে শুকিয়ে নিন।  


 




সংক্রমণে আর কী কী নিয়ম মানা জরুরি?


ইন্টিমেট হাইজিন সংক্রান্ত পরামর্শ দিয়েছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ কস্তুরী ভৌমিক  (DGO MRCOG.CONSULTANT OBS AND GYNAE)।




 



  • বাজার চলতি ইন্টিমেট ওয়াশ ব্যবহারে বিশেষ কোনও হেরফের হয় না। প্রাইভেট পার্ট জল দিয়ে পরিষ্কার করলেই যথেষ্ট।

  • রেজার ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। এতে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি।

  • আঙুল ঢুকিয়ে যোনি দ্বারের ভিতর পরিষ্কারের প্রয়োজন নেই।

  • প্রস্বাবের পর জায়গাটি জলে ধুয়ে শুকনো কাপড় দিয়ে হালকা করে মুছে নিয়ে তবেই অন্তর্বাস পরুন।

  • যে কোনও ওষুধ কিনে লাগিয়ে নেওয়া যাবে না। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে তবে ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।

  • বিশেষ সমস্যা ছাড়া বিটাডিন, ডেটল, স্যাভলন ব্যবহার নয়। এতে ওই অংশের চামড়া পুড়ে যেতে পারে।

  • ভ্যাজাইনাল মিউকোসা ভীষণ স্পর্শকাতর। কাজেই নখ, ব্যবহৃত রেজার, কেমিক্যাল ব্য়বহার নয়।