নয়াদিল্লি: ভারতের মতো দেশে শীত আসতে দেরি আছে এখনও। কিন্তু ঠান্ডা দেশগুলিতে রোগভোগ ইতিমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে। ব্রিটেনে এই মুহূর্তে ‘ফ্লুনামি’ দেখা দিয়েছে, অর্থাৎ প্রতিদিন ফ্লুতে আক্রান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ। ইংল্যান্ডেই বাড়াবাড়ির জেরে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২৬০০ রোগী। এর মধ্যে, ১২৫ জন ক্রিটিকাল কেয়ারে রয়েছেন। (Cold and Flu Difference)

Continues below advertisement

বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়াদের মাধ্য়মেই ফ্লু ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানা গিয়েছে। সেখানে ১ সেপ্টেম্বর থেকেই যদিও টিকাকরণ শুরু হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্কেরও টিকা নিতে বলছেন বিজ্ঞানীরা। তবে সর্দিকাশি হওয়া মানেই ফ্লু নয়। তাই দুইয়ের মধ্যে ফারাক বোঝা জরুরি। সাধারণ সর্দিকাশি হয় Rhinoirus থেকে। ফ্লু হয় ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিভিম্ন প্রজাতি থেকে। (Health News)

সাধারণ ঠান্ডা লাগার জন্য দায়ী Rhinovirus. তবে ২০০-র বেশি ভাইরাস রয়েছে, যারা এই ধরনের সংক্রমণ ঘটায়। নাকবন্ধ থাকা, নাক দিয়ে জল পড়া থেকে গলাব্যথা এমন উপসর্গ দেখা দেয়। 

Continues below advertisement

ফ্লু শরীরকে একেবারে কাবু করে ফেলে। হঠাৎ করেই উপসর্গ দেখা দেয়। জটিলতা বাড়তেও পারে। সাধারণ ঠান্ডা লাগলে কাশি, গলা ব্যথা, নাকবন্ধ হয়ে যায় সাধারণত। ফ্লু হলে জ্বরে পুড়ে যায় শরীর, শরীরে যন্ত্রণা হয়, কাঁপুনি লাগে। 

  • সাধারণ ঠান্ডা লাগলে কাশি , গলাব্যথা, নাক দিয়ে জল পড়া, নাকবন্ধ হয়ে থাকা, হাঁচি হতে পারে। মাথার যন্ত্রণা ও জ্বর হতে পারে কখনও কখনও। শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, বমি হবে না। কখনও কখনও খেতে ইচ্ছে না হতে পারে, স্বাদ ও গন্ধ পেতে সমস্যা হয় কিছু ক্ষেত্রে। কখনও কখনও যন্ত্রণা হয় শরীরে, ক্লান্তি আসে।
  • ফ্লু হলে জ্বর কাশি, মাথার যন্ত্রণা, গলাব্যথা, নাক দিয়ে জল পড়া, নাক বন্ধ হওয়ার মতো সব সমস্যাই থাকে। কখনও কখনও হতে পারে হাঁচি। পাশাপাশি, অসম্ভব যন্ত্রণা থাকে শরীরে, ক্লান্তি গ্রাস করে, ডায়রিয়া হয়, বমি পায় ও হয়, খাওয়ায় রুচি থাকে না। কখনও কখনও খাবারে স্বাদ পাওয়া যায় না, গন্ধ যায় না নাকে। শ্বাসকষ্ট হতে পারে কখনও কখনও।
  • আবার কোভিডও হতে পারে। সেক্ষেত্রে জ্বর, কাশি, মাথার যন্ত্রণা, গলাব্যথা, নাকবন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে জল পড়া, স্বাদ ও ঘ্রাণ চলে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়। কখনও কখনও হাঁচি, শরীরে যন্ত্রণা হয়। কখনও কখনও ক্লান্তি আসে, শ্বাসকষ্ট হয়, খিদে পায় না, বমি হয় বা বমি বমি ভাব আসে।

তবে সাধারণ ঠান্ডা লাগা ও ফ্লুর মধ্যে কিছু উপসর্গে মিল রয়েছে, যেমন হাঁচি এবং নাকবন্ধ হয়ে যাওয়া। ফলে রোগ বোঝা দুষ্কর হয়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ঠান্ডা আবহাওয়ায় ঠান্ডা লাগে। অর্থাৎ শীতকালেই ঠান্ডা লাগে সাধারণত। ফ্লু-র ভাইরাস আবার শুষ্ক বাতাসে ভেসে বেড়ায়। তাপমাত্রাও কম হয়। সূর্যালোক গায়ে কম লাগে, যা থেকে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি দেখা যায়। ভিটামিন ডি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য অত্যন্ত জরুরি। রেসপিরেটরি ভাইরাস থেকে রক্ষা করে আমাদের।

শীতকালে অধিকাংশ সময় বাড়িতেই থাকি আমরা। ঘরের মধ্যে হাওয়া চলাচল ভাল হয় না তেমন। সেই কারণে ফ্লু হয়। আবার শীতকালে এদিক ওদিক ঘোরা বেড়ে যায় আমাদের, যা থেকে ঠান্ডা লাগে। এই সময়ও ফ্লুর ভাইরাস ছড়ায়। 

শীতকালে মদ্যপান বেড়ে যায়। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে শরীরের। সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায়। এই সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম দরকার। পর্যাপ্ত পরিমাণ জল খেতে হবে। নাকবন্ধ থাকলে ভেপার নিতে পারেন। গরম জল ও লবণে গার্গল করুন গলাব্যথা হলে।

ফ্লু হয় ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস থেকে। এই সময় পেটের সমস্যাও দেখা দেয়। পরিস্থিতি গুরুতর হলে, নিউমোনিয়াও হয়। ফ্লু হলে ঠান্ডায় কাঁপুনি লাগে, জ্বর, মাথাব্যথা, পেশির যন্ত্রণা হয়। গোটা শরীরে যন্ত্রণা হয় এই সময়ে। শুধুমাত্র নাক বা গলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না উপসর্গ। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস থেকে বমি, জায়রিয়াও হতে পারে।

এই সময় পরিচ্ছন্নতার উপর জোর দেওয়া উচিত। হাত পরিষ্কার  করে ধোয়া, টিস্যু ব্যবহার করা উচিত। সংক্রমিতের সংস্পর্শে না যাওয়াই ভাল। বাড়িতে যেন ভাল ভাবে হাওয়া চলাচল করে। নিজের উপসর্গগুলির উপর নজর রাখতে হবে। গোড়াতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভাল। তবে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে যদি জ্বর থাকে, শ্বাসকষ্ট হয় বা অন্য উপসর্গগুলি বজায় থাকে, অবশ্যই চিকিৎসককে দেখান। নিজে নিজে চিকিৎসা করবেন না।

ডিসক্লেইমার : প্রতিবেদনে উল্লেখিত দাবি, পদ্ধতি পরামর্শস্বরূপ। প্রয়োজনে  অবশ্যই বিশেষজ্ঞ / চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন ও সেইমতো নিয়ম মেনে চলুন।