ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা: শুধু বয়স্কদের মধ্যেই নয়,  অল্পবয়সীদের মধ্যেও বাড়ছে স্মৃতিভ্রংশের প্রবণতা। বাড়ছে অবসাদগ্রস্ত হওয়ার ঘটনাও। এর সঙ্গে কী করোনা আক্রান্ত হওয়ার কোনও যোগ আছে? লং কোভিড নিয়ে নানা রকম তথ্য আজ ইস্তক সামনে এসেছে। কোভিড যে তলে তলে কী কী ক্ষতি করে গিয়েছে, তা প্রকাশ পাচ্ছে ধীরে ধীরে। সাম্প্রতিক কালে অল্পবয়সীদের মধ্যেও বাড়ছে স্মৃতিভ্রংশের প্রবণতা নিয়ে রিসার্চ করেছিলেন চিকিৎসকরা। ICMR-এর সঙ্গে যৌথভাবে উদ্যোগী হয়ে গবেষণা করেছেন কলকাতার বাঙুর ইন্সটিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সেস এবং SSKM হাসপাতালের চিকিৎসক-গবেষকরা। আর তাতেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।


দেশকে ছারখার করে দেওয়া ভাইরাস নীরবে মানুষের বড় ক্ষতি করে গেছে। গবেষণায় তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। গবেষকরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের সঙ্গে এর সরাসরি যোগ আছে। করোনা সংক্রমণের জেরে ফুসফুস, হার্ট বা লিভারে কী কী দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে। কিন্তু  করোনা সংক্রমণের জেরে মস্তিস্ক এবং মস্তিস্কে থাকা স্নায়ুতে দীর্ঘমেয়াদি কী প্রভাব পড়ে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গত এক বছর ধরে, ICMR-এর সঙ্গে যৌথভাবে উদ্যোগী হয়ে, তা নিয়ে গবেষণা করেছেন কলকাতার বাঙুর ইন্সটিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সেস এবং SSKM হাসপাতালের চিকিৎসক-গবেষকরা। যে গবেষণা ঠাঁই পেয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পত্রিকা 'নেচারে'।


বছর দুয়েক আগে, করোনা আক্রান্ত হয়ে বেলেঘাটা আইডি, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ বা এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, এমন আড়াইশো জনের উপর এই গবেষণা করা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, ৬০ শতাংশের ক্ষেত্রে অবসাদ বেড়েছে। বেড়েছে স্মৃতিভ্রংশের ঘটনাও।গবেষণার পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে অবসাদ, স্মৃতিভ্রংশজনিত রোগ যেমন, পারকিনসন, ডিমেনশিয়া এবং অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।


বাঙুর ইন্সটিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সেস-এর নিউরো মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অতনু বিশ্বাস জানালেন, এই গবেষণা যআঁদের ওপরে হয়েছিল, তাঁদের থেকে পাওয়া ফলাফল বলছে, করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। ১ বছরের পরও থেকে যাচ্ছে প্রভাব। ৮ থেকে ১০ শতাংশ করোনা আক্রান্তরা বেশি করে স্মৃতিভ্রংশ সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন। 


পালমোনারি মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অমিতাভ সেনগুপ্ত জানালেন, করোনাটা আমাদের কাছে নতুন অসুখ। কোভিড কি মানুষের মেধা বা বুদ্ধির ওপর দীর্ঘমেয়াদি কুপ্রভাব ফেলতে পারে, সেটাই দেখা হয়েছে এই গবেষণায়। 


আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পত্রিকা 'নেচারে' উল্লেখ করা হয়েছে এই গবেষণার কথা। কোভিড কালের দুঃস্বপ্ন এখন অতীত। কিন্তু, কোভিডের ভয়াবহ ছোবলের ক্ষত আমরা এখনও বহন করে চলেছি।