কলকাতা: ১৪ দিনে ৫ কেজির মত ওজন কমাতে চান ?
ব্যায়াম না করেই হতে চান তন্বী তনু?
ইমিউনিটি বাড়াতে কী খাবেন ?
গুগল সার্চ করে পড়ে ফেলেছেন একগুচ্ছ আর্টিকল? বদলে ফেলেছেন নিজের খাদ্যতালিকা?
মাছ-ডিম-মাংস-ভাত সব ছেড়ে খেয়ে চলেছেন ফল-জল? নাকি পা দিয়েছেন বিজ্ঞাপনের ফাঁদে? অ্যাডভার্টাইজমেন্ট দেখেই ছুটেছেন কোনও তথাতথিত ডায়েটিশিয়ানের কাছে। আর বাড়ি নিয়ে এসেছেন ৭ দিনে ৭ কেজি ঝরানোর ডায়েট!
ঘোরের মধ্যে বিজ্ঞাপনে দাবি করা ডায়েটিশিয়ানের ঝাঁ চকচকে চেম্বারে তো গেলেন, যাচাই করে দেখেছেন কি তাঁর ডিগ্রিটা কী?


আপনি কি ডিগ্রি যাচাই না করেই ডাক্তার দেখিয়ে ফেলেন, নাকি গুগল সার্চ করে নিজের চিকিৎসা করেন?
তাহলে ডায়েটিশিয়ান নির্বাচনের ক্ষেত্রেই বা বিজ্ঞাপনের চমকে বিশ্বাসী হবেন কেন? জানেন কি, ডায়েট বা ডায়েটিশিয়ানের ক্ষেত্রে একটা ভুল সিদ্ধান্ত কত বড় বিপদ ঘটাতে পারে?
'শহর ছেয়ে গেছে ভুয়ো ডায়েটিশিয়ানে', সতর্ক করছেন ইন্ডিয়ান ডায়েটেটিক অ্যাসোসিয়েশনের  বেঙ্গল চ্যাপ্টারের সদস্যরা। সংস্থার কনভেনর, কোঠারি মেডিক্যাল সেন্টারের ডায়েটেটিকস ও নিউট্রিশনের বিভাগীয় প্রধান মালবিকা দত্ত বললেন, ডায়েট মানেই কিন্তু মোটা থেকে রোগা হওয়া বা রোগা থেকে মোটা হওয়া নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে সম্পূর্ণ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। তাই ভুল ডায়েটে ভেঙে পড়তে পারে শরীর। ধরতে পারে ভয়ঙ্কর রোগে।
বিজ্ঞাপনের চমকে বিভ্রান্ত হয়ে তাই কোনও অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করবেন না। বলছেন অধ্যাপিকা। সেই সঙ্গে তাঁর সতর্কবার্তা, ডায়েটিশিয়ান হতে গেলে প্রথাগত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির প্রয়োজন পড়ে। কোনও ক্রাশ কোর্স করে ডায়েটিশিয়ান হওয়াও যায় না। তাই ডায়েটিশিয়ান নির্বাচনের আগে তাঁর ডিগ্রি সম্পর্কেও খেয়াল রাখার অনুরোধ জানাচ্ছেন তাঁরা।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের অধ্যাপিকা ডঃ বিনতা নায়ক জানান, ভুল ডায়েট নির্বাচন বা 'ভুয়ো' ডায়েটিশিয়ানের পাল্লায় পড়ে অসুখ বিসুখ ডেকে আনেন অনেকেই। সেই সঙ্গে সকলকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, অনেকেই ভালভাবে পড়াশোনা না করেই ডায়েট সংক্রান্ত উপদেশ দেন ও প্রচুর অর্থ উপার্জনও করেন প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে। কিন্তু প্রথাগত ডিগ্রি ছাড়া যেমন ডাক্তার হওয়া যায় না, তেমনই প্রথাগত পড়াশোনা ছাড়া নিজেকে নিউট্রিশনিস্ট বলে দাবি করাও অপরাধ।

অনেকে ভুল ডায়েটের সঙ্গে সঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত এক্সারসাইজও করেন। তাতে শরীর দুর্বল হয়ে যায় ভয়ঙ্কর। কিন্তু আপনি যে ডায়েট করছেন সেই তালিকায় কি সুষম খাদ্য রয়েছে? অতিরিক্ত কার্ব, অতিরিক্ত ফ্যাট বা প্রোটিন কোনওটাই যেমন ভাল নয়, তেমনই এগুলির কোনওটাই খাদ্য তালিকায় না থাকাটাও বিপদ। বলছেন ডায়েটিশিয়ানরা। সঠিক ডায়েট না হলে ওজনও হ্রাস পাবে না, উল্টে অফিস হোক বা বাড়ি, দিনের শেষে অল্পেতেই ক্লান্তি গ্রাস করে নেবে। শুধু তাই নয় নানাবিধ রোগও ধরে যেতে পারে শরীরে।
ভুল ডায়েটিশয়ানের পাল্লায় পড়লে কী ক্ষতি হতে পারে?

-শরীরে হজম ক্ষমতা কমে যায়।

-শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

-লো-কার্ব ডায়েট করলে দেহে শর্করার অভাব হয়। সে ক্ষেত্রে দেহে ফ্যাটি অ্যাসিড ভেঙে কিটোন উৎপাদন হয়। দীর্ঘদিন ‘কিটো ডায়েট’করলে আপনার লিভার আর কিডনির একেবারে বারোটা বাজতে পারে।

-আপনার শরীরে কী সয় আর কী সয় না? কোন কোন রোগ আছে আপনার? কারও শরীর সংক্রান্ত সব তথ্য না জেনে ডায়েট চার্ট দেওয়া ভয়ঙ্কর ক্ষতিকারক।

-একজনের ডায়েট চার্ট অন্যজনের জন্য সঠিক নয়। কারও চার্ট তৈরির আগে দেখে নেওয়া হয়, তাঁর উচ্চতা, ওজন, ব্লাড প্রেশার, সুগার ইত্যাদি। তাঁর জীবনযাত্রা কেমন তা জানাও খুব জরুরি।

-শরীরের শক্তি আসে ক্যালরি থেকে। হঠাৎ করে কম ক্যালরি যুক্ত খাবার খেলে শরীরের পেশির শক্তি ক্ষয় হয়।

-শুধু তাই নয়, দেহে সঠিক মাত্রায় ভিটামিন আর মিনারেলের অভাবে ত্বকের ঔজ্জল্যতা হারিয়ে যায়। কাজের চাপে মাথা কাজ করে না।

- এই প্রকার ডায়েটে অনিয়মিত ঋতুচক্রের সমস্যাও দেখা যেতে পারে।

মনে রাখতে হবে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডায়েটিশিয়ানরা কিন্তু শুধু কী খাবেন, আর কী খাবেন না, তার তালিকা প্রস্তুত করেন না। শরীর তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছে কি না সেদিকেও খেয়াল রাখেন। সেই সঙ্গে মনে রাখেন, ডায়েট যেন স্বাস্থ্যে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না সৃষ্টি করে। কোনও খাদ্যতালিকা দেওয়ার আগে, তাঁরা দেখে নেন, কোনও ব্লাড প্যারামিটারেও সমস্যা আছে কি না।