কলকাতা : ২৬ এর অনন্যা। প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছেন সদ্য। জন্মের তিনদিনের মাথাতেই চিকিৎসক এসে বলেন বিলিরুবিনের মাত্রা বেশি। তাই আলাদা করে ব্লু-লাইটে  রেখে চিকিৎসা করাতে হবে। শুনেই আতঙ্কিত নতুন মা। জন্ডিস বলতেই তো ভয় ! তাও আবার এই একরত্তির। অনন্যার সন্তান কিন্তু ব্যতিক্রমী নয়। সদ্যোজাতর জন্ডিস হওয়ার ঘটনা কিন্তু বেশ কমন ! সদ্যোজাত শিশুর জন্ডিস সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার ( Dr. Agnimita Giri )। 



 কেন জন্ডিসে আক্রান্ত হয় শিশুরা ? 
জন্ডিসের কারণ অনেক। কিন্তু মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। সরাসরি বিলিরুবিন বাড়ার (CONJUGATED BILIRUBIN) কারণে বা পরোক্ষভাবে বিলিরুবিন(UNCONJUGATED BILIRUBIN) বাড়ার কারণে। 
জন্ডিস দুই রকমের হয়। 



  • ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস ( Physiologic jaundice)

    আমাদের শরীরের রক্ত প্রতিনিয়ত ভেঙে গিয়ে নতুন রক্ত তৈরি হয়।  নতুন রক্ত তৈরির পদ্ধতিতে  বর্জ্য পদার্থ রূপে বিলিরুবিন তৈরি হয়। লিভার এই বিলিরুবিন  মল-মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়। কিন্তু শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা যখন স্বাভাবিকের থেকে বেশি হয়ে যায়, কিন্তু ছোট্ট শিশুর লিভার যথেষ্ট পরিমাণ এনজাইম উৎপাদন করতে না পারায় বর্জ্য পদার্থের সঙ্গে বাড়তি বিলিরুবিন শরীর থেকে পুরোটা বের করতে পারে না , তখনই জন্ডিস হয়ে থাকে। শিশুর জন্মের প্রথম সপ্তাহে এই ধরনের জন্ডিস হয়ে থাকে। ১০ দিন পর্যন্ত বাড়ে। তারপরের দুই সপ্তাহে এর মাত্রা হ্রাস পায়। প্রিম্যাচিওর শিশুদের ক্ষেত্রে ২ সপ্তাহ অবধি বিলিরুবিনের মাত্রা বাড়তে পারে। কমতে সময় লাগ ১ মাস। শিশু যত বড় হয়, লিভার থেকে এনজাইমের ক্ষরণ বাড়ে, তখন পাল্লা দিয়ে শরীর থেকে বিলিরুবিন বের করে দিতে পারে। সমস্যা হয় না। এই ধরনের জন্ডিসের ক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রয়োজন সে অর্থে নেই, তবে চিকিৎসকার পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন অবশ্যই আছে। কারণ জন্ডিসের কারণ কী, সেটা সাধারণ মানুষের বোঝার কথা নয় ! 






  • প্যাথোলজিক্যাল জন্ডিস ( Pathological jaundice)

    প্যাথোলজিক্যাল জন্ডিসের কারণ নানারকম।


  •  আর এইচ কমপ্যাচটিবিলিটি (Rh incompatibility) 
    এই ধরনের ঘটনা তখনই ঘটে, যখন মা RH নেগেটিভ । কিন্তু শিশু পজিটিভ। গর্ভাবস্থায়, গর্ভযন্ত্রণার সময়, বা প্রসবের সময় শিশুর পজিটিভ কোষ মায়ের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এই অ্যান্টিবডি তৈরি হতে বেশ কিছুটা সময় লাগে। তাই প্রথম শিশুর ক্ষতি হয় না। কিন্তু দ্বিতীয় শিশুর জন্মের সময় সেই অ্যান্টিবডিগুলি RBC ভেঙে শিশুর শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। 


  • সেপসিস (  Sepsis ) : রক্তে ইনফেকশন । 

  • ব্রেস্ট মিল্ক জন্ডিস ( Breast milk jaundice) : এই ধরনের জন্ডিসের কারণ, শিশুর খাদ্যনালীতে ব্যাকটেরিয়া থাকে না। তাই বিলিরুবিন Gut এ পৌঁছে আবার শরীরে ঢুকে যায় ( enterohepatic circulation)। এর ফলে বিলিরুবিন বৃদ্ধি পায়। ব্রেস্ট মিল্ক এই পদ্ধতিটির সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত।

  • ব্রেস্ট ফিডিং জন্ডিস ( Breast feeding jaundice ) : এই ধরনের জন্ডিসও স্তনপানের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত

  • G6PD ডেফিসিয়েন্সি : শরীরে  glucose-6-phosphate dehydrogenase উৎসেচকের অভাব থেকে এই সমস্যা হতে পারে। 

  • সিকল সেল ডিসিজ ( Sickle cell disease)

  • হেরেডিটারি স্ফেরোসিটোসিস ( Hereditary spherocytosis) 


 


শিশুদের জন্ডিসের চিকিৎসার ধরন (Treatment For Jaundice In Newborn Baby)


সদ্যোজাতের ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস হলে সাধারণত চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না। তবে প্যাথোলজিক্যাল জন্ডিসের ক্ষেত্রে চিকিৎসা দরকার হয়। 



  •  ফটোথেরাপি (Phototherapy) : শিশুকে বিশেষ আলোকরশ্মির তলায় রেখে জন্ডিসের চিকিৎসা করা হয়। 


  • ব্লাড ট্রান্সফিউশন পদ্ধতি (Exchange blood transfusion) : এক্ষেত্রে বাইরে থেকে রক্ত দিয়ে শিশুর শরীরের রক্ত বের করে নেওয়া হয়।




  •  ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন (Intravenous immunoglobulin) : মা ও বাচ্চার রক্তের RHফ্যাক্টর আলাদা হওয়ার কারণে মাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন প্রয়োগ করে চিকিৎসা করা হয়।




  • এছাড়া সরাসরি বিলিরুবিন (CONJUGATED BILIRUBIN ) বাড়ার কারণেও শিশুর জন্ডিস হতে পারে। তার আওতায় পড়ে নিচের বিভাগগুলি। 



  •  বাইলিয়ারি আট্রেশিয়া (Biliary atresia) : পিত্তনালী শুকিয়ে এই বিপদ হতে পারে। চিকিৎসা অস্ত্রোপচার বা  লিভার প্রতিস্থাপন।

  • টর্চ ইনফেকশন ( TORCH Infection )

  • সিস্টিক ফাইব্রোসিস ( Cystic fibrosis)

  • গ্যালাক্টোসেমিয়া ( Galactossemia )