ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, সন্দীপ সরকার ও ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা : হিসেব মতো খাওয়া। জিমে নিয়ম করে শরীরচর্চা। কিন্তু তা সত্ত্বেও মাত্র ২২ বছর বয়সে কেন চলে গেলেন ক্রিকেটার প্রিয়জিৎ ঘোষ, ভাবাচ্ছে সকলকেই। শুধু তো প্রিয়জিৎ নন, ইদানিং এক্কেবারের ২০ বা ৩০ এর কোঠায় দুমদাম হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে আকছার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবার জানাচ্ছে, কোনও অসুখ-বিসুখ ছিল না তাঁদের। বরং অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন ছিলেন তাঁরা। তাহলে কি বেশি ফিটনেস ফ্রিক হতে গিয়ে, কোনও ভুল পথ নিয়ে ফেলেছিলেন তাঁরা  ? এই প্রশ্নটাই ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদের। 

এক্ষেত্রে মৃত ক্রিকেটার প্রিয়জিতের মা পার্বতী ঘোষ দাবি করেছেন, একদম সুস্থই ছিলেন তিনি। 'আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার সঙ্গে যা হয়েছে, আর যেন কোনও মায়ের কোল খালি না হয়। আমি একটা কথাই বলব, তোমরা তাকে ফিরিয়ে এনে দাও। আমার আর কিছু বলার নেই।'  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রেই লুকিয়ে থাকা সমস্যা বোঝা যায় না। 

পরিবার সূত্রে খবর, খেলাধুলোর পাশাপাশি প্রতিদিন শরীরচর্চা করতেন প্রিয়জিৎ। শুক্রবার সকালে বোলপুরের মিশন কম্পাউন্ডের এই জিমে যান তিনি। জিম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শরীরচর্চা শুরুর পরই প্রিয়জিৎ অসুস্থ বোধ করতে থাকেন এবং অজ্ঞান হয়ে যান। বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।  জিমের কর্ণধার ও মৃত খেলোয়াড়ের ছোটবেলার কোচ জানিয়েছেন, কড়া ডায়েটে থাকার ফলে সম্প্রতি শরীর ভেঙে গিয়েছিল প্রিয়জিতের। হচ্ছিল শ্বাসকষ্ট। 

ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ অজয়কৃষ্ণ সরকার বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় , এদের একটা বংশগত সমস্যা থাকে। তার মধ্যে কমন যেটা পাওয়া যায় হাইপারট্রফিক কার্ডিও মায়োপ্যাথি। এক্সারসাইজ করলে হার্টের উপর বেশি চাপ পড়ে। হার্টকে বেশি পাম্প করতে হয় । বেশি পাম্প করার সময় দেখা যায় যে, সমস্যা বেড়ে গেল। তারপর হুট করে হার্ট ফেলিওর হয়ে যায় এবং মৃত্যু হয়। 

হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি (Hypertrophic cardiomyopathy বা HCM) হল একটি হার্টের একটি রোগ। এক্ষেত্রে হৃদপিণ্ডের পেশী অস্বাভাবিকভাবে পুরু হয়ে যায়। অনেকেই নিজের শরীর সম্পর্কে ভাল করে না জেনে, ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে জিমে যোগ দিয়ে দেন, তারপর কঠিন লক্ষ্য নিয়ে খুব কসরত করতে থাকেন। তারফলেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। চিকিৎসকদের মতে, এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে জিম করার আগে ও পরে শরীরকে তৈরি করা ভীষণ জরুরি।

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সুষাণ মুখোপাধ্যায়ের মতে, হঠাৎ করে  ১০০টা ডন বৈঠক করা, ১০০টা পুশআপ করা,  ১০০টা সিটআপ করা শুরু করে দিলে, বিপদ আসতে পারে। মনে রাখতে হবে, নতুন করে যে  চ্যালেঞ্জটা হার্টকে দেওয়া হচ্ছে, সেটা হার্ট নিতে পারছে কি না তা দেখতে হবে। শরীরকে তার জন্য আস্তে আস্তে তৈরি করতে হবে।  হার্ট চাপ নিতে না পারলে সিগন্যাল দেয়, সেটা না বুঝলেই বিপদ।