কলকাতা: দোলের দিন পাড়ায় এখনও রাস্তায় নেমে রঙ খেলা হয়। কাজের ব্যস্ততায় যোগ দেওয়া হয় না সবসময়। মনে মনে রঙিন হন, দোল খেলেন তিনি। দোল মানেই তাঁর কাছে একরাশ শৈশব। রঙের উৎসবের কথা বলতে গিয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে দেবশঙ্কর হালদার বলে উঠলেন, ‘মন ভালো করা রোদ্দুর কেন মাছরাঙাটির গায়ের মতন.. আমার কাছে দোল সেই মন ভালো করা রোদ্দুরটা।’
ছোটবেলায় পাড়ার সবার সঙ্গে রঙ খেলা হত নিয়মিত। তবে শুধু রঙ নয়, সেইসঙ্গে সমান তালে চলত ফুটবল খেলাও। দেবশঙ্কর বলছেন, ‘দোলের দিন রঙ মেখে ফুটবল খেলতাম আমরা। সে একটা অন্যরকম মজা। ফুটবল খেলা থামিয়ে মাঝে মাঝে রঙ খেলে নিচ্ছি। তারপর আবার শুরু হচ্ছে ফুটবল খেলা। সারাদিন পর যখন বাড়ি ফিরতাম ভীষণ ক্লান্ত লাগত। গায়ে কী ব্যাথা হত! কিন্তু সেই ব্যাথা, সেই ক্লান্তিবোধেই একটা অদ্ভুত আনন্দ লুকিয়ে থাকত। যেন বিশাল কোনও কাজ করে ফিরলাম। তারপর বিকেলবেলা আবার বেরোতাম আবির নিয়ে।‘
দোল মানেই রঙে এলোমেলো হয়ে যাওয়া। চেনা মানুষও যেন তখন অচেনা। দেবশঙ্কর বলছেন, ‘প্রত্যেক দোলে আমার মনে হয়, যেন শৈশবে ফিরে গিয়েছি। রাস্তায় বেরবো আর অতর্কিতে আমার গায়ে রঙ দেবে কেউ। তারপর আমার সেই রঙমাখা চেহারা দেখে সে মজা পাবে। আমিও চেহারা বদলে কিছু কম মজা পাব না। এই এলোমেলো অবিন্যস্ত বিষয়টাই আমার খুব ভালো লাগে।‘
যে জামা পরে পাড়ায় দোল খেলতে বেরোতেন, সেটা নিয়ে আর ফেরা হত না। দেবশঙ্কর বললেন, ‘রঙ খেলার পর আমাদের রঙিন জামাগুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে গাছে টাঙিয়ে দিতাম আমরা। রঙই তখন আমাদের জামা। যদিও ব্যাপারটা ভালো নয়, কিন্তু সেইসময় বেশ ভালো লাগত। গাছগুলোও বেশ রঙিন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকত কিছুদিন। সন্ধেবেলা যখন বেরোতাম, গাছগুলো সকালের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত। বেশ লাগত দেখতে।‘
এইবার দোল খেলবেন? হালকা হেসে দেবশঙ্কর বললেন, ‘এখন দোলে আর তেমন উন্মাদনা নেই। তবে আমি প্রত্যেক বছরই মনে মনে দোল খেলি। শৈশবে ফিরে যাই। এবারেও হয়ত খেলব।‘