কলকাতা: মঞ্চে তিনি বিভিন্ন চরিত্র, অনায়াসে খেলা করেন জীবনের অনুভূতি নিয়ে। অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের মন রঙিন করেছেন কয়েক দশক ধরে। কিন্তু নিজের জীবনে রঙ ছুঁয়ে দেখেননি কোনোদিন। দোল তাঁর কাছে কেবল একটি শব্দ মাত্র। রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। কেমন ছিল তাঁর শৈশবের রঙের উৎসব?
দোল মানেই একরাশ শৈশবের রঙিন স্মৃতি। অনেক বড় হয়েও যেন একদিনের জন্য খুঁজে পাওয়া ছোটবেলা। কিন্তু শৈশবের দোল স্মৃতিমেদুর নয় রুদ্রপ্রসাদের কাছে। বলছেন, ‘শৈশবে দারিদ্র বা সমৃদ্ধি সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না। সত্যি কথা বলতে এসব নিয়ে তেমন চিন্তাও ছিল না। বড় হয়ে বুঝি কি প্রচণ্ড দারিদ্রতার মধ্যে দিয়ে শৈশবটা কাটিয়েছি। সেই জীবনে দোল আসত, যেত। কিন্তু আমার জীবনে দোলের চিহ্নমাত্র থাকত না কোনওদিন।‘
শৈশব কেন, পরবর্তীকালেও দোল খেলেননি তিনি। হেসে বললেন, ‘যৌবনেও কখনও দোল খেলা হয়ে ওঠেনি। আর এই বয়সে দোল খেললে লোকে পাগল বলবে।‘
সবার দোলের স্মৃতি অবশ্য় রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের মত নয়। অনেকের কাছেই দোল মানে একমুঠো রঙিন শৈশব। দোল মানেই রঙে এলোমেলো হয়ে যাওয়া। চেনা মানুষও যেন তখন অচেনা। দোল নিয়ে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে এবিপি লাইভে দেবশঙ্কর হালদার বলেছেন, ‘প্রত্যেক দোলে আমার মনে হয়, যেন শৈশবে ফিরে গিয়েছি। রাস্তায় বেরবো আর অতর্কিতে আমার গায়ে রঙ দেবে কেউ। তারপর আমার সেই রঙমাখা চেহারা দেখে সে মজা পাবে। আমিও চেহারা বদলে কিছু কম মজা পাব না। এই এলোমেলো অবিন্যস্ত বিষয়টাই আমার খুব ভালো লাগে।‘
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর কাছে দোল মানে ছোটবেলার আরেকটা নাম। মনে পড়ে, শেষ দোল খেলেছিলেন ১২ বছর বয়সে। বাটানগরে থাকতে। তারপর কলকাতা দক্ষিণ, কাজ... শহরে আর দোল খেলার মত বন্ধু খুঁজে পাননি লেখক। রঙের উৎসব বলতে তাই শৈশবের কথাই মনে পড়ে তাঁর। এবিপি লাইভকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দোলের স্মৃতি উস্কে স্মরণজিৎ বলেছেন, ' ‘আমার সবচেয়ে ভালো লাগত জলবেলুন। ছুড়ে মারতাম। তবে অনেকসময় তাতে ঠিক করে রঙ ভরা না হলেই মুশকিল। ফাটত না। তখন যাকে ছুড়তাম, পাল্টা সেই আবার তুলে আমায় ছুড়ে মারত। স্কুলের ভয়ে বাঁদুরে রঙ মাখতাম না কোনওদিন। আর ছোটবেলায় এত বেঁটে ছিলাম, কারও মুখ, মাথা অবধি হাত পৌঁছত না আমার। বরং অন্যরাই আমায় পুঁটলি করে ধরে রং মাখিয়ে দিত। বাড়ির সামনে ইট পাতা রাস্তা ছিল। সেটা দিয়ে বড়জোর ৫০ মিটার যেতাম। আর ছাদ থেকে জলবেলুন ছুড়তাম। তবে তার বেশিরভাগটাই লক্ষ্যভ্রষ্ট হত।'