কলকাতা : রাত পোহালেই দোল। সবার রঙে রং মেলানোর দিন। এই দিন বেরঙিন হয়ে থাকতে কারই বা ভাল লাগে ? কিন্তু ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টায় নানা অসুখ বিসুখ লেগেই আছে। তার মধ্যে আবার এই বছর অ্যাডিনোভাইরাসের চোখরাঙানি। সারা দেশ জুড়ে চলছে ইনফ্লুয়েঞ্জার দাপট। তার মধ্যে হোলির রং থেকে ত্বকের সমস্যাও তো অনেকেরই হয়। তাবলে কি রং খেলবেন না ? নিরাপদে রং খেলার টিপস শেয়ার করলেন শহরের প্রখ্যাত চিকিৎসকরা এবিপি লাইভের সঙ্গে। 


চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সোহম বসাক  ( Consultant, Cornea Department of Disha Eye Hospitals  )জানাচ্ছেন,



  •  সিন্থেটিক হলুদ রঙে সীসার মতো ধাতু থাকে যা পিংক আইজ, কর্নিয়া ছড়ে যাওয়া , রাসায়নিকের কারণে জ্বলে যাওয়ার মতো অসুখের কারণ হয়।  এই ধরনের রঙগুলি এড়ানো উচিত কারণ তারা বাচ্চাদের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

  • লাল রঙে উজ্জ্বল মাইকা কণা (mica particles ) থাকে, যা সত্যিই ক্ষতিকারক । এগুলি এড়িয়ে যাওয়া উচিত কারণ এগুলি  কর্নিয়ার ক্ষতি করতে পারে।

  •  সবুজ, নীল-সবুজ সিন্থেটিক রঙে  এমন কেমিক্যাল থাকে, যা অত্যন্ত বিষাক্ত। অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।

  •  বাচ্চারা সবচেয়ে বেশি জল বেলুন পছন্দ করে। কিন্তু জল বেলুন জোরে চোখ এসে লাগলে, আইবল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, চোখের ভিতরে রক্তপাত হতে পারে এবং এমনকি রেটিনার সমস্যা হতে পারে।

  •  জল বন্দুক থেকে জোরে ছিটকে আসা জল আপনার চোখের ক্ষতি করতে পারে।
     মনে রাখতে হবে - 

  •  রং খেলার সময় সানগ্লাস ব্যবহার করুন।

  •  চোখের চারপাশে রং লাগাবেন না!

  •  চোখের মধ্যে যেন এক ফোঁটাও না জল পড়ে, তাই চুল বেঁধে রাখুন।

  •  রং প্রবেশ করলে চোখ ঘষবেন না কারণ এতে জ্বালা করবে বা দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে পারে।

  • আপনার চোখের চারপাশে নারকেল তেলের পুরু করে দিয়ে রাখুন।

  •  বাচ্চাদের প্রতি সবসময় নজর রাখা জরুরি।

  •  যদি রঙ চোখে প্রবেশ করে, অবিলম্বে পরিষ্কার কলের জল বা পানীয় জল দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন।


ভেষজ রং লেখা থাকলেই যে সেই রংকে নিরাপদ বলে ভরসা করা যায় এমনটা নয়। বলছেন ডাক্তাররাই । চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা, কৌশিক লাহিড়ি (Professor and Senior Consultant Apollo Multispeciality Hospital 
Hony. Medical Director WIZDERM  )বলছেন,  ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে শহরের বাজার ছেয়ে যায়  নকল ভেষজ আবিরে। ক্রেতা টানতে অনেক রঙের বহু প্যাকেটে লেখাও থাকে '১০০ শতাংশ ভেষজ', যা আদতে নিরাপদ নয়। আর কোন আবির ১০০ শতাংশ ভেষজ, তা পরীক্ষা করে দেখছে কে ! তাই ক্ষতি এড়ানো মুশকিল। ডা. লাহিড়ি জানালেন - 



  • লাল্ রঙে থাকে রেড অক্সাইড, কঙ্গো রেড, ক্রোসিন স্কারলেট, বা রোজামিন ।

  • হলুদ রঙে থাকে মেটানিল ইয়েলো, লেড ক্রোমেট ।

  • সবুজে থাকতে পারে  ম্যালাকাইট গ্রিন।

  • বাঁদুরে মেটালিক রঙ মারাত্মক । এতে থাকে নানারকম ধাতুচুর্ণ । এর থেকে কিডনি বা লিভারের অসুখ এমনকি ক্যানসার এর সম্ভাবনাও থাকে।

  • আবির কিংবা রঙের গুঁড়ো সহজেই শ্বাসনালীতে ঢুকে সমস্যা তৈরি করে।

  • সীসা ও ক্যাডমিয়ামের মতো রাসায়নিক আবির ও রঙে ব্যবহার কখনোই করা উচিত নয়।

  • রং বা গ্লিটারে যে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, চোখ তার সংস্পর্শে এলে অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস থেকে কর্নিয়ার ক্ষতি পর্যন্ত হতে পারে।

    তাই বাড়িতেই রং তৈরি করে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। ব্যবহার করা যেতে পারে বিভিন্ন ফুলের পাপড়ি, আমলা, হলুদ, হেনা জাতীয় জিনিস। আবিরের বেস হিসেবে ব্যবহার করা যায় ট্যালকম পাউডার। হেনা সারারাত ভিজিয়ে তৈরি করা যেতে পারে জল রং। হলুদগুঁড়ো, রক্তচন্দন বা হেনা পাউডার বা ভুষো কালি তেলে গুলে তৈরী করেও রং তৈরি করা যায়। কিন্তু এবার এই অ্যাডিনোভাইরাস ও ফ্লু এর বাড় বাড়ন্তের মাঝে শিশুদের বাদ রেখেই রং খেলার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। 


    ডা. কৌশিক লাহিড়ি




 


 


 


 



ডা. সোহম বসাক