যদি আপনার পা এবং পায়ের পাতা বার বার ফুলে যায়স তাহলে আপনার ভাববার কারণ আছে। অনেকেই পা ফোলার সমস্যাকে পাত্তা দেন না, তবে মনে রাখতে হবে, এর পিছনে অনেক অন্তর্নিহিত সমস্যা থাকতে পারে। পা ও পায়ের পাতা বার বার ফোলা কোনও সাধারণ সমস্যা নয়।
অনেক লুকানো রোগের লক্ষণ হতে পারে এই পা ফোলা। ক্রনিক ভেইন ইনসাফিসিয়েন্সি এবং ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিসের মতো কারণেও পায়ে ফোলাভাব হতে পারে। এছাড়াও, হৃদরোগ, লিভার এবং কিডনির সমস্যাও পায়ে ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে। লিম্ফেডিমা বা সেলুলাইটিসের মতো সংক্রমণও পায়ে ফোলাভাবের কারণ হয়। তাই এই ধরনের ফোলাকে হালকাভাবে নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। সময় থাকতে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। আসুন জেনে নিই, এর ফলে কী কী সমস্যা হতে পারে।
পায়ে একটানা ফোলাভাব, এই ইঙ্গিতগুলি কী বলে?
যদি আপনার পা, গোড়ালি বা পায়ের পাতায় বার বার ফোলাভাব আসে, তবে এটি শরীরের পক্ষ থেকে একটি স্পষ্ট বার্তা যে কোনও অভ্যন্তরীণ সমস্যা বাড়ছে। অনেকে এটিকে বয়স বাড়া বা বেশি হাঁটাচলার ফল মনে করেন, যেখানে আসল কারণ আরও গুরুতর হতে পারে, যেমন হৃদরোগ, লিভার বা কিডনির সমস্যা।
কারণগুলো এক এক করে বুঝি:
ক্রনিক ভেইন ইনসাফিসিয়েন্সি বা ভ্যারিকোজ ভেইনস
মানবদেহের পায়ের শিরাগুলি দু’টি সারিতে বিভক্ত থাকে। আর এই দুটি সারির মধ্যে যোগসূত্র হল আন্তঃশিরা। কোমরের কাছে থাকে একমুখী ভাল্ব, যা রক্তকে উপরদিকে চালিত করে । এই ভাল্বের কাজ হল রক্তকে একদিকে প্রবাহিত করা। কিন্তু এই ভালভ ঠিক মতো কাজ না করলে রক্ত বিপরীত দিকে প্রবাহিত হতে শুরু করে। পায়ের নিচের দিক থেকে রক্ত উপরের দিকে বাহিত না হয়ে আবার ফিরে আসে। ফলে ওই রক্তনালীগুলির আবরণী ফুলে ওঠে । চামড়া ঠেলে বেরিয়ে আসতে চায় যেন। সেটাই ভ্যারিকোজ ভেন।
কেন ভালভ দুর্বল হয়ে পড়ে ?
বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করতে এই ভাল্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিক্ষক, ট্রাফিক পুলিশ থেকে হোটেলের কুক বা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করা যে কোনও মানুষই আছেন রিস্ক জো়নে।
হৃদরোগ সম্পর্কিত সমস্যা
হৃদয় শরীরের প্রতিটি অংশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। হার্টের সমস্যা থেকেও পা ফুলতে পারে। সেই সঙ্গে দেখা যেতে পারে কয়েকটি লক্ষণ।
- বুকে ব্যথা
- শ্বাসকষ্ট
- হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
এই লক্ষণগুলি হৃদরোগের দিকে ইঙ্গিত করতে পারে।
ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস
যখন পায়ের শিরায় রক্তের জমাট বাঁধে, তখন তাকে ডিভিটি (DVT) বলে। এটি খুব বিপজ্জনক পরিস্থিতি, কারণ এর লক্ষণগুলি এইরকম দেখা যায়:
- শিরায় ফোলাভাব
- ব্যথা এবং কোমলতা
- লাল বা গরম ত্বক
- পা ভারী লাগা
যদি জমাট বেঁধে থাকা রক্ত ভেঙে ফুসফুসে পৌঁছায়, তবে এটি পালমোনারি এম্বোলিজমের মতো জীবনহানি ঘটায়। তাই এই ধরনের ফোলাভাব দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
লিভার বা কিডনির রোগ
লিভারের সমস্যায় পেট এবং পায়ে জল জমতে শুরু করে। এর সঙ্গে হাতে লালচে ভাব, ত্বকের হলুদ হওয়া বা ফ্যাকাসে রঙের মলত্যাগের মতো লক্ষণও দেখা যেতে পারে। কিডনির সমস্যা হলে পায়ের ফোলাভাবের সঙ্গে ক্লান্তি, বার বার প্রস্রাব হওয়া এবং মনোযোগে সমস্যা হতে পারে।
ডিসক্লেমার : এই তথ্য গবেষণা এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এটিকে চিকিৎসা পরামর্শ হিসাবে বিবেচনা করবেন না। কোনো নতুন কার্যকলাপ বা ব্যায়াম শুরু করার আগে আপনার ডাক্তারের বা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।