Low Blood Pressure :  হাইপ্রেসার যে ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক, তা আমরা অল্পবিস্তর সকলেই জানি। উচ্চ রক্তচাপ ডেকে আনতে পারে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক। কিন্তু লো ব্লাড প্রেসার ? ততটাই কি প্রাণঘাতী ? কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ? 



ব্লাড প্রেসার কীভাবে মাপা হয় 
আমরা যখন ব্লাড প্রেসার মাপি, তখন দুরকম প্রেসার চেক করি। সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার, ডায়াস্টোলিক ব্লাড প্রেসার। যাকে চলতি কথায় আমরা উপরের দিকের ব্লাড প্রেসার বলি, সেটি systolic ব্লাড প্রেসার। যার স্বাভাবিক মাত্রা ১২০ । আর যাকে আমরা নিচের দিকের প্রেসার বলি , তা হল diastolic বিপি । যার স্বাভাবিক মাত্রা  ৮০। 


এবার  systolic বিপি যদি ১০০ বা তার কম হয়, এবার diastolic বিপি ৬০ এর কম হয়, তাহলে বুঝতে হবে মানুষটির প্রেসার লো।


কোনও কোনও মানুষের আবার ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক ভাবেই লো-এর দিকেই। তারা কিন্তু কোনও রকম সমস্যাও বোধ করেন না, তার জন্য। হয়ত তাঁরা জানেনই না ! কিন্তু যাঁদের প্রেসার হঠাৎ করে লো হয়ে যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে, সতর্ক হতে হবে তাঁদের। কারণ হঠাৎ করে প্রেসার লো হয়ে রাস্তার মাঝে জ্ঞান হারালে তো বিপদ ! আবার ধরুন ড্রাইভ করছেন , তখন প্রেসার লো হয়ে ব্ল্যাক আউট হয়ে গেল ভাবুন তো, কত বড় বিদ ঘটতে পারে ! 


ব্লাড প্রেসার কী


হৃদপিণ্ড আমাদের শরীরে একটি পাম্পিং সিস্টেমের মতো কাজ করে, রক্তকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেয়। রক্ত বিভিন্ন কোষে অক্সিজেন ও অন্যান্য নিউট্রিশন সরবরাহ করে আর দূষিত রেচন পদার্থ, কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে আনে। এই রক্ত যখন একটি ধমনী বা শিরার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন সেই পার্শ্ব দেওয়ালগুলিতে চাপ সৃষ্টি করে রক্তপ্রবাহ। এটাই ব্লাড প্রেসার। এই চাপটা ছাড়া শরীরের সব জায়গায় রক্ত পৌঁছবে না। এই প্রেসারটা তৈরি করে হার্ট। 


চিকিৎসক শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায় জানালেন, ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে ব্লাড প্রেসার লো হওয়ার প্রবণতা বেশি।  কোনও কোনও মহিলা তো বুঝতেই পারেন না তিনি লো ব্লাড প্রেসারের সমস্যায় ভুগছেন। যদি কারও ব্লাড প্রেসার কম হওয়ার দরুণ নানা শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়, তাহলে চিকিৎসার প্রয়োজন। যেমন - 


- মাথা ঘোরা
- মাথা ঝিমঝিম করা
- সর্বদা দুর্বল লাগা
- মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া
- চোখে আঁধার দেখা 


কোন কোন শারীরিক অবস্থায় প্রেসার লো হতে পারে?


চিকিৎসক চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, 



  • অন্তঃস্বত্ত্বা অবস্থায় কারও কারও ব্লাড প্রেসার বাড়ে। কিন্তু তার উল্টোটাও ঘটতে পারে। সন্তান জন্মের পর প্রেসার নর্ম্যালে ফিরে আসা স্বাভাবিক।  

  • আবার হার্টের কিছু কিছু সমস্যায় ব্লাড প্রেসার কমে যায় অস্বাভাবিক ভাবে।  যাকে হাইপোটেনশন বলা হয়। অর্থাৎ হৃদযন্ত্রের পাম্পিং ক্ষমতায় অক্ষমতার দরুণ এই সমস্যা হওয়া।

  • আবার হাইপোথাইরয়েডিসম এ যাঁরা ভোগেন তাঁদের ক্ষেত্রেও এটা হতে পারে।

  • শরীর থেকে হঠাৎ অনেকটা জল বেরিয়ে গেলে ব্লাড প্রেসার কমে যেতে পারে। 

  • কোনও দুর্ঘটনা বা অপারেশনের কারণে শরীর থেকে অনেকটা রক্ত বেরিয়ে গেলে রক্তচাপ পড়ে যায়।

  •  রক্তে কোনও ইনফেকশন প্রবেশ করলে ব্লাড প্রসার মারাত্মক হারে কমে যায়। যা প্রাণঘাতী হতে পারে।  

  • কোনও কোনও অ্যালার্জির কারণেও ব্লাড প্রেসার হঠাৎ কমে যায়।  

  • আবার vitamin B-12, ফোলেট folate, আয়রন ( iron)  ঘাটতি ঘটলে লো প্রেসার হতে পারে।


এর জন্য কি কোনও ওষুধ খেতে হবে ? 

চিকিৎসকরা বলছেন, হঠাৎ করে কারও প্রেসার লো হলে, তার কারণ বুঝে চিকিৎসা করতে হবে। লো প্রেসারের এমনি কোনও ওষুধ নেই, যা সাথে-সাথে প্রেসার বাড়ায়। তেমন প্রয়োজন হলে ,



  • ওআরএস খাওয়াতে হবে।

  • রোগী ওআরএস খেতে না পারলে, স্যালাইন ওয়াটার দিতে হবে ।

  • বাড়িতে নুন জল খাওয়ানো যেতে পারে।

  • বিছানায় শুয়ে পা একটু উঁচুতে বালিশের উপর তুলে রাখা যায়।

  • যাঁদের লো প্রেসারের কোনও উপসর্গ নেই, তাঁরা দিব্যই আছেন লো ব্লাড প্রেসার নিয়ে, তাঁদের চিন্তার কারণ তেমন নেই। কিন্তু শরীরে যদি অস্বস্তি বোধ হয়, বিপি যদি স্বাভাবিকের থেকে লো হয়, তাহলে একবার ডাক্তারের পরামর্শ নিন।