কলকাতা: পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে দেবীপক্ষের সূচনার দিনটিকেই মহালয়া (Mahalaya) হিসেবে উদযাপন করা হয়। দুর্গাপুজো বাঙালিদের কাছে শ্রেষ্ঠ উৎসব। মহালয়ার দিন থেকেই যেন আরও পুজো পুজো ভাব চলে আসে বাঙালিদের মনে। পূরাণে কথিত রয়েছে, ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর মানুষ এবং দেবতাদের কাছে অপরাজেয় হয়ে উঠেছিল। শুধুমাত্র কোনও নারীশক্তির কাছেই তার পরাজয় নিশ্চিত ছিল। ব্রহ্মার কাছ থেকে এমন বর পেয়ে দেবতাদের উপর মহিষাসুরের তান্ডব ক্রমশ বাড়তে থাকে। অসীম ক্ষমতার অধিকারী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গধাম থেকে বিতারিত করে বিশ্বব্রহ্মান্ডের অধীশ্বর হতে চায়। তখনই তাকে বধ করার জন্য এক নারীশক্তির জন্ম দেন ত্রিশক্তি ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বর। তাঁরা নিজেদের শক্তি দিয়ে মহামায়ারূপী যে নারীশক্তিকে তৈরি করেন, তিনিই দেবী দুর্গা। দশ হাতে দশ অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে মহিষাসুরকে বধ করেন তিনি। হিন্দুশাস্ত্র মতে কথিত রয়েছে যে, মহালয়ার দিনই অসুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়েছিলেন দেবী দুর্গা। এই বিশেষ দিনে মহিষাসুরকে বধ করে অসুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে এবং শুভ শক্তির আরাধনায় তাই মহালয়ার গুরুত্ব অপরিসীম।
চলতি বছর মহালয়ার এই বিশেষ দিনটি পড়েছে আগামি ৬ অক্টোবর। করোনা পরিস্থিতির কারণে গতবছরও দুর্গাপুজোয় বিশেষ কোনও আরম্বর দেখা যায়নি। চলতি বছরও করোনা পরিস্থিতি কেটে যায়নি। বরং এই সময়ই করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারের পক্ষ থেকেও সংক্রমণ আটকাতে এই সময়ে বাড়ির বাইরে না বেরনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাঙালিদের জীবনে মহালয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। মহালয়া শব্দটির অর্থ মহান আলয় বা আশ্রয়। এক্ষেত্রে দেবী দুর্গাই হচ্ছেন সেই মহান আলয়। মহালয়ার দিন গঙ্গাবক্ষে দাঁড়িয়ে পূর্ব-পুরুষদের উদ্দেশ্যে অঞ্জলি দেওয়া বা তর্পণের রীতি রয়েছে। কালো তিন আর কুশ সহযোগে পূর্ব পুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়। বহু বছর ধরে বাঙালিদের কাছে মহালয়ার আরও একটা বিশেষ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের অনুকরণীয় কণ্ঠস্বরে 'মহিষাসুরমর্দিনী' অনুষ্ঠান। মহালয়ার পর থেকেই দুর্গাপুজোর অপেক্ষায় দিন গোনা শুরু হয়ে যায় আট থেকে আশি সকলের। প্রসঙ্গত, মহালয়ার দিন কুমোরটুলিগুলোতে মায়ের চক্ষুদানও হয়।
এবছর দুর্গাপুজোর মহাষষ্ঠী পড়েছে আগামি ১১ অক্টোবর। মহাসপ্তমী আগামি ১২ অক্টোবর। মহাষ্টমী আগামি ১৩ অক্টোবর। মহানবমী আগামি ১৪ অক্টোবর। এবং বিজয়া দশমী আগামি ১৫ অক্টোবর।