কলকাতা: ‘ছোটদের ছানি’র (Cataract) সমস্যা চিন্তা বাড়াচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে ভারতে প্রতি ১০ হাজার শিশুর মধ্যে ৬ জনই চোখে ছানি নিয়েই জন্মায়৷ শিশুদের অন্ধত্বের ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে কারণ ছানির সমস্যা। চিকিৎসকদের মতে নানা কারণে শৈশবে ছানি পড়তে পারে ৷ চোখের সঙ্গে জড়িত মস্তিষ্কের উন্নয়নও। চোখ দিয়ে কিছু দেখার পর বার্তা যায় মস্তিষ্কে। এভাবেই ধীরে ধীরে আশপাশের জিনিস চিনতে শেখে শিশুরা। ছোট থেকেই যদি দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়, এ ক্ষেত্রে প্রভাব পড়তে পারে মস্তিষ্কের বিকাশেও। ছানির সমস্যা অর্থাৎ কনজেনিটাল ক্যাটার‍্যাক্ট (Congenital Cataract) হয়েছে কিনা জানতে তাই বিশেষ পরীক্ষা জরুরি। তবে বড়দের ছানির অপারেশন এবং ছোটদের অপারেশন সম্পূর্ণ আলাদা প্রক্রিয়া। বয়স, পরিস্থিতি সমস্ত দিক বিচার করে বিশেষজ্ঞরা সিদ্ধান্ত নেন। বাবা-মায়েরা কীভাবে বুঝবেন তাঁর সন্তানের চোখের সমস্যা? ছোটদের ছানি এবং চোখ সংক্রান্ত সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে এবিপি লাইভের সঙ্গে কথা বললেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ ভাস্কর রায়চৌধুরী (Tamanash Eye Foundation)।


সমস্যার শিকড়



  • জিনগত সমস্যা, মেটাবলিক ডিসঅর্ডার এবং প্রিম্যাচিওর বার্থ ছানির অন্যতম কারণ।

  • এছাড়াও একাধিক কারণে শিশুর ছানি পড়তে পারে। শিশু গর্ভে থাকাকালীন মায়ের যদি কোনও সংক্রমণ থাকে সেক্ষেত্রে শিশুর চোখে ছানি দেখা দিতে পারে। 

  • সঙ্কটজনক শিশুদের বাঁচাতে যে জীবনদায়ী ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, তাতে স্টেরয়েড থাকছে। গর্ভাবস্থায় মা স্টেরয়েড জাতীয় কোনও ওষুধ নিলেও এই সমস্যা হতে পারে শিশুর। 

  • সন্তান গর্ভে থাকার সময় মা যদি ঘনঘন এক্স-রে করেন তবে একাধিকবার বিকিরণ রশ্মির সংস্পর্শে আসার জন্য সন্তানের জন্মগত ছানির ঝুঁকি থাকে। 

  • গর্ভবতী মায়ের রুবেলা জাতীয় জীবাণু সংক্রমণ হলেও সন্তানের কম বয়সে ছানির আশঙ্কা থেকে যায়। 

  • প্রসূতিদের থাইরয়েডের সমস্যা এর অন্যতম কারণ। 

  • গর্ভাবস্থায় মা পুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগলে সদ্যোজাতর ছানির আশঙ্কা বাড়ে।

  • ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-ডি এগুলোর অভাবের কারণে ছানি বেশি হয়।


নবজাতকরা চোখের সমস‌্যা সহজে বোঝাতে পারে না। তাই বাবা-মাকে সতর্ক থাকতে হবে। কী দেখে সদ্যোজাতর সমস্যা বুঝবেন?



  • চোখের মণিতে সাদা আস্তরণ।

  • সামনে খেলনা নিয়ে এলে বাচ্চা দেখবে না।

  • ফ্যান, খেলনা বা আলোর দিকে ঘুরে দেখবে না।

  • ছানি এক চোখে হলে, অন্য চোখে হাত চাপা দিলে হাত সরিয়ে দিতে চাইবে।

  • বাচ্চা ট্যারা হতে থাকলে বা মণির অস্বাভাবিক নড়াচাড়া শুরু হলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিন।


ছানি থেকে অন্যান্য আরও সমস্যা: জন্মগত ছানির সঙ্গে হার্টের ও কানের সমস্যা থাকতে পারে। কানের সমস্যা দেখা দেয়। ভাইরাসের কারণে বাচ্চাদের জন্মগত ছানি খুব বেশি হয়ে থাকে। শারীরিক অন্যান্য ত্রুটিও এই ভাইরাসের কারণে হয়। এছাড়াও অন্যান্য কারণ যেমন, বার্থ ট্রমা থেকে ছানি হতে পারে। মেটাবলিক কিছু রোগ রয়েছে সেগুলো থেকেও জন্মগত ছানি হতে পারে। জন্মের পরে যে ছানি পড়ে তাকে  বলা হয় ডেভেলপমেন্টাল ক্যাটারাক্ট (Developmental Cataract)। 


সমাধান কী: শিশু জন্মানো মাত্রই তাঁর চোখের পরীক্ষা করা দরকার। সমস্যা ধরা পড়লে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশনের মাধ্যমে ছানি অপসারণ করে পরবর্তীতে সময়মত কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এই রোগের চিকিত্সা সম্ভব। অপারেশনের বিলম্বের কারণে চিরতরে শিশু দৃষ্টি হারাতে পারে। টোটাল ক্যাটারেক্ট এবং ল্যামেলার ক্যাটারেক্টের ক্ষেত্রে দু-তিন মাসের মধ্যে অপারেশন না করালে পরে করেও পুরো দৃষ্টি ফেরত আনা যায় না। এ ক্ষেত্রে দুটি অপারেশন লাগতে পারে। প্রথমে অপারেশনে লেন্স বাদ দেওয়া হয়। নকল লেন্স বসানো হয় বাচ্চার দেড় বছর বয়সের পরে। 


আগেভাগে সতর্ক হবেন কীভাবে? 



  • গর্ভাবস্থায় মায়ের স্বাস্থ্য, খাওয়া-দাওয়ার দিকে নজর রাখুন।

  • শিশু কন্যাকে সময়মতো জার্মান মিজলসের প্রতিষেধক দিন। যাতে তার এই রোগ না হয়। 

  • টিকা না নেওয়া থাকলে গর্ভসঞ্চারের আগেই ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নিন।

  • নিয়মিত চেক আপ করতে হবে।  

  • প্রথম চেকআপ জন্মের পরেই এবং দ্বিতীয় চেকআপ প্রথমবার স্কুল যাওয়ার পূর্বে  করতে হবে।

  • চশমা থাকলে অবশ্যই পারতে হবে।


বাচ্চাদের ক্ষেত্রে চোখের ছানি বেশির ভাগ সময়ে জন্মগত সমস্যা হয়ে থাকে। জন্মের পরও বিভিন্ন কারণেও ছানি হয়। পাশাপাশি বাচ্চার ছানি থেকে তাঁর অন্যান্য সমস্যাও হতে পারে। তবে সঠিক সময়ে ছানি অপারেশন করে চশমা বা লেন্সের ব্যবহার শুরু করলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।