কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ হোক বা বাংলাদেশ। ইউরোপের কোনও দেশে কর্মসূত্রে থাকা বাঙালি হোক বা আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়ার নিবাসী বাঙালি। ধর্ম-নাগরিকত্ব নির্বিশেষে সব বাংলাভাষিকে যে উৎসব একসূত্রে বাঁধে তা পয়লা বৈশাখ। বাংলা বছরের প্রথম দিন। খাওয়াদাওয়া, নতুন জামা থেকে পছন্দের নিখাদ বাঙালি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পশ্চিমবঙ্গের কোনও পাড়া থেকে বাংলাদেশের কোনও শহর কিংবা বিদেশের কোনও বাঙালিগোষ্ঠী---উদযাপনের বহর আলাদা হলেও নির্যাস প্রায় একই থাকে।
পশ্চিমবঙ্গে আজ:
আজ ১৫ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গে পালিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ। রাজ্যের নানা কোণায় আয়োজিত হচ্ছে একাধিক অনুষ্ঠান। ভারতের অন্য রাজ্যেও বাঙালিভাষাভাষীরা মাতছেন উৎসবে। তবে এখানে একটি বিষয় বলার রয়েছে, নববর্ষ সব বাঙালির প্রাণের উৎসব। কিন্তু শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্য ১৫ এপ্রিল আলাদা করে কেন বলা হল? এখানেই লুকিয়ে রয়েছে বিশেষ একটি গল্প।
দুই জায়গায় আলাদা:
প্রতিবছরই বাংলাদেশে বিপুল উৎসাহ এবং আড়ম্বরের সঙ্গে বাংলা নববর্ষ পালন করা হয়ে থাকে। সেখানে ১৪ এপ্রিল পালিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ। ১৫ এপ্রিল ভারতে পালিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ। কিন্তু কেন?
কী বলছে বই?
কুনাল চক্রবর্তী ও শুভ্রা চক্রবর্তীর বই Historical Dictionary of the Bengalis-এ বলা হচ্ছে বাংলা ক্যালেন্ডার মূলত সূর্য সিদ্ধান্তর উপর ভিত্তি করে বানানো হয়েছে। সূর্য সিদ্ধান্ত জ্যোতিশাস্ত্রের উপর লেখা একটি সংস্কৃত পুঁথি। মনে করা হয়, প্রাচীন বাংলায় রাজা শশাঙ্ক এই ক্যালেন্ডারের প্রবর্তক। পরে মুঘল আমলে সম্রাট আকবরের সময় এর কিছু পরিবর্তন করা হয়। তখন সময়টা ছিল ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ। পরিবর্তন কেন? ইতিহাসবিদরা বলেন, তার আগে কর বা খাজনা সংগ্রহ করা হয় হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, যা আদতে চান্দ্রমাস ধরে হিসেব হত। কিন্তু Islamic Hijri Calendar ভারতে সূর্যকে ধরে চলা হিসেবের সঙ্গে মেলে না। এদেশে সূর্যকে ধরে হিসেবের ভিত্তিতেই চাষ হত। ফলে ফসল উৎপাদনের সময় খাজনা সংগ্রহ করা এবং গোটা প্রক্রিয়াকে মসৃণ করার জন্য কিছু পরিবর্তন করা হয়। ওই বইয়ের দাবি অনুযায়ী নতুন এই ক্যালেন্ডারটি দুটি হিসাবপদ্ধতি মিলিয়ে করা হয়েছিল। সেটি ভারতীয় বাঙালিরা এখনও ব্য়বহার করে থাকে। ফলে কোনও বছর ১৪ এপ্রিল বা কোনও বছর ১৫ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ পড়ে।
বাংলাদেশে কী হয়েছে?
১৯৬৬ সালে বাংলাদেশে এই ক্যালেন্ডারের হিসেবে একটা পরিবর্তন করা হয়েছে। মহম্মদ শহিদুল্লাহের নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি করা হয়, সেটি কিছু পরিবর্তন আনে। ওই ক্যালেন্ডারে বছরের প্রথম পাঁচটি মাস ৩১ দিনের এবং শেষের সাতটি মাস তিরিশ দিন করে। প্রতি লিপইয়ারে ফাল্গুন মাসে একটি করে অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়। নতুন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতিবছরই ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ পালিত হয় বাংলাদেশে।