নিজের ক্যানসারের আনসার বার করলেন তিনি নিজেই। নিজেরই ল্যাবে বেড়ে ওঠা ভাইরাস দিয়ে কর্কটরোগকে বাগে আনলেন বিজ্ঞানী। নিজেই বহু গবেষণা করে এই চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন।  যদিও নির্দিষ্ট নিয়মের পথে না গিয়ে,  এভাবে নিজের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায় কিনা , তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।  


নেচার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত আর্টিকল অনুসারে, বিজ্ঞানী বিটা হ্যালাসির আগেই ক্যানসারের কারণে বাম স্তন অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হয়। তখন সেরে উঠলেও আবার দানা বাঁধে কর্কট রোগ। সালটা ২০২০। স্তন বাদ দেওয়ার পরও সেই জায়গায় ক্যানসার ফিরে আসে।  তিনি আর  কেমোথেরাপি করাতে চাননি। বরং আজীবন যে ভাইরাস নিয়ে তাঁর অধ্যবসায় (virologist at the University of Zagreb) , তা দিয়েই হ্যালাসি নিজের চিকিৎসার করার কথা ভাবেন। 


সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিনে Vaccines এ প্রকাশিত হয়েছে সেই কেস- স্টাডিটি । হ্যালাসি কীভাবে তার নিজের স্টেজ 3 ক্যানসারের চিকিৎসা করেছিলেন নিজেই। আর তা করে তিনি কীভাবে ৪ বছর হলেন ক্যানসার-মুক্ত। অনকোলাইটিক ভাইরোথেরাপি (OVT) নামক পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন তিনি। 


OVT হল ক্যান্সার চিকিৎসার একটি আধুনিক পদ্ধতি, যা ক্যান্সার কোষকে আক্রমণ করে ভাইরাস-অস্ত্র দিয়ে, সেই সঙ্গে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এখনও  পর্যন্ত বেশিরভাগ OVT ক্লিনিকাল ট্রায়াল ক্যানসারের অ্যাডভান্সড স্টেজের রোগীদের উপরই হয়েছে।   T-VEC নামে পরিচিত OVT এখনও পর্যন্ত মেটাস্ট্যাটিক মেলানোমার চিকিৎসার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদন পেয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও  OVT এজেন্ট বিশ্বের কোথাও স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য অনুমোদন পায়নি। 


হ্যালাসি স্পষ্টই উল্লেখ করেছেন, তিনি OVT বিশেষজ্ঞ নন।  কিন্তু পরীক্ষাগারে ভাইরাস নিয়ে কাজকর্ম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি নিজের চিকিৎসায় OVT প্রয়োগ করার আত্মবিশ্বাস পান।  তিনি পরপর দুটি ভিন্ন ভাইরাস দিয়ে তার টিউমারটিকে টার্গেট করেন। একটি হামের ভাইরাস এবং একটি ভেসিকুলার স্টোমাটাইটিস ভাইরাস (ভিএসভি)।  ইতিমধ্যে OVT ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলিতে ব্যবহৃত হয়েছে।  হামের ভাইরাস দিয়ে মেটাস্ট্যাটিক স্তন ক্যান্সার সারানোর পরীক্ষা হয়েছে আগেও।  হামের এই স্ট্রেনটি বাচ্চাদের ভ্যাকসিনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় । আর VSV প্রয়োগ হলে খুব বেশি হলে ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণগুলি দেখা যায়। তাই ভাইরাসগুলি নিরাপদ দেখেই ব্যবহার করার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছিলেন বিজ্ঞানী। 


দুই মাসের মধ্যে হ্যালাসির এক সহকর্মী তাঁর জন্য চিকিত্সার একটি পরিকাঠামো তৈরি করেন।  তিনিই সরাসরি তাঁর টিউমারে ইনজেকশন দিয়েছিলেন। আর এই চিকিৎসা চলাকালীন তাঁর উপর নজর রেখেছিলেন  অনকোলজিস্টরা। যাতে যদি কিছু ভুল হয়ে যায়, বা গোলমাল দেখা যায়, তাহলে যেন সঙ্গে সঙ্গে কেমোথেরাপি শুরু করা যায়। 


তবে   কোনও গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই  টিউমারটি যথেষ্ট ছোট হয়ে যায়।  নরম হয়ে আসে।  তারপর তা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করার মতো অবস্থায় পৌঁছায়। স্টিফেন রাসেল নামে একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন OVT বিশেষজ্ঞও সম্মত হন,   হ্যালাসির ক্ষেত্রে ভাইরাস ইনজেকশনগুলি তার টিউমারকে সঙ্কুচিত করতে সক্ষম হয়েছে।  কিন্তু তিনি মনে করেন না যে এটা নতুন কোনও বিষয় । কারণ, গবেষকরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যান্সারের চিকিৎসায়  OVT ব্যবহার করেছেন।  তবে হ্যাঁ, নিজের ল্যাবে বেড়ে ওঠা একটি ভাইরাস দিয়ে এই চিকিৎসা সত্যিই অভিনব।