কলকাতা : ঘুমের সঙ্গে অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা জড়িয়ে আছে। চিকিৎসকরা শরীর-স্বাস্থ্যের সঙ্গে ঘুমের সম্পর্ক নিয়ে নিত্যনতুন গবেষণা করছেন। আর তাতে বেরিয়ে আসছে নানা চমকপ্রদ তথ্য। অনেকেই ঘুমের সময় মুখ খুলে ঘুমোন। সেটাকেই স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নেন অনেকে। চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন, এই লক্ষণ হেলাফেলা করার নয়। অনেক সময়ই বিভিন্ন রোগ বা স্বাস্থ্য সমস্যার সংকেত দিতে পারে এই হাঁ-করে ঘুমোনোর অভ্যেস।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত ঘুমানোর সময় আমাদের নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া উচিত। কিন্তু যদি নাক বন্ধ থাকে বা শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়, তাহলে সেই ব্যক্তি মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে শুরু করেন। নাক এবং মুখ উভয়ই আমাদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহের কাজ করে। কিন্তু নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার সময়, বাতাস ফিল্টার হয়ে ফুসফুসে পৌঁছয়। কিন্তু মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে তা হয় না। দীর্ঘক্ষণ মুখ খোলা রেখে ঘুমালে গলা শুষ্কতা, দুর্গন্ধ, গলা ব্যথা এবং দাঁতের সমস্যা হতে পারে।
সর্দি কাশিতে নাক-বন্ধ থাকার জন্য অনেকেই মুখ খোলা রেখে ঘুমান। আবার এর অপর কারণ হতে পারে যদি কারও নাকের হাড় বাঁকা থাকে। নাকের মধ্যবর্তী প্রাচীর বাঁকা হয় অনেকের, যাকে deviated septum বলে। এছাড়াও নাকে অন্য কোনও কারণে বাধা সৃষ্টি হলে, নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া যায় না। দাঁতের গঠনও কখনও-কখনো সমস্যা তৈরি করে, মুখ বন্ধ করার সমস্যা হয়।
নবজাতক শিশুদের মধ্যেও কারও কারও এমন প্রবণতা তৈরি হয়। যদি শিশু ঘুমানোর সময় মুখ খোলা রেখে শ্বাস নেয়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই শিশুর চিকিৎসককে জানাতে হবে। অনুমানের ভিত্তিতে চিকিৎসা করলে হবে না। হতেই পারে, কোনও কারণে তার নাক বন্ধ বা নাকের হাড়ে বাঁকা রয়েছে। যদি বড় বাচ্চারা হঠাৎ মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে শুরু করে, তাহলে অবহেলা করা যাবে না। হতে পারে সেটি অ্যাডিনয়েডের সমস্যা। অ্যাডিনয়েড গলার উপরের অংশে থাকা ছোট টিস্যু। যদি তা ফুলে যায়, তাহলে শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে।
এমন সমস্যা থেকে রেহাই পেতে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যদি নাক বন্ধ থাকে, তাহলে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন অথবা স্যালাইন ওয়াটার স্প্রে নিন। যদি সমস্যাটি অ্যালার্জি, হাঁপানি বা সাইনাসের সংক্রমণ থেকে হয়, তাহলে এর চিকিৎসা করা প্রয়োজন। আজকাল ইউটিউব এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ডাক্তাররা 'মাউথ টেপিং' সম্পর্কে কথা বলেন। এতে ঘুমানোর সময় মুখে হালকা টেপ বা নরম প্যাচ লাগানো হয়, যাতে ঘুমের সময় মুখ না খোলে এবং নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়। কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, টেপিং ঘুমের সময় নাক ডাকা এবং শ্বাসকষ্ট কিছুটা কমিয়েছে।