নয়াদিল্লি: বলিউডের 'মিস্টার পারফেকশনিস্ট' (Mr. Perfectionist) নামে খ্যাত আমির খান (Aamir Khan), এ কথা সকলেরই জানা, তিনি নিজের ফিল্মে প্রাণ ঢেলে দেন, আর এবার সেই একই পথে হাঁটছে তাঁর প্রযোজনা সংস্থাও। 'আমির খান প্রোডাকশন'-এর (Aamir Khan Production) ফিল্ম 'লাপতা লেডিজ'-এ (Laapataa Ladies Review) আমির খানের ছোঁয়া স্পষ্ট নজরে পড়বে। যে কারণে আমির খান খ্যাত, পরিচালক কিরণ রাও (Kiran Rao) ঠিক তেমনই ম্যাজিক করেছেন পর্দায়। তাও কোনও বড় তারকা, বড় সেট, দামি কস্টিউম ছাড়াই কিরণ রাও আবারও প্রমাণ করে দিলেন যে তিনি আমির খানের থেকে প্রোডাকশন অত্যন্ত ভাল করে শিখেছেন, এবং বলিউডে আরও দুর্দান্ত কাজ নিয়ে আসতে পারেন। 


ফিল্মের গল্প


একই ট্রেনে দুই নববিবাহিত দম্পতি ওঠেন। দুই কনের মুখেই লম্বা ঘোমটা টানা। ট্রেন থেকে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে এই দুই নববধূ কীভাবে হারিয়ে যান এবং তারপর কী কী হয়, সেই নিয়েই ছবির গল্প। ট্রেলার দেখে ছবির গল্প বিশেষ আন্দাজ করা যায় না এবং অবশ্যই তা আপনাদের এখানেও বলা হবে না, কারণ এরকম ছবি প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে অবশ্যই দেখা উচিত। 


কেমন হয়েছে এই ফিল্ম?


এটি এমন একটি ফিল্ম যা প্রমাণ করে যে গল্প যদি সঠিক পদ্ধতিতে বলা যায় তাহলে কোনও খান, কোনও কপূর, কোনও কপূর, কারও প্রয়োজন পড়ে না। ২ ঘণ্টার সিনেমা মাত্র ১৫ মিনিটে মূল বক্তব্যে পৌঁছে যায় এবং প্রত্যেক মুহূর্তে সিনেমাটি গতি নেয়। কোনও মুহূর্তে আপনি ফোন চেক করতে বা প্রেক্ষাগৃহ ছেড়ে বের হওয়ার সুযোগ পাবেন না। এই ফিল্মটি এমন একটি কঠিন বক্তব্য বিনোদনের মোড়কে প্রকাশ করবে যে আপনি বুঝতেও পারবেন না যে আপনাকে আদতে জ্ঞান দেওয়া হচ্ছে এবং আপনি সেই জ্ঞান গ্রহণও করে ফেলেছেন। এটাই তো একটি সিনেমার বা বলা চলে, ভাল ও সাবধানে তৈরি ছবির বৈশিষ্ট্য। ফিল্মের প্রত্যেক চরিত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা সে কোনও হোটেলের বাসন ধোওয়ার বালক হলেও। এই ছবি আপনাকে অজস্র কথা বলে যাবে, কিন্তু সবটাই এত হালকা মেজাজে যে বুঝতেই পারবেন না। এই সিনেমা দেখে প্রচুর কাঁদতে পারেন, সঙ্গে রুমাল রাখতে ভুলবে না। স্পর্শ শ্রীবাস্তবকে এর আগে 'জামতাড়া' ওয়েব সিরিজে দেখা গিয়েছে তবে সিনেমা তাঁর এটিই প্রথম আর তিনি জমিয়ে অভিনয় করেছেন। গ্রামের ছেলের শরীরি ভাষা তিনি দারুণভাবে রপ্ত করেছেন। পুলিশের চরিত্রে দেখা গিয়েছে রবি কিষাণকে। ট্রেলারেই তিনি নজর কেড়েছিলেন এবং সিনেমায় তো তিনি আলাদা মাত্রা যোগ করেছেন। পর্দায় এলেই তিনি দারুণ মনোরঞ্জন করেন। এছাড়া দুর্গেশ কুমারের কাজও বেশ নজরকাড়া।


পরিচালনা


সত্যি বলতে গেলে এই ছবির নায়ক হলেন পরিচালক কিরণ রাও। ওঁর পরিচালনা একেবারে নিখুঁত। সিনেমার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিবরণে বিশেষ নজর দিয়েছেন। প্রত্যেক পরিস্থিতি থেকে শুরু করে প্রত্যেক সেট, সর্বত্র তাঁর পরিশ্রম নজরে পড়বে। প্রায় ১১ বছর পর তিনি পরিচালকের আসনে ফিরলেন। এর আগে তিনি 'ধোবি ঘাট' তৈরি করেছিলেন। এই সিনেমা দেখেও মনে হবে দেরিতে এলেও তিনি ফিরেছেন স্বমহিমায়। সুযোগ পেলে আরও দারুণ ছবি বানানোর ক্ষমতা রাখেন কিরণ।


অভিনয়


ফিল্মের তিনজন অভিনেতা নন। নিশান্তি গোয়েল ফুলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ওঁর সারল্য দর্শকের মন জয় করবে। একবারও মনে হবে না যে তিনি নতুন। তাঁর কথা বলার ধরন, হাঁটাচলার ধরন, নিজের বরের সাইকেলের পিছনে বসার ধরন, সবকিছু এতটাই নিখুঁত যে তাঁকে দেখে গ্রামের মেয়েই মনে হবে। প্রতিভা রান্টাও নিজের চরিত্রে প্রাণ উজাড় করে দিয়েছেন। তাঁকেও এতটা নিখুঁত দেখতে লাগে যে মনে হবে না অভিনয় করছেন। কখন যে তিনি আপনাকে শিক্ষা দিয়ে যাবেন তা বুঝতেই পারবেন না। 


আরও পড়ুন: 'Article 370' Review: ইয়ামি গৌতম অভিনীত 'আর্টিকল ৩৭০' কাশ্মীরের জটিল রাজনৈতিক ইস্যুকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে পারল?


ফিল্মের মিউজিক


রাম সম্পতের সঙ্গীত পরিচালনা, এই দারুণ ছবিকে আরও দারুণ করে তুলেছে। গানগুলি সিনেমার পরিস্থিতি অনুসারে একেবারে দারুণ ফিট করে এবং সিনেমাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। গান শুনে বেশ ভাল লাগবে, বিরক্ত হবেন না।


সব মিলিয়ে এক কথায় বলতে গেলে, এই ছবি অবশ্যই দেখা উচিত। একটি সাধারণ ছবি অনেক কিছু বলে যাবে। আপনি অনেক কিছু নিয়ে ফিরবেন। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।