প্রিয়া হাজরা, নয়াদিল্লি: দীপাবলির (Diwali 2023) মরশুমে, আজই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে সলমন খান (Salman Khan) ও ক্যাটরিনা কাইফ (Katrina Kaif) অভিনীত 'টাইগার ৩'। YRF স্পাই ইউনিভার্সের (YRF Spy Universe) নবীনতম সদস্য এই ছবি শুরুতেই দেখায় কী কী ঘটেছিল আগে। প্রিক্যুয়ালগুলি খুব ভাল করে ভীত গড়ে দিয়েছিল এবং যে জগৎ তৈরি করা হয়েছিল ইতিমধ্যেই তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে চলল মণীশ শর্মা (Maneesh Sharma) পরিচালিত অ্যাকশন ফিল্ম এবং 'লার্জার-দ্যান-লাইফ' (larger-than-life) চরিত্রগুলি সেই গল্পকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। 


'এক থা টাইগার' ও 'টাইগার জিন্দা হ্যায়' ছবির থেকে তৃতীয় সংস্করণ অনেক বেশ আকর্ষণীয় এবং অন্তহীন ফ্ল্যাশব্যাক দৃশ্য থাকা সত্ত্বেও দর্শক ধরে রাখার ক্ষমতা রাখে এই ছবি। এমনকী, এটা বলা একেবারেই অত্যুক্তি হবে না যে সলমন খান বারবার তাঁর অনুরাগীদের টাইগার ফ্র্যাঞ্চাইজি দিয়ে মন ভরিয়েছেন। এবারেও যে আশা তৈরি হয়েছিল সেই মাত্রা ছুঁয়েছেন তিনি। দীপাবলির দিন বেশ সকালের শোতেও ফুলহাউজ থাকা, তাঁকে ঘিরে উন্মাদনার উদাহরণ বটে, কিন্তু ফিল্মটির পারফর্ম্যান্স কেমন তা অনুমান করা যায় একই পরিমাণ ভিড় থেকে বেরিয়ে আসা কন্টেন্ট অনুভব করে।


তবে ভুল করবেন না, এই ছবিতে একাধিক অপ্রয়োজনীয় খামতি, ভয়ঙ্কর অ্যাকশন ও বাস্তবের থেকে বড় করে দেখানো 'সোয়্যাগ' রয়েছে। যদিও, তা সত্ত্বেও এই ছবি হচ্ছে মূলধারার স্পাই থ্রিলারের উপাদানে ভরা প্যাকেজ, নির্দিষ্টভাবে বললে যা দিয়ে YRF স্পাই থ্রিলার তৈরি হয়, এবং সেই কারণে অতিরঞ্জিত একাধিক জিনিস মেনে নিতে হয়।  প্রথম দুই চ্যাপ্টারে গল্পের রোম্যান্টিক প্লটলাইন অনেকটা বেশি প্রাধান্য পেয়েছিল। কবীর খান পরিচালিত 'এক থা টাইগার' ছবিতে RAW ও ISI এজেন্টের মধ্যে প্রেমকাহিনি দর্শকের মন জয় করতে সাহায্য করেছিল বিপুল। 


সিক্যুয়েল ছবিতে টাইগার ও জোয়াকে এক বিবাহিত দম্পতি হিসেবে দেখানো হয়। তাঁদের এক ছেলে আছে। তাঁরা ফের এক মিশনে বের হয়। তবে 'টাইগার ৩'-এর গল্প পুরোটাই ইমরান হাশমিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত, যে পুরনো এক শত্রু এবং এখন সে প্রতিশোধের জন্য হিংস্র এবং রক্তপাতের জন্য আগ্রহী। সবকিছুর থেকে বেশি, এই ছবিটি গুপ্তচরদের জীবনের জটিলতার পাশাপাশি কর্তব্য এবং মর্যাদাকে ফুটিয়ে তুলেছে। তাঁদের জীবন, কর্তব্য এবং সম্মানের জটিলতার উপর আরও বেশি করে ফোকাস করেছে। এই পর্বে, সলমন খানের সিনেমাটি অপ্রত্যাশিতভাবে আরও স্পর্শকাতর এবং অন্তরঙ্গ হয়ে ওঠে।


'টাইগার ৩' (শ্রীধর রাঘবনের লেখা) হল একজন ভারতীয় এজেন্ট এবং প্রাক্তন পাকিস্তানি গুপ্তচরের গল্প। ভারতীয় এজেন্ট এখন বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগের মুখোমুখি, তাঁর ছেলের জীবন বিপন্ন এবং তাঁর স্ত্রী উভয়কে ও দেশকে বাঁচানোর ভার নিয়েছে। খলনায়ক আতীশ রহমানের চরিত্রে ইমরান হাশমি। সে ISI-এর প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর যে তাঁর স্ত্রীর (ঋধি ডোগরা) ও তাঁদের আসন্ন সন্তানের মর্মান্তিক খুনের বদলা নিতে চায়। কিছু পুরনো ক্ষত, যাতে প্রলেপ দেওয়া প্রয়োজন। 


ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি আলোচনা চলছে কারণ দু'জনকে একটি স্যুটকেস সুরক্ষিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আতীশ, দুর্বৃত্ত পাকিস্তানি এজেন্ট, যে তাঁর দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এবং একটি সামরিক টেকওভারের নেতৃত্ব দিতে চায়। তাঁর অশুভ লক্ষ্য অর্জনের জন্য টাইগার এবং জোয়াকে ফাঁদে ফেলে। এটি টাইগার এবং আতীশের সৈন্যদের মধ্যে একটি সংঘর্ষে পরিণত হয়, হাতে-হাতে যুদ্ধ, প্রতারণা, ক্রসফায়ার, প্লট টুইস্ট এবং রোমহর্ষক দেশপ্রেমের প্রচুর দৃশ্যে পূর্ণ।


এই গল্পে তেমন গভীরতা নেই, ফলে বেশি বলে কোনও লাভ নেই। অন্যান্য স্পাই ছবির মতোই উপাদানগুলি। ধীর গতির প্রথমার্ধের পর 'টাইগার ৩' তার নিজের গতি ধরে, এবং দর্শককে দুর্দান্ত সফরে নিয়ে চলে। অ্যাকশন দৃশ্যগুলিই মন জয় করবে, অনেকক্ষেত্রেই যা অতিনাটকীয় সংলাপকে ঢাকতে সাহায্য করে। 


ইমরান হাশমি, বহুদিন ধরেই যিনি নানা ধরনের চরিত্রে নিজেকে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন, পুনরায় নিজের স্থান ফিরে পেতে, সোজা কথায় বললে বিশেষ মনজয় করতে পারেননি। তাঁকে দেখে দর্শকেরই হাড়হিম হবে না, টাইগারের তো দূরের কথা। যদিও চিত্রনাট্য তাঁকে বিশেষ সাহায্য করেনি কিন্তু 'ব্যাড গাই' হিসেবে গড়ে তুলতে নিজেকে ইমরান নিজে যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। জোয়ার সঙ্গে তাঁর কথোপকথন ছবির সেরা দৃশ্যগুলির  অন্যতম। উল্লেখ্য, 'টাইগার' আর সলমন খানের ফিল্ম সিরিজ রইল না, অবশেষে ক্যাটরিনা কাইফ তাঁর পাশের সিংহাসনে স্বমহিমায় বসেছেন। আগের ছবিগুলির তুলনায় আরও বেশি ঝকঝকে ও বাস্তব লাগছে অভিনেত্রীকে। এমনকী একাধিক অ্যাকশন দৃশ্যে তিনি ছাপিয়ে গিয়েছেন সলমন খানকেও। 


আরও পড়ুন: AR Rahman: 'কারার ওই লৌহ কপাট'- আমূল বদলে গিয়েছে গানের সুর-ছন্দ, তীব্র সমালোচনার শিকার এ আর রহমান


পাঠানের প্রবেশের মুহূর্তটি বেশ খানিকটা প্রসারিত। এটি উত্তেজনা বাড়াতে পারে, তবে এটি প্রত্যাশার বিরুদ্ধে যায়। তার উপরে, কিছু লড়াইয়ের দৃশ্যগুলি নিপুণভাবে তৈরি করা হয়েছে, এমন কিছু মুহূর্তও রয়েছে যখন কোরিওগ্রাফিটি তাড়াহুড়ো করে তৈরি বলে মনে হয়।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial