ওয়াশিংটন: নির্বাচন মিটে গেলেও ক্ষমতার হস্তান্তর এখনও হয়নি। তার আগেই পর পর হামলায় রক্তাক্ত আমেরিকা। নতুন বছরে পা রাখার পর সবে ২৭ ঘণ্টা কেটেছে। আর তার মধ্যেই তিন-তিনটি নাশকতার ঘটনা ঘটল সেখানে। প্রথমে আপত্তি থাকলেও, পর পর নাশকতার এই ঘটনাকে নাশকতা হামলাই বলছে আমেরিকা। কিন্তু মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিন-তিনটি হামলা নেহাত কাকতালীয় না কি, এর নেপথ্যে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র, উঠছে প্রশ্ন। বছরের শুরুতেই এমন ঘটনা আমেরিকার জন্য ভাল খবর নয় বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। (Attacks on US Soil)


হোয়াইট হাউস থেকে জো বাইডেনের বিদায় এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে আর তিন সপ্তাহও বাকি নেই। তার মধ্যেই পর পর হামলায় রক্তাক্ত হল আমেরিকা। বর্ষবরণের রাতে প্রথমে নিউ ওরলেন্সে ভিড়কে পিষে দেয় একটি ট্রাক। পশ্চিম এশিয়ার কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন ISIS-এর পতাকা ঝুলছিল ঘাতক গাড়িটিতে। সেই হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই, টেসলার সাইবার ট্রাক ব্যবহার করে লাস ভেগাসে ট্রাম্পের হোটেলের বাইরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বুধবার রাতে আবার নিউ ইয়র্কের নাইটক্লাবে হামলা চালায় বন্দুকবাজ। (Donald Trump)


সবমিলিয়ে বছরের গোড়াতেই পর পর তিনটি হামলায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতও হয়েছেন অনেকে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, প্রথম দু'টি হামলাতেই সন্দেহভাজন জঙ্গি হিসেবে নাম উঠে এসেছে আমেরিকারই প্রাক্তন দুই সেনাকর্মীর। পর পর এই ঘটনাগুলির মধ্যে কোনও সংযোগ রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখছেন আমেরিকার গোয়েন্দারা। ভাড়ায় গাড়ি খাটায় যে অনলাইন সংস্থা, সেই Turo অ্যাপ থেকেই থেকে ভাড়া নেওয়া গাড়ি ব্যবহার করেই হামলাগুলি চালানো হয় বলে জানা গিয়েছে।  


লাস ভেগাসে ট্রাম্পের হোটেলের সামেন হামলায় টেসলার সাইবার ট্রাকটি আগুনে ছারখার হয়ে গিয়েছে। ওই বিস্ফোরণে একজন মারা যান। আহত হন সাতজন। গাড়ি বিস্ফোরণ আসলে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলা বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা। নিউ ওরলেন্সে হামলা চালানো শামসউদ্দিন ডিন জব্বরও Turo থেকে বৈদ্যুতিন গাড়ি ভাড়া নিয়ে ভিড়কে পিষে দেয় বলে অভিযোগ। ওই হামলায় ১৫ জন মারা যান। কিন্তু কেউই একা হামলা চালাননি, আরও কেউ এই হামলাগুলিতে জড়িত থাকতে পারেন বলে ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন লুইজিয়ানার অ্যাটর্নি জেনারেল লিজ মুরিল। 


এখনও পর্যন্ত যে তথ্য উঠে এসেছে, তা হল, লাস ভেগাসে ট্রাম্পের হোটেলের সামনে যে ব্যক্তি বিস্ফোরণ ঘটায় এবং নিউ ওরলেন্সে যে ভিড়কে পিষে দেয়, আমেরিকার সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকাকালীন একই শিবিরে ছিল তারা। সাম্প্রতিক কালে আমেরিকায় যে শ্বেতাঙ্গ রাজনীতির সূচনা ঘটেছে, আমেরিকাকে শ্রেষ্ঠত্বে নিয়ে যেতে যে MAGA (Make Ameria Great Again) স্বপ্ন ফেরি করা হয়েছে, তার সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই মুখ হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ধনকুবের ইলন মাস্ক। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে জেতানোর নেপথ্যে মাস্কেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাই পর পর এই হামাল নেহাত কাকতালীয় ঘটনা নয় বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।


MAGA শিবিরের অনেকে মনে করছেন, ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানের আগে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র রচনা করা হয়েছে। ট্রাম্পের প্রাণহানির আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। নির্বাচনী প্রচারে ইতিমধ্যেই দু'বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন ট্রাম্প। তাই আশঙ্কা অমূলক নয় বলে মনে করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, নাশকতা চালিয়ে একধরনের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের আবহ তৈরি করা হচ্ছে। ট্রাম্প এবং মাস্ককেই বার্তা দেওয়া হচ্ছে বলে মত MAGA সমর্থকদের। শপথের দিন যত এগিয়ে আসবে, এমন ঘটনা বাড়তে থাকলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে মত ট্রাম্প সমর্থক তথা রেডিও সঞ্চালক অ্যালেক্স জোন্সের।


আমেরিকায় বন্দুকবাজ হামলা বা নাশকতার ঘটনা যদিও এই প্রথম নয়, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকা সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। আমেরিকার থিঙ্কট্যাঙ্ক RAND-এর উপদেষ্টা ব্রায়ান মাইকেল জেনকিন্সের মতে, ৫ নভেম্বর থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়কাল আমেরিকার জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক। এই সময়কালের মধ্যে চরমপন্থীরা আমারিকায় মাথা তুলতে পারে এবং হিংসা ও নাশকতায় ইন্ধন জোগাতে পারে বলে মত তাঁর। পশ্চিম এশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিকেও এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তিনি। সেখানে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমেরিকা যে নীতি অবলম্বন করছে, তার বিরুদ্ধে কিছু গোষ্ঠী ফুঁসছে এবং তারাই আমেরিকাকে অশান্ত করে তুলতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্রায়ান।