আশাবুল হোসেন, উজ্জ্বল মুখোপাধ্য়ায় ও সত্য়জিৎ বৈদ্য়, কলকাতা : পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Ellection) ঘিরে রাজ্য়ে রক্তস্নাত গণতন্ত্র, তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে লাগামহীন সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার ভয়ঙ্কর অভিযোগে প্রতিদিন সরব অধীর চৌধুরীরা (Adhir Chowdhury)। আর তার মধ্য়েই সনিয়া গান্ধীর আমন্ত্রণে বিরোধী জোটের (Opposition Meet) বৈঠকে অংশ নিতে বেঙ্গালুরুতে পৌঁছে গেলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee) ও অভিষেক (Abhishek Banerjee) ! পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার পর থেকে রবিবার অবধি মৃত ৫৫ জনের মধ্য়ে, কংগ্রেসের ৮ জন রয়েছেন।
পঞ্চায়েতের ভোট সন্ত্রাসের প্রথম বলিও একজন কংগ্রেস কর্মীই। প্রতিটি ক্ষেত্রে তৃণমূলের দিকেই খুনে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস। আর এবার সেই কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের আহ্বানেই বেঙ্গালুরুতে তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতা-নেত্রী।
সূত্রের দাবি, বৈঠকের ফাঁকে এদিন দু-জনের কুশল বিনিময় হয়। পরস্পরের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন দুই সনিয়া ও মমতা। প্রস্তুতি বৈঠকের পাশাপাশি, এদিন সনিয়ার ডাকা নৈশভোজেও অংশ নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের দাবি, প্রস্তুতি বৈঠকে সকলকে বিরোধী জোটের অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচির খসড়া দেওয়া হয়। এনিয়ে, প্রাথমিক আলোচনাও হয়েছে। মঙ্গলবারের বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। বিরোধী মহাজোটের নতুন নামকরণ হবে। সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার সেই নাম ঘোষণা হতে পারে।
একই দিনে শক্তি দেখাতে, ২ হাজার দুশো কিলোমিটার দূরে দিল্লিতে ৩৮টি শরিক দলকে নিয়ে বৈঠক ডেকেছে NDA! গত কয়েক বছরে সবচেয়ে পুরনো সঙ্গী শিরোমণি অকালি দল, নীতীশ কুমারের জেডিইউ, শিবসেনার মতো শরিক NDA ছেড়ে বেরিয়ে গেছে। লোকসভা ভোটের আগে বিরোধীরা যখন একজোট হচ্ছে, তখন ৩৮টি দলকে নিয়ে বৈঠক ডেকে পাল্টা শক্তি প্রদর্শনের কৌশল নিয়েছে NDA। বিজেপি সূত্রে দাবি, মঙ্গলবার দিল্লির একটি হোটেলে NDA-র বৈঠকে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ৩৮টি দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। সূত্রের দাবি, NDA-র পুরনো সদস্য ছাড়া নতুন হিসেবে যোগ দেবে একনাথ শিণ্ডের শিবসেনা, অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন বিক্ষুব্ধ NCP গোষ্ঠী ও পি রাজভর নেতৃত্বাধীন উত্তরপ্রদেশের SBSP। ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা বলেছেন, এই জোট সেবার জন্য, ক্ষমতার জন্য নয়।
কিন্তু বাংলায় 'কুস্তি', আর দিল্লিতে 'দোস্তি'? আর কতদিন এমনটা চলবে? কংগ্রেসকে খোঁচা দিয়ে এই প্রশ্ন করছে বিজেপি। বিজেপির আইটি সেলের আহ্বায়ক অমিত মালব্য টুইট করে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট ৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে কংগ্রেস কর্মীরাও আছেন। রাহুল গাঁধী কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখোমুখি হয়ে হিংসা নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করবেন না আত্মসমর্পণ করবেন? এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে 'স্টেট স্পনসরড' রক্তপাত নিয়ে তাঁর মৌনতা কাপুরুষতা এবং নিকৃষ্টতম রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতার পরিচয় দিচ্ছে।
রাজ্য়ে যখন একের পর এক কংগ্রেস কর্মী খুন হচ্ছেন, তখন বেঙ্গালুরুতে তৃণমূলের সঙ্গে নৈশভোজ কিংবা মেগা মিটিং কি প্রদেশ কংগ্রেসের কাছেও অস্বস্তির নয়? প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। বেঙ্গালুরুর বৈঠকে থাকছে সিপিএমও, যাদেরও একাধিক নেতা-কর্মী পঞ্চায়েতের ভোট হিংসার বলি হয়েছে।
যে কংগ্রেস বারবার মোদি-মমতা সেটিংয়ের অভিযোগ করে, সেই তাদের আমন্ত্রণেই বেঙ্গালুরুতে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়! রাজনীতি বড়ই বিচিত্র। কে কখন কার দিকে, কে কার প্রকৃত মিত্র, আর কে শত্রু, তা সহজে বুঝে ওঠা দায়? কিন্তু প্রশ্ন হল, দ্বন্দ্বের মধ্য়ে দিয়ে কি বন্ধুত্ব সম্ভব?