নয়াদিল্লি: ছেলের বয়স বাড়লেও, বাড়ছে না উচ্চতা। মনে সন্দেহ নিয়েই চিকিৎকের কাছে গিয়েছিলেন। আর সেখানে যা শুনলেন, তাতে একেবারে ভেঙে পড়লেন শিশুটির মা-বাবা। ৫ বছর বয়সি ছেলের উচ্চতা কেন বাড়ছে না, জানতে গিয়েছিলেন তাঁরা। জবাবে ছেলেটির বাবাকেই দায়ী করলেন চিকিৎসকরা। বাবার বদভ্যাসের দরুণই শিশুটি বামনত্বের শিকার বলে জানালেন। (Dwarfism in Children)

চিনের চোয়াংকিং থেকে এই ঘটনা সামনে এসেছে। পাঁচ বছর বয়সি ছেলের উচ্চতা কেন বাড়ছে না, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন এক দম্পতি। সেই মতো চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হন তাঁরা। শিশুটিকে ভাল করে পর্যবেক্ষণ করে দেখেন চিকিৎসকরা। একাধিক পরীক্ষাও করানো হয়। আর তাতেই শিশুটি বামনত্বের শিকার বলে জানা যায়। তার কারণ বের করতে গিয়ে বাবাকেই কাঠগড়ায় তোলেন চিকিৎসকরা। (China News)

চিনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, শিশুটির বাবা চেইন স্মোকার। কয়েক মিনিট অন্তরই সিগারেটে সুখটান দেন তিনি, যার প্রভাব পড়েছে শিশুটির বৃদ্ধির উপর। চিকিৎসকদের দাবি, দীর্ঘ সময় ধরে বাবার সিগারেটের ধোঁয়া শিশুটির শরীরে ঢুকছে। অর্থাৎ ছোট থেকে পরোক্ষ ভাবে ধূমপান হয়ে যাচ্ছে তারও। এতে শিশুটির থাইরয়েড হরমোনের অস্বাভাবিক নিঃসরণ ঘটছে। বাবার ধূমপানের ভুক্তভোগী শিশুর মানসিক বৃদ্ধি, বৌদ্ধিক বিকাশও ব্যহত পারে বলে মত চিকিৎসকদের।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন,  শিশুটি যে বামনত্বের শিকার হচ্ছে, তা সময়েই ধরা গিয়েছে। ফলে এখন থেকে চিকিৎসা শুরু হলে, কিছুটা হলেও বিপদ ঠেকানো যাবে। সন্তানের স্বাস্থ্য়ের কথা মাথায় রেখেই বাবাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে মত তাঁদের। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, সন্তান গর্ভে থাকাকালীন সাবধানতা অবলম্বন করা হলেও, সন্তান জন্মের পর সেভাবে সতর্ক থাকেন না মা-বাবা। এতে বিপদ ঘটতে পারে। 

পরিসংখ্য়ান বলছে, ৭২ শতাংশের বেশি শিশু পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়।  বাইরে বেরোলে তো বটেই, বাড়িতে থাকাকালীনও শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে ধোঁয়া যায় শরীরে। প্রাপ্তবয়স্কের ধূমপানের জেরে শিশুদের বৃদ্ধি ব্যহত হওয়ার একাধিক উদাহরণ রয়েছে। জন্মের সময় শিশুর ওজন হালকা হওয়া, সদ্যোজাতর মৃত্যুও ঘটে সেই থেকে। 

পরোক্ষ ধূমপান থেকে নানা রোগও বাসা বাঁধে শিশুর শরীরে, যেমন, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুদের ব্রঙ্কাইটাল টিউব আপাত ভাবে সোজা হয়। ফল ধোঁয়া সরাসরি ফুসফুসের অ্যালভিওলিতে প্রবেশ করে। দীর্ঘ সময় ধরে শিশুর শরীরে যদি বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়া প্রবেশ করে, সেক্ষেত্রে যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। কম বয়সে যদি নাও হয়, পরবর্তীতে রোগ বাসা বাঁধে শরীরে। পরোক্ষ ধূমপান হয়ে যায় যাদের, পরবর্তীতে তাদের ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি তিন গুণ বেড়ে যায়। 

পরোক্ষ ধূমপান থেকে অ্যাজমাও হতে পারে শিশুদের। পাশাপাশি, শিশুর দাঁতের ক্ষতি হয়, কানের সমস্যা হয়, কানেও সমস্যা হয়। ধোঁয়া থেকে শিশুদের শরীরে নিকোটিনের মাত্রা বাড়লে পড়তে, পড়া বুঝতে সমস্যা হয় তাদের। IQ কমতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে ধোঁয়া শরীরে প্রবেশ করলে টনসিলে পলিপস তৈরি হয়, যা থেকে শ্বাসনালি সরু হয়ে যায়। টেনে টেনে শ্বাস নিতে হয় শিশুকে। রাতে নাক ডাকতে শুরু করে, যাতে তার ঘুমও ব্যহত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে পরোক্ষ ধূমপান হলে রক্ত জমে যাওয়া, প্রদাহজনিত সমস্যাও দেখা দেয় শিশুর শরীরে। শিশুর শরীরে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার দেখা দেওয়ার ঝুঁকিও থাকে।