নিউ ব্যারাকপুর: ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেল। নিউ ব্যারাকপুরের গেঞ্জি কারখানা ও ওষুধের গুদামে এখনও কোথাও কোথাও আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে দমকল। নিখোঁজ চার শ্রমিক কারখানার ভিতরে ছিলেন কি না, তা আজ ড্রোনের মাধ্যমে দেখা হবে। ইতিমধ্যেই ভেঙে ফেলা হয়েছে তিনতলা বাড়ির একাংশ। আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবেন সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা। বাড়িটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হবে কি না, তা নিয়ে তাঁদের মতামত চাওয়া হবে। বুধবার রাত ৩টে নাগাদ নিউ ব্যারাকপুরের শিল্প তালুকের ওই হোসিয়ারি কারখানায় আগুন লাগে। আগুন ছড়িয়ে পড়ে বাড়ির একাংশে ওষুধের গুদামেও।
অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বলতে যা বোঝায়, নিউ ব্যারাকপুরের কারখানায় তা ছিল না। দায়সারা ভাবে রাখা হয়েছিল কয়েকটি অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার। বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে দমকল সূত্রে উঠে এসেছে এমনই অভিযোগ। বিধিভঙ্গের জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েতকে কাঠগড়ায় তুলেছেন ডিভিশনাল ফায়ার অফিসার। পাল্টা সাফাই দিয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান।
প্রাথমিকভাবে অনুমান, আগুন লাগার সময় কারখানার রান্নাঘরে ঘুমিয়েছিলেন চার শ্রমিক। বুধবার গভীর রাতে আগুন লাগার পর চারটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। সেকথা শুনে কান্নার রোল উঠেছে নিখোঁজ শ্রমিকদের বাড়িতে। দমকল সূত্রে খবর, গেঞ্জি কারখানায় অগ্নিসুরক্ষা বিধি মানা হয়নি। ছিল না আপৎকালীন গেট। নিয়মরক্ষায় কয়েকটা অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার দায়সারা ভাবে রাখা হয়েছিল। ডিভিশনাল ফায়ার অফিসার দেবতনু বসু বলেন, এখানে অগ্নি সুরক্ষা বিধি মানা হয়নি। এমারজেন্সি গেট নেই, কিছু নেই। নিউ ব্যারাকপুরের যে বিলকান্দা শিল্পাঞ্চলে এই গেঞ্জি কারখানা, সেখানে নির্মাণের ক্ষেত্রে দূরত্ব বিধি মানা হয়নি বলেও অভিযোগ। নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শিল্পতালুকে একের পর এক কারখানা। ১২ ফুট গ্যাপ দুটো কারাখানার মধ্যেও নেই। দেড় ফুট দূরত্বেই কারখানার গায়ে কারখানা।শিল্পাঞ্চলে অগ্নিসুরক্ষায় এই উদাসীনতার জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েতকে কাঠগড়ায় তুলেছে দমকল।
কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিউ ব্যারাকপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নিখোঁজ শ্রমিক তথা চাকদার বাসিন্দা সুব্রত ঘোষের পরিবার। করোনা পরিস্থিতিতে কার্যত-লকডাউনের মধ্যে কারখানা কীভাবে চালু ছিল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, কারখানার মালিক তাদের একটি মেল করেছিলেন। তাতে বলা হয়েছিল, করোনাকালে মাস্ক, স্যানিটাইজার, গ্লাভস সহ নানা জরুরি সরঞ্জাম প্রস্তুত করতে চান তাঁরা। কারখানা চালুর অনুমতি দেওয়া হোক। প্রশাসন সূত্রে খবর, অনুমতি দেওয়া হয়নি।
গেঞ্জি কারখানা লাগোয়া গুদাম থেকে বিপুল পরিমাণ ওষুধ ও করোনা সুরক্ষার সরঞ্জাম ভস্মীভূত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, অগ্নিদগ্ধ বিল্ডিংয়ে মজুত ছিল প্রচুর ভিটামিন ও জিঙ্ক ট্যাবলেট। মজুত করা হয়েছিল বিপুল পরিমাণ স্যানিটাইজার, লিক্যুইড অ্যান্টিসেপ্টিক, পিপিই কিট, অক্সিমিটার ও ছোট অক্সিজেন ক্যান। পুলিশ সূত্রে দাবি, নিউ ব্যারাকপুরের গুদাম থেকে এই সব সরঞ্জাম রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি বিহার, ওড়িশা, অসম, ত্রিপুরায় পাঠানো হত।