নয়াদিল্লি: নয় নয় করে দু'দশক ধরে যাঁরা ভোট দিয়ে আসছেন, আজ কেন তাঁদের বৈধতা নিয়ে প্রমাণ হবে, প্রশ্ন গোড়া থেকেই। বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটারতালিকা সংশোধন করা নিয়ে শুরু থেকেই তাই প্রশ্নের মুখে নির্বাচন কমিশন। এবার সুপ্রিম কোর্টেও সেই নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ল তারা। বিশেষ করে, ভোটারদের বৈধতা প্রমাণে কেন আধার কার্ড এবং কমিশনেরই দেওয়া ভোটার তালিকা গ্রাহ্য হবে না, প্রশ্ন তোলে শীর্ষ আদালত। এতে কমিশন জানায়, আধার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নয়। আর তাতেই কমিশনকে এক্তিয়ার স্মরণ করিয়ে দিল আদালত। (Bihar Voter List Row)
বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের মুখে হঠাৎ ভোটারতালিকা সংশোধন নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন উঠছে। সেই নিয়ে মামলা জমা পড়ে আদালতে। বিজেপি-কে সুবিধা করে দিতে, বিহারকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-কে জেতাতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। বৃহস্পতিবার সেই নিয়ে আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়ে কমিশন। নির্বাচনের মুখে কেন ভোটারতালিকা সংশোধন করা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে যেমন। তেমন আধার কার্ডও উঠে আসে আলোচনায়। (Aadhar Card and Citizenship)
বিহারে ভোটারতালিকা সংশোধন করতে গিয়ে কমিশন জানিয়েছে, ২০০৩ সাল থেকে তালিকায় নাম থাকলেই কেউ বৈধ ভোটার বলে গণ্য হবেন না, মা-বাবার জন্মের শংসাপত্র থেকে মোট ১১টি নথি জমা দিয়ে বৈধতা প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু সেই প্রমাণপত্রের তালিকায় আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড নেই কেন, প্রশ্ন ওঠে আদালতে। বিচারপতিরা প্রশ্ন তোলেন, সরকারি পরিচয়পত্র হিসেবে গৃহীত আধার কার্ড কেন প্রমাণপত্র নয়?
আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণ জানান, শেষ বার যখন ভোটারতালিকা সংশোধন করা হয়, তার পর থেকে ১০টি নির্বাচন হয়েছে বিহারে, পাঁচটি সর্বভারতীয় স্তরে, পাঁচটি রাজ্যস্তরে। ২০০৩ সালে বিহারের জনসংখ্যা ছিল ৪ কোটি, যা এখন ৭.৯ কোটি। বলা হচ্ছে আধার নেবে না। উল্টে যে সমস্ত প্রমাণপত্র চাওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে মা-বাবার নথিও রয়েছে, তার কোনও যৌক্তিকতা নেই। কমিশন নিজের দেওয়া ভোটার কার্ডও গৃহীত হচ্ছে না।
এতে কমিশনের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী বলেন, “আধার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নয়।” কমিশনের এই যুক্তি শুনে বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া বলেন, “নাগরিকত্ব সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের, নির্বাচন কমিশনের নয়।” এতে কমিশনের আইনজীবী জানান, অনুচ্ছেদ ৩২৬ ধারায় কমিশনেরও ক্ষমতা আছে। কিন্তু বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “নাগরিক নন এমন কেউ ভোটারতালিকায় রয়েছেন কি না, তা দেখার মধ্যে কোনও অন্যায় নেই। কিন্তু প্রস্তাবিত নির্বাচনের কয়েক মাস আগে তালিকা সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিলেন। এতদিন যিনি ভোট দিয়ে এলেন, তাঁর আর ভোটাধিকার থাকবে না।”
নিজেদের সমর্থনে কমিশন জানায়, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২৬ অনুযায়ী, ভোটাধিকারের ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব যাচাই জরুরি। তাতে আদালত বলে, "নাগরিকত্ব যাচাই তরতে হলে আরও আগে সংশোধনের কাজ শুরু করতে হতো। অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।" এখন থেকে এব্যাপারে আদালেতর হস্তক্ষেপের বিরোধিতাও করা হয় এদিন। তবে আদালত জানিয়ে দেয়, আগে ভোটারতালিকা সংশোধন করে ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করলে কোনও আদালতই হস্তক্ষেপ করত না।
বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে ভোটার তালিকা সংশোধনে উদ্যোগী হয়েছে কমিশন। সেই নিয়ে একযোগে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। বিজেপি-কে সুবিধা করে দিতেই কমিশন বিরোধী শিবিরের ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দিতে উদ্যোগী হয়েছে বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, বিহার দিয়ে শুরু হলেও, আসলে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে জেতাতেই ভোটারতালিকা সংশোধনের সিদ্ধান্ত বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে দলের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। মহুয়া নিজেও আদালতে মামলা করেছেন।