নয়াদিল্লি: লকডাউনের সময় কাজ হারিয়ে বাড়ি ফেরার পথে কতজন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে কোনও তথ্য নেই বলে সোমবার সংসদে জানিয়েছিল কেন্দ্র। তার দিন পাঁচেকের মধ্যেই এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিল সরকার। করোনা-কালে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে বাড়ি ফিরতে গিয়ে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৭ জন পরিযায়ী শ্রমিক মারা গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী পীযুষ গয়াল।


পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু-পরিসংখ্যান বলতে না পারায় বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়েছিল মোদি সরকার। কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী ট্যুইট করেছিলেন, ‘মোদি সরকার জানেই না, লকডাউনে কত জন পরিযায়ী শ্রমিক প্রাণ গিয়েছে, কতজন চাকরি খুইয়েছেন।’ এ দিনও রাজ্যসভায় বিরোধী-তোপের মুখে পড়ে কেন্দ্র। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের এক প্রশ্নের উত্তরে রেলমন্ত্রী লকডাউন চলাকালীন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃ্ত্যু নিয়ে পরিসংখ্যান জানান। তিনি বলেন, ‘রাজ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে বাড়ি ফিরতি গিয়ে ৯৭ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।’

ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৭৪ ধারায় রাজ্য পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে বলেও মন্ত্রী জানিয়েছেন। রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ৯৭ জনের মধ্যে ৮৭টি দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। এই ৮৭ জনের মধ্যে ৫১জনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদরোগ বা হৃদযন্ত্রজনিত সমস্যা, মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ, ফুসফুস বা যকৃতে ক্রনিক সংক্রমণ অথবা আগে থেকে কোনও অসুখ থাকার ফলে এদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে।

মনে করা হচ্ছে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে এই তথ্য তুলে ধরল কেন্দ্র। শুধু পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু সংক্রান্ত পরিসংখ্যানই নয়, করোনার জেরে হওয়া লকডাউনের ফলে কতজন পরিযায়ী শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন সে সংক্রান্ত তথ্য কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রকের কাছে ছিল না।

কিন্তু বাড়ি ফেরার পথে ক্লান্ত শ্রমিকদের রেললাইনের উপরে ঘুমিয়ে পড়া, বা মৃত মায়ের কাপড় ধরে টেনে বার বার তাকে জাগিয়ে তোলার মতো ক্ষত এখনও টাটকা অনেকের মনে। সেখানে সরকারের এই ’উদাসীন্য‘-কে বিরোধীরা আগামীদিনে হাতিয়ার করবে। পরিসংখ্যান দিয়ে মোদী সরকার তাই সেই ক্ষোভ কিছুটা প্রশমনের চেষ্টা করল বলেই মনে করছে নানা মহল।