নয়াদিল্লি: রাজ্যপাট নেই,  কিন্তু, রাজনীতি আছে। আর আছে, মধ্যপ্রদেশের গ্বালিয়রের জয় বিলাস মহল। সিন্ধিয়া রাজ পরিবারের শৌর্যের প্রতীক। যার পরতে পরতে জড়িয়ে আছে ইতিহাস। ১২ লক্ষ ৪০ হাজার ৭৭১ বর্গ ফিট এলাকা জুড়ে সিন্ধিয়াদের জয়বিলাস মহল। ১৮৭৪ সালে গ্বালিয়রে তৈরি হয় এই কেল্লা। সেই সময় কেল্লার আনুমানিক মূল্য নির্ধারিত হয়েছিল ১ কোটি টাকা। এখনকার বাজারমূল্য প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।


১৪৬ বছর আগে ইউরোপীয় স্থাপত্যবিদদের সহায়তায় তৈরি হয়েছিল জয় বিলাস মহল। গ্বালিয়রের ঐতিহ্যশালী এই কেল্লার অন্তর্সজ্জা নজরকাড়া। শুরুতেই কেল্লার দরবার হলে দু’টি বেলজিয়াম কাচের তৈরি ঝাড়বাতি লাগানো আছে। যার ওজন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিলো।

বলা হয়, এত ভারী ঝাড়বাতি ঝোলানোর আগে, দরবার হলের ছাদের শক্তি পরীক্ষার জন্য আনা হয়েছিল হাতি। এখনও সেই ঝাড়বাতি আছে। আর আছে সিলিংয়ের সোনার নকশা। কিংবদন্তী আছে, জয় বিলাস মহলকে ঢেলে সাজাতে বিদেশ থেকে ২ জন বিশেষজ্ঞকে নিয়ে আসে সিন্ধিয়া পরিবার। জয় বিলাস মহলে ৪০০টি ঘর আছে। এর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় কোণা মহল বা ডাইনিং হল। সেখানে অতিথিদের খাবার পরিবেশন করার জন্য আছে রূপোর খেলনা ট্রেন।

গ্বালিয়রের জয় বিলাস মহলের একাংশে তৈরি হয়েছে মিউজিয়াম। যা মধ্যপ্রদেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। কেল্লার একাংশে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। এমনিতে ধোপদুরস্ত পাঞ্জাবিতেই স্বচ্ছন্দ্য জ্যোতিরাদিত্য। কিন্তু রাজবাড়িতে থাকাকালীন, পুজোর সময় সেই জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকেই দেখা যায় অন্য অবতারে।

৪৯ বছরের জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার সম্পত্তির মধ্যে ৩ কোটি টাকার রূপোর বাসন আছে। ফসলী জমি আছে প্রায় ১৮১ কোটি টাকার। ১২ কোটি টাকার সোনা আছে সিন্ধিয়া পরিবারের।

১৯৭১ সালে মুম্বইয়ে জন্ম হয় জ্যোতিরাদিত্যর।  বাবা মাধবরাও সিন্ধিয়া আর মা মাধবী রাজে সিন্ধিয়া-র ছেলে জ্যোতিরাদিত্য পড়াশোনা করেন দেহরাদুনের দুন স্কুলে।  এরপর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক। ২০০১-এ স্ট্যানফোর্ড গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ বিজনেস ম্যানেজমেন্ট থেকে এমবিএ ডিগ্রি পান জ্যোতিরাদিত্য। ওই বছরই মাধবরাও সিন্ধিয়ার মৃত্যু হয় এবং সিন্ধিয়া রাজ পরিবারের উত্তরসূরি হিসেবে জ্যোতিরাদিত্য-র ভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ। কংগ্রেসের সাংসদ, তারপর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সুর কাটে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে। নিজের গড় গুণাতেই পরাজিত হন জ্যোতিরাদিত্য। আর ২০২০-তে এসে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন তিনি।

কংগ্রেসের কটাক্ষ, জ্যোতিরাদিত্য দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। কোনও কোনও কংগ্রেস নেতার এও অভিযোগ, ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের সময় সিন্ধিয়া পরিবার, ইংরেজদের পক্ষ নিয়ে, ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈকে সাহায্য করেনি।