জয়পুর: ২ বছর আগের শোরগোল ফেলা গণপিটুনিতে পেহলু খানকে হত্যার অভিযোগ সংক্রান্ত মামলা থেকে ৬ অভিযুক্তকেই রেহাই দিল আলোয়ারের এক আদালত। অতিরিক্ত বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সকলকেই বেনিফিট অব ডাউট অর্থাত সন্দেহের অবকাশের সুযোগে অব্যাহতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মামলার এক আইনজীবী।
২০১৭-র ১ এপ্রিল আলোয়ারের বেহরোরে বাজার থেকে কেনা গরু নিয়ে যাওয়ার সময় মারমুখী জনতার হাতে পেহলু, তাঁর দুই ছেলে ও আরও কয়েকজন আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। বেধড়ক মারে জখম, দুগ্ধজাত সামগ্রীর ব্যবসায়ী ৫৫ বছরের পেহলু ৩ এপ্রিল মারা যান। এ ঘটনায় প্রবল ক্ষোভের সঞ্চার হয়। স্বঘোষিত গোরক্ষকদের ‘বাড়াবাড়ি’ নিয়ে সরব হয় বিভিন্ন মহল।
অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি যোগেন্দ্র খাতানা সাংবাদিকদের বলেন, আদালত ৬ অভিযুক্তের সবাইকেই সন্দেহ, সংশয়ের কারণে গণপিটুনির অভিযোগ থেকে খালাস করে দিয়েছে। আমরা আদালতের আদেশের কপি পাইনি। সেটি খতিয়ে দেখার, উচ্চতর আদালতের আবেদন করার জন্য হাতে পাওয়ার অপেক্ষা করছি।
৬ অভিযুক্তের মারধর করার ছবি সেলফোনের ক্যামেরায় ধরা থাকলেও আলোয়ারের নিম্ন আদালত সেই ভিডিও গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছিল। যদিও সেই ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখেই পুলিশ কয়েকজন অভিযুক্তকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তবে পেহলু পুলিশকে দেওয়া প্রাথমিক বক্তব্যে অভিযুক্তদের নাম না করায় সন্দেহের অবকাশ থেকে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন তাদের আইনজীবী হুকুম চাঁদ শর্মা। আদালতের আরও পর্যবেক্ষণ, কী করে পেহলুর মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী মত রয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আঘাত থেকেই মৃত্যু হয়েছে বলে বলা হলেও সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের মত, হার্ট অ্যাটাক মৃত্যুর কারণ।
ওই আইনজীবী বলেন, যিনি মোবাইলে গণপিটুনির ভিডিও করেছিলেন, তিনি আদালতে সাক্ষ্য দেননি, তাছাড়া ভিডিওটি অভিযুক্তকে কোনও সংশয় ছাড়াই শনাক্ত করতে যথেষ্ট স্পষ্ট নয়।
আজ যে ৬ জনকে নির্দোষ বলে রেহাই দেওয়া হয়েছে, তারা হল বিপিন যাদব, রবীন্দ্র কুমার, কালুরাম, দয়ানন্দ, যোগেশ কুমার, ভীম রথি। এই মামলায় তিন নাবালকের নামও উল্লেখ করেছিল পুলিশ। তারা জুভেনাইল জাস্টিস আদালতে বিচারের সম্মুখীন। তারা জামিনে বাইরে আছে। অতিরিক্ত জেলা বিচারক সরিতা স্বামীর আদালত গত ৭ অক্টোবর বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে বুধবার রায়দান ধার্য্য করেছিল।
২০১৭-য় রাজস্থান পুলিশ মারা যাওয়ার আগে পেহলুর দেওয়া দ্বিতীয় বিবৃতিতে উল্লিখিত ৬ জনকে ক্লিনচিট দিয়েছিল। এতে হইচই হয়। ফের তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।
রাজস্থানের তত্কালীন বসুন্ধরা রাজের বিজেপি সরকার প্রবল সমালোচিত হয় মুসলিমরা গোরক্ষকদের হামলার টার্গেট হচ্ছেন, এই অভিযোগ ঘিরে। জমানা বদলের পর রাজস্থানের বর্তমান কংগ্রেস সরকার গণপিটুনি ঠেকাতে সম্প্রতি একটি বিল পেশ করেছে রাজ্য বিধানসভায়।