কলকাতা: শো শো শব্দ। বিকট বিকট আওয়াজ। চোখের সামনে ঘূর্ণির মতো বৃষ্টির উথালপাতাল। আকাশে নীলের ছিটেফোঁটাও নেই। একেবারে অমানিশায় ঢাকা। অন্ধকারে ঢেকে গিয়েছে দিগন্তও। রাস্তার শেষ কোথায়, চেনা দায়!  প্রকৃতি যে এত প্রতিকুল, অচেনা, রণংদেহী, বিধ্বংসী হতে পারে তা ২০ মে, বুধবারের দুপুরটা না দেখলে বোঝাই যেত না। বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দেওয়া একটা দিন। দুপুর, বিকেল, রাত কাটিয়ে মধ্যরাতে যখন দুর্যোগ কাটল তখন ‘সব শেষ’। তছনছ হয়ে গিয়েছে গোটা রাজ্য। একের পর এক গাছ তার চেনা ঠিকানা থেকে সমূলে উৎপাটিত হয়েছে। ঠিকানা বদলেছে রাজপথের ল্যাম্পপোস্ট গুলোরও। আর তার সঙ্গে একে একে বাড়ি ছাড়া হয়েছে কাক, বক, চড়ুই, চিল, প্যাঁচা, বসন্তবৌরি।



(ছবি- শুভ্রজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়)

সরকারি হিসেব অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৮৬ নাগরিকের। কলকাতা থেকেই মৃতের সংখ্যা ১৯। শহরেরর রাস্তায় একের পর এক মাথা নুইয়ে পড়ে আছে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, কদম, শিমুল, পলাশ। উত্তর থেকে দক্ষিণ ছবিটা একই। সরকারি খতিয়ান অনুযায়ী কলকাতায়ই কেবল ধ্বংস হয়েছে ৫ হাজারের ওপরে গাছ। এরই মধ্যে বেঁচে গিয়েছে কিছু অবলা প্রাণ। আহত হয়েও ওরা বেঁচে আছে। এই সব অবলা জীবনের খোঁজেই দিনরাত এক করে ফেলেছে হিউম্যান অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট এলায়েন্স লিগ (হিল)।



(ছবি- ফেসবুক)


বন দফতরের সঙ্গে সহযোগিতায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বক, চিল, বসন্ত বৌরী উদ্ধার করছে হিলের এগারো, বারো জন স্বেচ্ছাসেবী। সংগঠনের তরফে শুভ্রজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় এবিপি আনন্দ কে জানান, “গোটা রাজ্যে থেকেই একাধিক পাখিকে আমারা উদ্ধার করতে পেরেছি। তবে হাওড়া, হুগলির বেশিরভাগ জায়গা বিদ্যুৎহীন হওয়ায় সেখান থেকে তুলনায় কম ফোন পাচ্ছি। এখনও পর্যন্ত ৪০-৫০টি বক, ৪-৫টি চিল, কিছু প্যাঁচা আর বসন্তবৌরিকে আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাখিগুলোকে বাঁচাতে পারছি না। একেবারে ‘স্ম্যাশড’ অবস্থায় পেয়েছি। চোখে দেখা যায় না। এরপরও উদ্ধার হওয়া এক শতাংশ পাখিকে এখনও পর্যন্ত বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।”