নয়াদিল্লি: ‘ঐতিহাসিক অন্যায় শোধরাতে, প্রতিবেশী দেশগুলির সংখ্যালঘুদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ’ নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আসা হয়েছে। এমনই মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দিল্লিতে এক ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (এনসিসি)-র অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মোদি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-র বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের একহাত নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যে সব লোকজন সংবিধানের কথা বলছেন, একদিন তাঁরাই তা আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে দেশভাগের সময়ের অন্যায়ের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, তখন 'একখণ্ড কাগজে লাইন টেনে দেওয়া হয়েছিল'।
সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'সরকার কয়েক দশকের পুরানো সমস্যার সমাধান করছে। আর সরকারের এই সব সিদ্ধান্তকে যারা রাজনৈতিক রঙ দিচ্ছে, তাদের আসল চেহারা দেশবাসী দেখে নিয়েছে। মোদি বলেছেন, দেশ সবই দেখছে। নীরব রয়েছে, কিন্তু সব কিছুই বুঝতে পারছে'।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'নেহরু-লিয়াকত চুক্তি সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার কথা বলা হয়েছিল। আমরা তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে, ভারত সংকটের সময়ে তাদের সাহায্য করবে। মহাত্মা গাঁধীরও এমনই ইচ্ছা ছিল। ভারত যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পূরণ করতে সিএএ নিয়ে আসা হয়েছে'।
বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি করাই কি লক্ষ্য, এই প্রশ্ন তুলে মোদি বলেন, 'কিছু নেতা দলিতদের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার অভিনয় করছেন। এরাঁই কিন্তু সেই সব মানুষ, যাঁদের পাকিস্তানে দলিতদের ওপর অত্যাচার চোখে পড়ে না। এটা তাঁরা দেখতে পান না কেন?'
প্রধানমন্ত্রী এই প্রসঙ্গে পাক সেনাবাহিনীর বিজ্ঞাপণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পাক বাহিনীর ওই বিজ্ঞাপণে সাফাই কর্মী হিসেবে চাকরির জন্য শুধুমাত্র অ-মুসলিমদের কাছ থেকেই আবেদন চাওয়া হয়েছে। এরমাধ্যমেই বোঝা যায়, সেদেশে সংখ্যালঘুরা কী ধরনের নিগ্রহের শিকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিরোধী নেতারা গুজব ছড়াচ্ছেন যে, সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলির ফলে সারা তাঁর খ্যাতি ক্ষুন্ন হয়েছে। তিনি বলেছেন, ওই নেতাদের মনে রাখা উচিত আমি আমার খ্যাতির জন্য কাজ করতে জন্মাইনি। আমি ভারতের মর্যাদার জন্য কাজ করি। তাঁরা এই পরিবর্তিত ভারতকে বুঝতে অক্ষম'।
জম্মু ও কাশ্মীরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে উপত্যকার সমস্যা রয়ে গিয়েছে এবং কিছু পরিবার ও রাজনৈতিক দল ওই অঞ্চলের ইস্যুগুলি বাঁচিয়ে রেখেছিল এবং এরফলে সেখানে সন্ত্রাসবাদ মাথা চাড়া দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, জম্মু ও কাশ্মীর এখন শান্তিপূর্ণ। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, সরকার দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষার শিকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আকাঙ্খা পূরণেও সক্ষম হয়েছে। বোড়ো চুক্তিকে ঐতিহাসিক হিসেবে অভিহিত করেছেন মোদি।
নাম না করে পাকিস্তানকে নিশানা করে তিনি বলেন, 'আমরা জানি আমাদের প্রতিবেশী দেশ তিনবার যুদ্ধে হেরেছে। তাদের পর্যুদস্ত করতে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর ১০-১২ দিনের বেশি সময় লাগবে না। কিন্তু তারা কয়েক দশক ধরে ভারতের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ ও জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে'।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগের সরকারগুলি এই বিষয়টিকে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা ধরে নিয়ে কাজ করেছিল। কেন্দ্রের পূর্বতন সরকারগুলির নিষ্ক্রিয়তাকে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন সেনা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলত, তাদের সে কথায় সাড়া দেওয়া হত না।