কলকাতা: চিঠির পর চিঠি। পরপর দু’দিন। কখনও তথ্য চেয়ে, আবার কখনও কড়া পর্যবেক্ষণ করে মুখ্যসচিবকে চার-চারটে চিঠি দিয়েছে কলকাতায় আসা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল।
শনিবার রাজ্য সরকারের সাহায্যে শুক্রবার হাওড়া ও উলুবেড়িয়া পরিদর্শনের বিষয়েও কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক দল বেশ কিছু প্রশ্ন-সহ তাঁদের পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করে চিঠি দেয় মুখ্যসচিবকে। পর্যবেক্ষকদলের প্রধান অপূর্ব চন্দ্রের লেখা এই চিঠির শেষাংশে রাজ্য সরকারের কাছে দিল্লির নিজামুদ্দিন ফেরত ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষা, চিহ্নিতকরণ এবং কোয়ারেন্টিনের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। দু’পাতার চিঠিতে পর্যবেক্ষক দল হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে পরিদর্শনের পর বেশ কিছু বিষয়ে অসংলগ্নতার কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন, ডুমুরজলার কোয়ারেন্টিনে সাতদিন থাকার পর কেন নমুনা পরীক্ষা ? কেন বাজেয়াপ্ত চিকিৎসাধীনদের মোবাইল, -তোলা হয়েছে প্রশ্ন।
ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে ১১৮ শয্যার ওই কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রে ৮০ জন রয়েছেন। সাতদিন থাকার পর তাঁদের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। তারপর ২-৩ দিনে রিপোর্ট আসছে।
তাছাড়া রাজ্য সরকার আবাসিকদের মোবাইল ফোন নিয়ে নেওয়ায় তাঁদের পরিবারের যাঁরা কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাঁদের খবর কীভাবে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে উদ্বেগে আছেন আবাসিকরা। কী কারণে নিয়ে নেওয়া হচ্ছে তাঁদের মোবাইল? প্রশ্ন তুলেছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা।
ডুমুরজলা নিয়ে কিছু বিষয় উল্লেখ করলেও পর্যবেক্ষকদল কিন্তু উলুবেড়িয়ার সঞ্জীবন হাসপাতাল ও সালকিয়া কনটেনমেন্ট জোন পরিদর্শন করে চিঠিতে তাঁদের সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সঞ্জীবন হাসপাতালে পেশাদারি কায়দায় নিয়ম বিধি মেনে ৭০ জনের চিকিৎসা চলছে বলে চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে। পাশাপাশি, শুক্রবার সন্ধ্যায় হাওড়ার কনটেনমেন্ট জোন সালকিয়ার চারিদিকে ঘুরে পর্যবেক্ষক দলের প্রতিক্রিয়া, কঠোরভাবে লক ডাউন কার্যকর করা হয়েছে।


হাওড়া নিয়ে কিছুটা সন্তোষ প্রকাশ করলেও অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে মুখ্যসচিবকে চিঠি দেয় উত্তরবঙ্গে আসা অপর কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব বিনীত জোশী লিখেছেন,

· জলপাইগুড়ির ডিভিশনাল কমিশনার, দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক এবং মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছ থেকে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে, তা এখনও মেলেনি।

· পাশাপাশি শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে চাওয়া হলেও, তিনি এখনও সময় দেননি।

প্রশাসনের কাছ থেকে কী কী তথ্য চাওয়া হয়েছে, তাও এদিন বিস্তারিতভাবে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে,

· জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং ও কালিম্পং-এই তিন জেলায় কতজন করোনা আক্রান্ত?

· ১ মার্চ থেকে মোট কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে? তাঁদের মৃত্যুর কারণ কী?

· ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কোভিড-19 সেন্টারগুলোতে ইনফ্লুয়েঞ্জা লাইক ইলনেস বা ILI ও সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটেরি ইলনেস বা SARI নিয়ে কত রোগী এসেছেন, তাদের কীভাবে চিকিত্‍সা করা হয়েছে? বেসরকারি হাসপাতালে এরকম রোগীর সংখ্যা কত?

· কতজন রোগীকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে করোনা পরীক্ষার জন্য রেফার করা হয়েছে? তাদের মধ্যে কতজনের পরীক্ষা হয়েছে? যদি কারও পরীক্ষা না হয়ে থাকে, তাহলে তার কারণ কী?

স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়েও একগুচ্ছ তথ্য জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। বলা হয়েছে,

· তিন জেলায় কত কোভিড হাসপাতাল আছে? তাতে বেড সংখ্যা কত? কত আইসিইউ বেড ও ভেন্টিলেটর রয়েছে? করোনা পরীক্ষার টেস্ট কিট কত রয়েছে?

· উত্তরবঙ্গে কতজন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, তারও হিসেব চাওয়া হয়েছে।

· স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই, মাস্ক ও অন্যান্য সরঞ্জাম কী পরিমাণে দেওয়া হয়েছে, এবং তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাও জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় দল।

যদিও এইসব অভিযোগ মানতে নারাজ রাজ্যের শাসক দল। কেন্দ্রীয় দল ‘বাংলা নয়, অন্য রাজ্যে যান’ বলে মন্তব্য করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।

২০ এপ্রিল, সকাল ১০টা থেকে কলকাতায় রয়েছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল।